‘রক্তকরবী’ প্রতীকী হয়ে ওঠে সাহানার কলমে
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। এই সপ্তাহে জি ফাইভের ‘রক্তকরবী’। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
সাত্যকি একজন সাইকোলজিস্ট। মেধাবী এই তরুণ পড়াশোনা শেষ করার পর একজন কাউন্সেলর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। হঠাৎই এক ঘটনায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। সাত্যকির প্রথম রোগী আত্মহত্যা করে এবং তছনছ হয়ে যায় তার ভাবনার জগৎ। হতাশায় ভেঙে পড়ে সাত্যকি। নেতিবাচক নানা ভাবনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে সে। সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে, এই পেশাতেই আর থাকবে না। ঠিক এই সময়ই সাত্যকির এক তুতো ভাই শৈবাল (ভাস্বর চ্যাটার্জি) ও শৈবালের স্ত্রী রঞ্জা (রাইমা সেন) তাকে এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য সাত্যকিকে উড়ালডাঙায় অবস্থিত তাদের পৈতৃক বাড়িতে নিয়ে যায়।
সাত্যকি এই প্রাচীন বাড়িটিতে পা রাখা মাত্রই নানা ধরনের অঘটন ঘটতে থাকে বাড়িতে এবং একে একে মারা যেতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। প্রথমে চূড়ান্ত রহস্যঘন এক পরিবেশে মারা যায় রঞ্জার স্বামী শৈবাল ও তার বাবা-মা। এখানেই শেষ নয়। এরপর রঞ্জা এখানে-ওখানে তার মৃত স্বামীকে দেখতে শুরু করে। সাত্যকি কী করবে ? এই পরিস্থিতি থেকে পালাবে না মোকাবিলা করবে সবকিছুর ? রঞ্জার ভূমিকাই বা কী হবে ? শৈবাল কী সত্যিই মৃত ? সকলের অগোচরে কোন অপরাধ দানা বাঁধে ? রহস্যের উৎস কোথায়, বর্তমান না অতীতে ? এমনই নানা প্রশ্ন ও টানটান রহস্যে ঘেরা কাহিনি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েব সিরিজ ‘রক্তকরবী’ শুরু হয়েছে জি ফাইভে।
গল্পসুত্র জানার আগে পর্যন্ত সকলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’-র ওয়েবকরণ ঘটছে কিনা, এমন এক ধন্দে ছিল। এখন অবশ্য সকলেই জানেন, পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের নির্দেশনায় স্ট্রিমিং হচ্ছে যে ‘রক্তকরবী’, নামের মিল সেখানে নিছকই কাকতালীয়। এই ‘রক্তকরবী’ আজকের গল্প–যেখানে প্রাপ্তমনস্ক, পরিণত বয়সী দর্শক উপযোগী, শিরদাঁড়া হিম করে দেওয়া, একাধারে হিমশীতল রহস্য ও টানটান উত্তেজনাপূর্ণ পর্বগুলি বিন্যস্ত। যৌনশোষণ থেকে অর্থনৈতিক শ্রেণিভেদ হিসেবে মানুষকে অবজ্ঞা, অবহেলা–সবটাই উঠে আসে এখানে গল্পের সূত্র ধরে।
ইতিমধ্যেই দর্শক ও সমালোচকদের মধ্যে প্রশংসিত এই সিরিজ। এর সম্পর্কে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, এখানে রহস্য সৃষ্টির জন্য পরিচালক কোনও সস্তা গিমিক প্রয়োগ করেননি। পুরো বিষয়টাই এসেছে গল্পের স্বাভাবিক গতিতে। কাহিনির বিন্যাস থেকে নির্মাণ কৌশল সবটাই নিপুণ হাতে সামলানোর ফলে দর্শক আপনা থেকেই সম্পৃক্ত হয়েছে ‘রক্তকরবী’ রহস্যজালে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাহায্য করেছে সাহানা দত্তের লেখনী। তিনিই এই সিরিজের লেখক ও প্রযোজক। অপর প্রযোজক রোহিত সামন্ত।
প্রসঙ্গত, সাহানার কলমে ‘রক্তকরবী’ ফুল সিরিজের পটভূমিতে প্রতীকী হয়ে ওঠে, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিক্রম, ভাস্বর, রাইমা ছাড়াও অভিনয় করেছেন শান্তিলাল মুখার্জি, তুলিকা বসু, অঙ্গনা রায়, লাবণী সরকার, রুকমা রায়, কিঞ্জল নন্দ ও হরিদাস চ্যাটার্জি প্রমুখ। দুর্দান্ত অভিনয় এই সিরিজের সম্পদ। সকলেই চরিত্রের মাপে যথাযথ। বিশেষত, রাইমা যে শুধু দর্শনেই নজর কেড়ে নেন, তা নয়। পর্দায় ব্যক্তিত্বেও অসামান্য হয়ে ওঠেন রাইমা। ‘রক্তকরবী’ কাহিনি রবি ঠাকুরের না হলেও সিরিজে বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুচারু প্রয়োগ ভালো লাগে।