রসে রসনায় – পর্ব ০২
এই কলমে থাকছে দুটি করে রেসিপি। একটি রোজকার তালিকায় থাকা খাবারের পদ। আর একটি থাকছে উৎসব-পার্বণকে ভেবে। প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি পনের দিন অন্তর। জানাচ্ছেন রিংকু মিত্র।
◾নারকেল দুধ বা সাদা তিল বাটা দিয়ে নিরামিষ সব্জি
তেমনভাবে রান্না করলে নিরামিষ পদ যে অবলীলায় নাক কেটে দিতে পারে মাছ-মাংসের, সেকথা চরম আমিষভোজীরাও স্বীকার করেন। আর বাঙালি হেঁসেলে তো এমন পদের ছড়াছড়ি। টাটকা শাকসবজি ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে কেমন করে একটি নিরামিষ পদকে স্বতন্ত্র করে তোলা যায়, আজ তারই তত্ত্বতালাশ। এখানে আমি ৩ জনের উপযোগী রেসিপি জানালাম।
উপকরণ
- পটল ৩/৪টে
- আলু বড় ১টা
- কাঁচকলা ১টা
- একটি বড় পেঁপের চারভাগের একভাগ
- বড় টমেটো ১টা
- মাঝারি রাঙা আলু ১টা
- বরবটি ১০০ গ্রাম
- আদা ১ ইঞ্চি, বেটে নিন
- সজনে ডাঁটা ২/৩টে
- মটর ডাল ৫০ গ্রাম, ভিজিয়ে বেটে নিতে হবে
- নারকেলের দুধ ১ কাপ বা সাদা তিল ৫০ গ্রাম, তিলটা বেটে নিতে হবে
- মেথি আধ চা চামচ
- সর্ষে আধ চা চামচ
- রাঁধুনি গুঁড়ো আধ চা চামচ
- সর্ষের তেল ৩ টেবল চামচ
- অল্প হলুদ, স্বাদমতো নুন-চিনি
- ঘি ১ টেবল চামচ
প্রণালী
প্রথমে মটর ডাল বাটা দিয়ে ছোট ছোট বড়া ভেজে বাটিতে তুলে রাখুন।
সব সব্জি ধুয়ে মাঝারি মাপে কেটে নিন।
কড়াতে তেল দিয়ে, তা হালকা গরম হলে, সর্ষে আর মেথি ফোড়ন দিন।
এরপর ওই তেলেই আদা বাটা দিয়ে, অল্প কষিয়ে, তার মধ্যে সব্জিগুলো দিয়ে অল্প নুন-হলুদ মিশিয়ে একটু নাড়াচাড়া করুন।
তারপর সামান্য জল দিয়ে ঢেকে দিন।
সবজি সেদ্ধ হয়ে এলে নারকেল দুধ বা সাদা তিল-বাটা জল দিয়ে সামান্য পাতলা করে, সবজির মধ্যে ঢেলে দিন। স্বাদমতো নুন-মিষ্টি দিন।
এরপর ভাজা বড়াটা মিশিয়ে একটু ফুটতে দিন।
শেষে এক চামচ ঘি দিয়ে গ্যাস বন্ধ করুন। একটা কাঁচা লঙ্কা সবজিতে দিয়ে আরও ১০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। নামাবার আগে রাঁধুনি গুঁড়োটা ওপরে ছড়িয়ে দিন।
গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
◾খাসির চর্বি দিয়ে এঁচোড়
এঁচোড় দিয়ে নিরামিষ পদে নানা ধরনের বৈচিত্র্য আনা যায়, নিশ্চয়ই জানেন আপনারা। আবার আমিষের ক্ষেত্রে এঁচোড়-চিংড়িও অতি চেনা এক সুস্বাদু পদ। আজ আমি আপনাদের জানাব, খাসির চর্বি দিয়ে এঁচোড় রান্নার এক চমকপ্রদ রেসিপি, যার স্বাদ একবার খেলে ভুলবেন না গ্যারান্টি। উৎসবে-পার্বণে, অতিথি আপ্যায়নে এমন পদই তো চাই ! এখানে আমি ২/৩ জনের উপযোগী হিসেব জানালাম।
উপকরণ
- এঁচোড় ২৫০ গ্রাম
- আলু ১টা বড়
- খাসির চর্বি ১৫০ গ্রাম, ছোট ছোট টুকরো করে কেটে রাখুন
- একটা বড় পেঁয়াজ কুচিয়ে রাখুন, যেমন আমরা মাংসের জন্য কাটি
- রসুন আর পাকা (লাল) লঙ্কাবাটা ১ টেবল চামচ–রসুন আর লঙ্কা একসঙ্গে বা আলাদা আলাদাও বেটে দিতে পারেন
- আদা বাটা ১ টেবল চামচ
- বড় টমেটো কুচনো ১টা
- জিরে আর ধনে গুঁড়ো আধ চা চামচ করে
- গোটা শুকনো লঙ্কা ২টো
- গোটা গরম মশলা সামান্য
- তেজপাতা ২টো
- নুন-মিষ্টি আন্দাজমতো
- ঘি ১ টেবল চামচ
- সর্ষের তেল ৩ টেবল চামচ
প্রণালী
হাতে সর্ষের তেল মেখে একটু বড় টুকরো করে এঁচোড় কেটে নিন। আলুও সেই মাপেই কাটুন।
জলে একটু নুন-হলুদ দিয়ে এঁচোড়টা এমনভাবে সেদ্ধ করুন, যেন একটু শক্ত থাকে। জল ঝরিয়ে নিন।
কড়াতে তেল দিন, তেল গরম হলে, তাতে নুন, হলুদ আর অল্প লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে আলুটা লাল করে ভেজে, তুলে রাখুন।
এরপর ওই তেলেই গোটা গরম মশলা আর তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে, তাতে কুচনো পেঁয়াজ দিন। ভালো করে ভেজে নিন। এবার দিন আদাবাটা, রসুন, লঙ্কাবাটা।
ভালো করে কষিয়ে, তারমধ্যে দিয়ে দিন ছোট টুকরো করে কেটে রাখা খাসির চর্বি। আবার বেশ করে কষান।
এবার এর মধ্যে সেদ্ধ এঁচোড় দিয়ে কম আঁচে কষাতে থাকুন। দিয়ে দিন ধনে-জিরে গুঁড়ো আর টমেটো।
খুব ভালো করে কষাতে হবে এরপর, যেমন আমরা মাংস রান্নার ক্ষেত্রে করি।
এবার পরিমাণমতো ঝোল রাখতে গরম জল দিন। রান্নাতে সবসময়ই গরম জল ব্যবহার করবেন। তাতে রান্না দ্রুত হয় আর স্বাদও ভালো হয়।
এরপর নুন-চিনি স্বাদ বুঝে মিশিয়ে দিন।
হয়ে গেলে ঘি দিয়ে ঢেকে রাখুন ১০ মিনিট।
ভাত বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।