রসে রসনায় – পর্ব ০৯
এই কলমে থাকছে দুটি করে রেসিপি। প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি পনের দিন অন্তর। আজ দুটি আমিষ পদ সম্পর্কে জানিয়েছেন রিংকু মিত্র।
◾কাসন পোড়া ঝোল
আমাদের অতি চেনা রুই বা কাতলা মাছ, রান্নার গুণেই হয়ে উঠতে পারে অসামান্য স্বাদের এক-একটি পদ। আজ জানাব খুব কম সময় ও ঝামেলায় তৈরি করা যায় এমন একটি পদের রেসিপি। এটি ওপার বাংলার রেসিপি, নাম ‘কাসন পোড়া ঝোল’। সর্ষেকে ‘কাসন’ বলা হয়। তার থেকেই এই নামকরণ। আমি এখানে ৪ জনের উপযোগী রেসিপি জানালাম।
উপকরণ
- কাতলা মাছ ৪ টুকরো। এই পদটা অন্য যে কোনেও বড় মাছ দিয়ে করা যায়। ইলিশ দিয়ে তো অতি উপাদেয় হয়।
- কাঁচা লঙ্কা ২/৩টে
- কালো সর্ষে ১ চা চামচ
- শুকনো লঙ্কা ২টি
- সরষের তেল ৪ টেবল চামচ
- হলুদ ১ চা চামচ
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
- পাতিলেবুর রস ১ চা চামচ (এটা ঐচ্ছিক)।
প্রণালী
মাছ ভালো করে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখুন।
এরপর কড়াইতে সর্ষেটা একেবারে কম আঁচে সেঁকে নিন। খেয়াল রাখবেন যাতে কোনও ভাবে পুড়ে না যায়। একটু ঠাণ্ডা হলে, সরষে গুঁড়ো করে রাখুন।
এবার কড়াইতে তিন টেবল চামচ তেল দিন। তেল গরম হলে, মাছগুলো ভালো করে ভেজে তুলে নিন।
ওই তেলেই শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। তারপর পরিমানমতো জল ধীরে ধীরে ঢেলে দিন ঝোলের জন্য। জলের পরিমাণ কম হলেই ভালো। পদটা মাখামাখা হবে। খুব পাতলা ঝোল হবে না।
জল ফুটে উঠলে সেঁকে, গুঁড়ো করে রাখা সর্ষে দিয়ে দিন তাতে। ভাজা মাছগুলোও দিয়ে দিন। নুন দিন স্বাদ মতো।
এবার কাঁচা লঙ্কা আর বাকি এক চামচ তেল দিয়ে দিন ঝোলে।
ঝোল ঘন হলে নামিয়ে লেবুর রস দিন।
প্রসঙ্গত, অনেকে এই রান্নায় কালোজিরে ফোড়ন দেন। আপনিও সেটা করতে পারেন। আবার লেবুর রসটাও ঐচ্ছিক। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। অতি উপাদেয় লাগবে।
◾ দই মরিচ মুরগি
বাড়িতে আজকাল প্রায় সকলেই ফ্রিজে মুরগি স্টকে রাখেন। মুরগির মাংস সহজপাচ্য এবং রকমারি প্রণালীতে রান্না করা যায়। আজ আমি যে রেসিপিটা জানাব, সেটি একই সঙ্গে সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। ঝটপট বানিয়েও ফেলা যায়। মোটামুটি ৪ জনের হিসেবে রেসিপি জানালাম।
উপকরণ
- মুরগি ৪০০ গ্রাম
- দই ১৫০ গ্রাম
- রসুন ৫/৬ কোয়া
- পেঁয়াজ ১টা বড়
- কাঁচা লঙ্কা ১টা বড়
- ধনে গুঁড়ো ১ টেবল চামচ
- কাশ্মীরী লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ
- সাদা তেল ২ টেবল চামচ
- গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ
- কসুরি মেথি আধ চা চামচ
প্রণালী
আগের দিন রাতেই মুরগির মাংস একটু মাঝারি সাইজের পিস করে কেটে, ধুয়ে, শুকনো করে মুছে রাখুন।
দই, রসুন, কাঁচা লঙ্কা একসঙ্গে মিক্সিতে বেটে নিন। এই মিশ্রন মুরগির টুকরোগুলোতে অল্প নুন আর সামান্য সাদা তেল সহ মাখিয়ে সারারাত রেখে দিন। মিক্সির বাটি ধোয়া জলটা রেখে দেবেন।
পরের দিন, অর্থাৎ এবার মূল রান্না-পর্ব।
পেঁয়াজ কুচিয়ে রাখুন।
উনুনে কড়াই বসিয়ে বাকি তেলটা দিন। মুরগির নিজস্ব চর্বি/তেল থাকে। তাই রান্নায় অল্প তেল।
তেল গরম হলে, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন।
পেঁয়াজ একটু ভাজা হলে, ধনে গুঁড়ো আর কাশ্মীরী লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে অল্প জল দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
মশলা কষানো হলে তাতে আগের রাতের ম্যারিনেট করা মুরগির পিসগুলো দিয়ে দিন।
আঁচ কমিয়ে কষাতে থাকুন। গোলমরিচের গুঁড়ো দিন। নুন দেবেন স্বাদ মতো।
কষানো হয়ে গেলে মিক্সির বাটি ধোয়া জলটা দিয়ে দিন। ফুটে উঠলে ঝোল রাখুন, যাঁর যেমন পছন্দ। কড়াই নামিয়ে রাখুন।
এবার আর একটি কড়াই আঁচে বসিয়ে, তাতে সাদা তেল দিন এক চা চামচ। তেল গরম হলে দিন কসুরি মেথি আর একটা কাঁচা লঙ্কা।
এরপর এই ফোড়নটা মুরগির ঝোলের মধ্যে ঢেলে ঢাকা দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। দারুণ গন্ধে রসনা একেবারে জাগ্রত হয়ে উঠবে। গরম গরম পরিবেশন করুন ভাত বা রুটির সঙ্গে।