সন্ধ্যা নামে হিমের আঁচল বিছিয়ে
দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। কালিম্পং শহরের কাছেই শান্ত, নির্জন গ্রাম ‘চিবো’ নিয়ে লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
পাহাড়ে এলে একটু তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙে যায়–সম্ভবত, এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল রেখেই। কত বছর ধরে উত্তরবঙ্গে আসছি, মনে করতে পারি না। তাই কিছুটা হলেও পাহাড়ের মানুষের রুটিনের সঙ্গে অভ্যস্ত তো হবোই ! আমার পর্যটন সংক্রান্ত লেখার পাঠকবন্ধুরা অবশ্য জানেন, এখন আমি পাকাপাকি উত্তরবঙ্গবাসী। পাহাড়ে টানা না থাকলেও, বছরের অনেকটা সময়ই সেখানে কাটে। তাই এটা ভালো করেই জানা হয়ে গেছে যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে এখানকার মানুষের যাপন-প্রবাহ। ভূমিকা ছেড়ে আসল কথায় আসি। এ হলো, সেই সময়ের কথা, যখন সদ্য অবসর পেয়েছি চাকরি জীবন থেকে। দীর্ঘ দাসত্বের থেকে মুক্তি কী, সেটা যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন। তো আমি সেই মুক্তির আনন্দেই পৌঁছে গেলাম কালিম্পং জেলার ছোট্ট গ্রাম চিবো-তে। সময়টা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। গতকাল আসার পর কিছু কুয়াশা ছিল। আজ সেসব উধাও হয়ে দৃশ্যমান মুক্ত আকাশ।
ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে বাইরে আসতেই ফুলের বাহারে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ফুলের বন্ধুরা, অর্থাৎ, ভ্রমর, মৌমাছি আর প্রজাপতির দলও এসে গেল। তারপর উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে, নেচে নেচে কী তাদের ব্যস্ততা ! কেউ মধু সংগ্রহ করছে, কেউ বা শুধুই খেলা করছে। ভ্রমর আর মৌমাছির দল একটু বেশি চঞ্চল। দু’চারবার আমাকে প্রদক্ষিণ করলো তারা। ছটফটানির জন্য বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসতে পারে না। তাই কিছুক্ষণ পরেই উধাও দু’পক্ষই। তুলনায় প্রজাপতিরা শান্ত। এক একটি ফুলের ওপর বেশ অনেকটা সময় বসছে ওরা। তবে সেই বসারও একটা কায়দা আছে। প্রথমে নির্দিষ্ট ফুলটির ওপরেই অনেকক্ষণ চক্রাকারে ঘুরছে, তারপর বসছে। আর এই যে এতবড় একটা মানুষ কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও ঝুঁকে খুব কাছ থেকে ওদের দেখছে, ছবি তুলছে। তাতে এতটুকু ভয় নেই। নির্বিকারে নিজেদের প্রাত্যহিক কর্ম করে যাচ্ছে।
ব্রেকফাস্ট তৈরি হচ্ছে হোমস্টে-র কিচেনে। হোমস্টে-র নাম চিবো ইন। কর্ণধার এখানকার প্রাচীন ভট্টরাই পরিবার, পাশেই তাঁদের নিজেদের থাকার বাড়ি। অতিথিদের থাকার ঘরের সঙ্গে ওঁদের আবাসস্থল মিলে পুরোটা একটা বড় ইউনিট। হোমস্টে প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলার আগে কিছুটা কালকের গল্প। এনজেপি স্টেশনে নেমে গাড়িতে উঠে, শিলিগুড়ি শহর ছাড়িয়ে আসতে আসতেই দেখলাম, রোদ্দুর বেশ চড়ার দিকে। আকাশ তখনও পরিষ্কার। শহর পেরোতেই প্রথমে মহানন্দা রেঞ্জ। দু’দিকে জঙ্গলকে রেখে ৩১ নং জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে যাওয়া এবং তিস্তার সঙ্গে দেখা। আপাতত জল কম তার বুকে। কালিম্পং আসার পথে তিস্তা অনেকটা সঙ্গ দেয়। এবারও তার দর্শনসুধা পান করতে করতে, চড়াই-উৎরাই ধরে চলেছি। পথের ধারে ধারে প্রচুর গাছ, ছোট ছোট জনপদ, দোকানপাট। একটা সময় তিস্তা উধাও। প্রায় পৌঁছে গেছি কালিম্পং শহরে। শহরে ঢোকার একটু আগে একটা রাস্তা চলে গেছে ডানদিকে। এটাই আমাকে নিয়ে যাবে চিবো-তে।
রাস্তাটি ঘুরে ঘুরে গেছে–কাঁচা রাস্তা, তবে, মাটি কম, পাথর বেশি। চড়াই-উৎরাই না হলেও, কিছুটা উঁচু-নিচু সেই পথের দিক নির্দেশিকা দেখে, পথচলতি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে পৌঁছে গেলাম ঠিকানায়। রাস্তা থেকে খাড়া সিঁড়ি উঠে গেছে উপরে। সে যে কত উপর, তাকিয়ে মাথা ঘুরে যাওয়ার যোগাড় ! ধীরে ধীরে, মাঝে এক/দুবার দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিয়ে অবশেষে উঠি মূল বাড়িটিতে। সাহায্য করে হোমস্টে-র এক তরুণ কর্মী। ব্যাগপত্রও সে-ই নিয়ে যায়। চিবো-র এই হোমস্টে একটি দোতলা বাড়ি। আর আমি এখন যেখানে, সেটা একটা অনেকটা ছড়ানো টেরেস। অর্থাৎ এর নিচেও ঘর রয়েছে। পাহাড়ে যেমন নিয়ম, পাথুরে ধাপগুলির খাঁজে খাঁজেই ঘর বানানো হয়।
সারা দিন অফিস, সারা রাত ট্রেন জার্নি। ফলে, যথেষ্ট ক্লান্ত ছিলাম। অনেকটা বেলাও হয়েছে এর মধ্যে। থাকার নির্দিষ্ট ঘরটিতে মালপত্র রেখে, স্নান করে, ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলাম। ততক্ষণে আকাশ মেঘ-কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। রঙিন ছাতার নিচে বসে গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা বলি হোমস্টে মালিকের সঙ্গে। বাবা-ছেলে দুজনে মিলে চালান। বেশ সমৃদ্ধশালী ও শিক্ষিত একটি নেপালি পরিবার। লক্ষ্য করলাম, পাহাড়ের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে গ্রামের বিভিন্ন সমস্যা–সব ক্ষেত্রেই বেশ সুচিন্তিত মতামত পোষণ করেন ওঁরা। রান্না ও খাবার ঘরটা একধাপ নিচে। সেখান থেকে তখন চিকেন রান্নার সুঘ্রাণ ভেসে আসছে। লাঞ্চের প্রস্তুতি চলছে। প্রথম দিনটা কিছুটা আলস্যেই কাটে। মেঘ-কুয়াশার আচ্ছন্নতার মধ্যেই সন্ধ্যা নামে। ঠাণ্ডা পড়েছে জব্বর। ডিনার সেরে তাড়াতাড়ি কম্বলের আশ্রয়ে ঢুকে পড়ি। চারপাশে অপার নৈঃশব্দ। দ্রুত ঘুম নামে চোখে।
ফিরে আসি দ্বিতীয় দিনের কথায়, যেখান থেকে শুরু করেছিলাম এই বর্ণনা। ব্রেকফাস্ট হলো একটু আগেই। এখন টেরেসে বসে রোদ্দুর মেখে নেওয়া ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। এই অবকাশে আরও কিছু তথ্য জানাই। শহর কালিম্পং থেকে মাত্র ৪ কিমি দূরত্বে অবস্থিত পূর্ব হিমালয়ের এই ছোট্ট গ্রাম পাইনের ছায়ার মায়ায় বড়ই অপরূপ। রয়েছে শাল, ইউক্যালিপটাস ও আরও নানা ছোটবড় গাছ। এই সব অঞ্চলই আদতে জঙ্গল কেটে বসতি। ফলে গাছপালার প্রাচুর্য সর্বত্র। এছাড়াও কালিম্পং জেলা হলো ফুল ও অর্কিডের স্বর্গ। ছোটখাটো একটি নার্সারি আছে এঁদের নিজেদেরই। সেখানে নানা জাতের ফুল, পাতাবাহার ও অর্কিডের সমাহার মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো। কেমন সুন্দর তার রূপ, সে তো শুরুতেই বলেছি। নার্সারিতে যত্নের ছাপ স্পষ্ট। সামনে কিছুটা খোলা জায়গা। বসবার কাঠের বেঞ্চ ও চেয়ার, গোল টেবিল। একপাশে বন ফায়ারের ব্যবস্থা। সবটাই খুব অনাড়ম্বর, কিন্তু প্রকৃতির মতোই সুন্দর ও অমলিন। মন ভালো করা পরিবেশ।
চিবো-র উচ্চতা প্রায় ৪২০০ ফুট। পাহাড়ের ধাপে ধাপে জঙ্গলের মাঝে শান্ত, নির্জনতায় গড়ে উঠেছে গ্রামটি। টেরেসে বসে সেইসব দেখি। শুনলাম এখান থেকেই দারুণভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ পাওয়া যায়। তবে, আমার ভাগ্যে তেনার দর্শন সচরাচর মেলে না। চিবো-তেও অধরাই থাকলেন তিনি। একটু ঝাল, কিন্তু দুর্দান্ত নেপালি রেসিপিওয়ালা চিকেন খেলাম লাঞ্চে। সঙ্গে ডাল, আলুভাজা আর আচার। বেশ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। সোয়েটার-চাদর জড়িয়ে টেরেসে বসি। রোদের তেজ কমে। ঘরে ফেরে পাখির দল। চিবো-য় নানা জাতের পাখির বসবাস। তারাই ঝাঁক বেঁধে ফিরছে ঘরে। অনেকটা খোলা আকাশে এখন তাদেরই রাজত্ব।
এরই মধ্যে হঠাৎ চোখ চলে যায় পশ্চিম আকাশে। সেখানে তখন অস্তরাগের সুর। আকাশ লালে লাল। একটু একটু করে অস্তমিত হলেন বেলাশেষের সূর্য। চলে গেলেন পৃথিবীর অপর প্রান্তে। সন্ধ্যা নামলো চরাচর জুড়ে, হিমের আঁচল বিছিয়ে। চারপাশে কোনও শব্দ নেই পাখিদের কিচিরমিচির ছাড়া। মালিকের ছেলের বউ এসে কফি রেখে যায়। বয়স একেবারেই কম, মুখটা ভারী মিষ্টি। আসার পর থেকেই দেখছি ছুটোছুটি করে কাজ করছে সে বাড়ির আর পাঁচজনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। বউটির সঙ্গে একটু গল্প করি। তারপর ঘরে, রাত নেমেছে চিবো-য়। ডিনারে রুটি-সবজি। সেটা ঘরেই দিয়ে গেলেন ওঁরা। কারণ ততক্ষণে খোলা টেরেসের এপ্রান্ত-ওপ্রান্ত জুড়ে উত্তুরে হাওয়ার পাগলামি শুরু হয়ে গেছে। খেয়েদেয়ে কম্বল মুড়ি দিতেই ঘুম নামে চোখে।
আজ এখানে আমার তৃতীয় দিন। ফেরার পালা প্রায় ঘনিয়ে আসে। আজ ব্রেকফাস্ট করলাম টেরেসে বসেই। আমার অনুরোধে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিয়েছিলেন ওঁরা। সঙ্গে দার্জিলিং টি। আজ সকালেই আলাপ হয়েছে বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়েটির সঙ্গে। সকাল ৭টা বাজে তখন। স্নান করে, ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি। স্কুল ৯টায়। দু’ঘন্টার পথ পার হতে হবে তাকে, তাই অত সকালে বেরিয়ে পড়া। প্রতিদিন এটাই রুটিন ক্লাস সিক্সে পড়া মেয়েটির। মনে পড়ছে সেদিন বিকেলের কথা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে, ফ্রেশ হয়ে, কোনও রকমে দ্রুত খাবার খেয়েই সে তার বৌদির সাহায্যের জন্য রান্নাঘরে কাজে লেগে পড়ে। এক ছুটে কফি আর পেঁয়াজের পকোড়া বানিয়ে আনে আমার জন্য। আবার সন্ধ্যায় বইপত্র গুছিয়ে পড়তেও বসে যায়। অবাক ও মুগ্ধ হলাম। এই মেয়েটির মতোই এখানকার সব ছেলেমেয়ের জীবন। বাল্য থেকেই কঠিন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে যায় ওরা। এটা ২০১৬-র কথা। এতদিনে সে নিশ্চয়ই স্কুলের গণ্ডি পার করেছে। চিবো-র নানা স্মৃতির মধ্যে সে অবশ্য আমার কাছে ওই বালিকা রূপেই রয়ে গেছে।
আজ দুপুরে অসাধারণ এক ডিমের ঝোল খেয়েছি। একেবারে হালকা, কিন্তু কি সুস্বাদু। সঙ্গে ডাল, পাপড় , স্যালাড, আচার, রাই শাক। এঁদের আচারের ভান্ডারটি বেশ জম্পেশ। সবটাই ঘরে তৈরি। উপকরণও নিজেদের ক্ষেত ও বাগানের। বয়াম ভর্তি সেইসব আচার একটু একটু করে এই ক’দিন চেখে দেখা হলো। কি যে তার স্বাদ ! প্রশংসা করতে বৌমা তার শাশুড়ির কৃতিত্ব জানিয়ে পঞ্চমুখ হলো। ইনি একটু লাজুক গোছের। হিন্দি বলতে পারেন না। তবে, বুঝতে পারেন। বেশ লজ্জা লজ্জা মুখ করে নিজের প্রশংসা শুনলেন। জানলাম ওঁরা শাশুড়ি-বউ মিলেই রান্না থেকে এতবড় বাড়ি পরিষ্কার রাখা, সবটাই করেন।
চিবো-র মানুষরা পাহাড়ের আর সব গ্রামের মতোই পরিশ্রমী। সারাদিন হাসিমুখে ঘরে-বাইরে কাজ করেন। মূলত কৃষিই জীবিকা। চাষবাস জৈবিক পদ্ধতিতে। নিজেদের প্রয়োজনেরটুকু রেখে অনেকেই বাজারে বিক্রি করেন জমির ফসল, শাকসবজি। কয়েকটি হোমস্টে হয়েছে এখন, জীবিকার এটাও এক উপায়। পথঘাটের বিকাশ তেমন হয়নি। বর্ষায় খুবই কষ্ট। এটা গ্রামের উন্নতির সবথেকে বড় অন্তরায়। কালিম্পং কাছে, এটাই কিছুটা সুবিধা। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কষ্টেসৃষ্টে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করে এখানকার ছেলেমেয়েরা। স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থাও তথৈবচ। চিকিৎসায় জড়িবুটি ভরসা। এছাড়া গুরুতর অসুখের চিকিৎসার প্রয়োজনে কালিম্পং যান চিবো-র মানুষ। সেটাও সবার পক্ষে সম্ভব হয় না, বলাই বাহুল্য।
আজ রাত কাটলেই ফেরার পালা। ডিনারে চিকেন চাওমিন খেলাম। ওঁদেরই পরামর্শ, মুখবদলের জন্য। আমারও মনে হলো, মন্দ কি ! সামান্য গ্রেভিওয়ালা সেই চাওমিনের স্বাদ এক না ভোলা খাদ্য অভিজ্ঞতা। আজ জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। পুরো দিনটা ছিল আলোকিত। কেটেছে সূর্যের ঝকঝকে আভায়। এখন আকাশ তারা ঝলমলে। এক কোনে টুকরো চাঁদ। অনেক দূরে দূরে, পাহাড়ের কোনে কোনে এক একটি ঘরের মিটি মিটি আলো তাল মিলিয়েছে উড়ন্ত জোনাকিদের সঙ্গে। রাতে কিছুক্ষণ টেরেসে বসলাম। কালই তো চলে যেতে হবে। এই যাওয়াটা বড় বিষণ্ণ করে দেয় প্রতিবার। পাহাড় যে বড্ড মায়াময় !
সকালে উঠেই দ্রুত স্নান সেরে প্যাকিং। রেডি হয়ে একবার ফুল-পাতা, মৌমাছি আর প্রজাপতিদের সঙ্গে দেখা করি। গাছেরা হাতছানি দিয়ে ডাকে। সূর্য উঠেছে অনেকক্ষণ। নীল আকাশের নিচে ঝলমল করছে পুরো গ্রাম। ব্রেকফাস্ট টেবিলে আজ ছিল আলুপরোটা, সঙ্গে আচার তো আছেই। চেটেপুটে খেয়ে কফির কাপ নিয়ে টেরেসে বসি শেষবারের মতো। গাড়ি এসে গেছে নিচে। ড্রাইভার ওপরে উঠে আসে। পরিবারের সবাই এসে দেখা করে। প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, আবার আসবো। এই আন্তরিকতা ভোলার নয়। আবার সেই খাড়া সিঁড়ি ধরে নিচে নামা। তবে, নামাটা তত কষ্টের হয় না। গাড়ি চলতে শুরু করে। দু’পাশে গাছপালা সরে সরে যায়। বাচ্চারা স্কুলের পথে। হাত নাড়লে হাসিমুখে প্রত্যুত্তর দেয় ওরা। পিঠে বোঝা নিয়ে গ্রামবাসীদের কেউ নেই। কী কষ্টের চলা ! তবু হাসিমুখে অভিবাদন জানায়। অনেকটা ভালো লাগা পাহাড় এভাবেই ভরে দেয় ঝুলি। প্রত্যেকবার।
কিছু জরুরি তথ্য শেষবেলায়। হোমস্টে-র দুটি তল মিলে যা ঘর, তাতে ১৫/২০ জনের দল অনায়াসে থাকতে পারে। আসেও। নেচার স্টাডি ও ট্রেকিং-এর সুযোগ থাকায় চিবো-তে প্রায়ই আসে তরুণ-তুর্কির দল। শিলিগুড়ি শহর বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কালিম্পং শেয়ার গাড়িতে এসে, কালিম্পং থেকে চিবো রিজার্ভ গাড়িতে আসতে পারেন, ভাড়া ৪০০ টাকা। শিলিগুড়ি শহর বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে চিবো পর্যন্ত রিজার্ভ গাড়িতে এলে ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। হোমস্টে-তে থাকা খাওয়ার খরচ দিনপ্রতি জনপ্রতি ১৪০০ টাকা।
যোগাযোগ : 98007 54518