স্বপ্ন আলোর দেশে
লিখেছেন মন্দিরা পান্ডা
কংক্রিটের আবরণে আচ্ছাদিত জীবন আপন ছন্দে চলতে চলতে যখন একচিলতে অক্সিজেনের জন্য হাঁফিয়ে উঠবে, আপনি প্রাণের রসদ খুঁজে পাবেন ‘স্বপ্ন আলোর দেশে’। রূপকথার রাজ্য নয়, বরেণ্য বৈজ্ঞানিক ডঃ শান্তনু ভৌমিকের লেখা ও রেখার মিলনায়তন। ১৮০০-র কালপর্বে ইংরেজী সাহিত্যের ইতিহাস সাক্ষী থেকেছিল pre-raphaelite আন্দোলনের। যাঁরা কখনও ছবিকে ছন্দের মাধ্যমে আবার কখনও ছন্দকে ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করতেন। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষায় খানিক সেই ধ্যানধারণার অবতারণা করেছেন এই বিজ্ঞানী।
রসায়নাগার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সীমানা পেরিয়ে কবি জীবনের ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন প্রকৃতির আঙিনায়। ‘স্বপ্ন আলোর দেশে’-র প্রথম সংস্করণটি তাই প্রকৃতি মায়ের প্রতিই উৎসর্গীকৃত। পঞ্চাশটি স্বল্প বিস্তৃত কবিতা ও পঞ্চাশটি জলরং এর চিত্রে, শ-য়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই কাব্য-চিত্র গ্রন্থটি। সহজ ছন্দে, সহজ ভাষায় আটটি/ছ’টি/চারটি পংতি চালনা করেছে তুলিকে। পক্ষান্তরে এও বলা চলে, রং-বেরংয়ের বুননে যে বার্তা শিল্পসৃষ্টির স্পন্দন, তা-ই কবির ছন্দের মূল উপজীব্য।
নদীপাড়, লালমাটির রাস্তা, কলসি কাঁখে রমণী, হিমালয়ের কোল বেয়ে উদীয়মান সূর্য, পায়ে ধুলোমাখা ছোট্ট বালক, সোঁদা মাটির গন্ধ কিংবা রাজহাঁসের দল –যা লেখায়,তা-ই রেখায়। গ্রামবাংলার বুকে প্রতিমুহূর্তে যে মন ভালো করা খণ্ডচিত্র, অল্প তাকালেই খুঁজে পাওয়া যায়, তাই যেন অতি যত্নে লালিত-পালিত তুলি ও কালিকলমে। সর্বোপরি শিল্প ও স্রষ্টার কোনও বয়স হয় না। অনায়াসে তাই বয়স নামক সংখ্যার গুরুভারকে লঘু করে শিল্পী-কবি হয়ে উঠেছেন সবার কাছে সমান গ্রহণীয়। পাঠক সর্বদাই বইয়ের গন্ধে নেশা করেন। তবে এই বইটি কেবল নিজের অঙ্গসৌরভে সুরভিত নয়।ছাপাখানার গন্ধকে খানিক প্রশমিত করে শান্তনু-র শিল্প ও কবিভাবনা ‘স্বপ্ন আলোর দেশে’ এনেছে লালমাটির সতেজ সোঁদা গন্ধ। যে বই পড়ে শুধু শেখা যায় না, পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে অনুভব করা যায়।