স্বাতন্ত্র্য নষ্ট করছে সস্তা অনুকরণপ্রিয়তা
অতিমারীর প্রকোপ থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের রমরমা–যাপনের নতুন কলা শিখেছে মানুষ। এর ফলে, সামাজিক ধ্যানধারণায় যে বিপুল পরিবর্তন আচমকা এসেছে, তা বহু লোকের ক্ষেত্রেই যে বদহজমের কারণ ঘটাবে, সে তো অত্যন্ত স্বাভাবিক ! বাংলা বিনোদন বাণিজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিরিজ বা সিনেমা দেখলে, এই বদহজমের ব্যাপারটা খুব বেশি করে মনে হচ্ছে ইদানীং।
চারিত্রিকভাবে আমরা অনুকরণপ্রিয় এবং সস্তায় বাজিমাত করার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। কখনও মুম্বই, কখনও দক্ষিণী ছবি নকল করে বাংলা ছবি বানানোর অভিযোগ বার বার উঠেছে। এখন তো ইন্টারনেটের কল্যাণে নকল করার জন্য সারা পৃথিবীর বিনোদন সম্ভার হাজির হাতের মুঠোয়। মাফ করবেন পাঠক, উন্নত ভাবনা, কাজের দক্ষতা বা কৌশল অনুসরণ করে, অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের কাজকে উৎকর্ষতর করায় আমার কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি অন্ধ অনুকরণে।
প্রত্যেকটি জাতির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তাদের সামাজিক আচার থেকে শিল্প ভাবনায় তার প্রভাব প্রতিফলিত হয়। বাংলা আমার মাতৃভাষা, তাই আমি বাঙালি। সেখান থেকেই বাংলা সাহিত্য, গান, সিনেমা ইত্যাদি। এর সঙ্গে জুড়ে থাকে আমাদের লোকাচার, রুচি ও সংস্কৃতি। বাঙালি সমাজ এর বাইরে নয়। আর বিনোদনেও তো এই সবেরই প্রতিফলন পড়ার কথা। বেশ কয়েকটি বাংলা ওয়েবসিরিজ দেখে এই জায়গাটাতেই প্রবল ধাক্কা খেয়েছি।
ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সেখানে যে সমস্ত শব্দ শোনানো হচ্ছে, তা শ্রুতিযোগ্য নয়। তার থেকেও বড় কথা, যে সামাজিক স্তরের গল্প বলা হচ্ছে, যে পরিবেশ রচিত হয়েছে চিত্রনাট্যে, তার সঙ্গে ভাষা প্রয়োগের কোনও সাযুজ্য নেই। বোঝা যায়, নিছকই নেটফ্লিক্স বা হটস্টার ইত্যাদি চ্যানেলে প্রদর্শিত সিরিজে যে ধরণের ভাষা প্রয়োগ করা হয়, এ তারই অন্ধ অনুকরণ। সেখানে কিন্তু ভাষা এসেছে পরিবেশ রচনার পথ ধরেই। তাই কানে বেমানান লাগছে না।
আমরা কতটা বেপরোয়া, স্বাধীন, মুক্ত চিন্তার অধিকারী এবং সময়ের অনুপন্থী–সেটা বোঝানোর জন্য প্রতি সংলাপে খিস্তি-খেউরের বন্যা বইয়ে দিতে হবে, এ চিন্তা নিতান্তই একপেশে। এতে নিজেদের সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ পায়। পরিবেশ রচনায় দেখাচ্ছেন ঝকঝকে, শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনস্ক তারুণ্য, কথায় নিয়ে আসছেন বস্তির ভাষা–এটা কী মানা যায় ? ক্ষমতা থাকলে বস্তির মানুষকে নিয়েই সিরিজ বানান না !