হাওয়ারা হঠাৎ এসে জানালো…
প্রয়াত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিয়ে লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
এই লেখাটা এত তাড়াতাড়ি লিখতে হবে ভাবিনি। বয়স হয়েছে। অসুস্থ ছিলেন। তবু কোথাও যেন মনে হতো, সেরে উঠবেন। কলকাতায় এরপর যখন যাব, আবার দেখা হবে। অনেকক্ষণ কথা বলবো। কত অকিঞ্চিৎকর কথাই যে বলেছি একটা সময়। প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন বরাবর। কখনও বিরক্ত হননি। শুনেছেন ধৈর্য ধরে। শেষ যেবার কলকাতায় গেলাম, অভিজিৎদার সঙ্গে দেখা করার সময় বের করতে পারিনি কিছুতেই। অনেক সময় অনুচিত ব্যাপারগুলো আমাদের জীবনে অজান্তেই ঘটে। এটা তেমনই একটা। আর কিছু নয়, অপরাধবোধটা থেকে যায়। এখন সেই বেদনা, সেই অপরাধবোধ, সেই হাহাকার নিয়েই লিখতে বসলাম এই প্রতিবেদন। শুধু মনে হচ্ছে, আমি কাছে গেলে যে বড্ড খুশি হতেন। তবু কেন আর একটু বেশি বেশি যাইনি ! অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যত বড়মাপের একজন স্রষ্টা, যে স্তরের একজন দার্শনিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ–আমি কী তার মর্ম বুঝেছি ? খুব সহজেই পৌঁছে গেছি বলে কী কোথাও কোনও উদাসীনতা, অবহেলা ঘটে গেছে ? বড্ড আলোড়ন এখন, এই মুহূর্তে। মনের গহনে জমে থাকা শব্দরা ঢেউ তুলছে। শান্তি দিচ্ছে না কিছুতেই। এই ঢেউকে শান্ত করে, ভাবনাকে সংহত করে অভিজিৎদাকে নিয়ে কিছু লেখা খুব কঠিন !
আজকের ভাষায় যাকে বলে, মিডিয়া ফ্রেন্ডলি, তিনি কোনওদিনই সেটা ছিলেন না। নাহলে, আমার মতো এক ছোটমাপের সাংবাদিককে বলেন, তুমি সাংবাদিকতা ছাড়লে আমাদের কথা কে লিখবে ? এটা সেইসময়, যখন আমার পেশার আকন্ঠ দায়িত্ব আর ভালোবাসার গান গাইবার মধ্যে টানাপোড়েনে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি। বাড়িতে প্র্যাকটিস দূর, প্রায়ই ক্লাস কামাই হয়ে যাচ্ছে। একদিন গিয়ে একেবারে অসহায় হয়ে বলেছিলাম, যা থাকে কপালে, চাকরিটা ছেড়ে দেব ভাবছি। আমার ওই হঠকারী বক্তব্যের প্রত্যুত্তরেই অভিজিৎদার ওই মন্তব্য। একদিকে আমার কাজটাকে কিছুটা গৌরবান্বিত করলেন। আর একদিকে জানালেন নিজের উপলব্ধির কথা। আজ এই লেখা লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে, বলার মতো অনেক কথা তো অভিজিৎদারও ছিল। আর সেইসব অমৃতসম কথা তো মিডিয়ারই দায়িত্ব ছিল মানুষের দরবারে পৌঁছে দেবার। কিন্তু…? এই কিন্তুটার উত্তর আমাদের জানা। তবু একবার আয়নায় নিজেদের মুখগুলো দেখে নেওয়া দরকার। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে পণ্যে পরিণত করেননি। তাই তিনি ব্রাত্য। মৃত্যুর পরেও যেটুকু তাঁকে দেওয়া, সেটা না করলে সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন আম বাঙালি ছেড়ে দেবে না, তাই। এই অপ্রিয় কথাগুলো নিজেকেই বলছি পাঠক। নিজেকেই আজ ক্রুশবিদ্ধ করার পালা যে !
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রবীন্দ্রসংগীত শিখি, একথা শুনে একটা সময় অনেকেই অবাক হতেন। আজও কেউ কেউ হন। দোষ তাঁদের নয়। এই মানুষটা যে কতদূর পর্যন্ত রবীন্দ্র আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীল যাত্রার অনুগামী ছিলেন, সেটা অনেকেরই জানা নেই। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চয়ই জানেন। শুধু একটা গানের কথা এই প্রসঙ্গে বলবো, যাতে বিষয়টা পাঠকেরও হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধা হবে। শিখছি, ‘মধ্যদিনে যবে গান বন্ধ করে পাখি…’ অভিজিৎদা বসলেন আমাকে গানটা বোঝাতে–”আগে কী বলা হচ্ছে গানটায়, সেটা বোঝো। তারপর স্বরলিপি। কাব্যের অর্থ বুঝলে সুর উঠতে দেরি হবে না। মধ্যদিন মানে দুপুর, খাঁ খাঁ রোদ্দুর। এতটাই অসহনীয় যে পাখিও গান বন্ধ করে দিয়েছে। এমন এক সময়েও যে রাখাল একা তার বাঁশি বাজিয়ে চলেছে, সেই রাখাল আসলে কে ? কোথাও কেউ নেই। কিন্তু প্রান্তর প্রান্তের কোনে বসে রুদ্র এই বাঁশি শুনছে…”! অভিভূত হয়ে গেছিলাম সেদিন। ভাবছিলাম, আজ আমি কার সামনে বসে আছি। গান তো নয়, যা শিখছি, সে তো সবকিছুর উর্দ্ধে। ঈশ্বর-প্রকৃতি-প্রেম-আধ্যাত্মিকতা–মিলেমিশে একাকার হয়ে এক অখন্ড দর্শন হয়ে হৃদয়ের দরজায় কড়া নেড়েছিল সেই অপরূপ দ্বিপ্রহরে। কাকতালীয় ভাবে সেও এক মধ্যদিনই ছিল।
অভিজিৎদার সৃজনশীল রথের চাকা আমি অন্তত কোনওদিন বন্ধ হতে দেখিনি। গান লেখা ও সুরসৃষ্টির পাশাপাশি অন্যান্য নানা বিষয়ে লেখালেখি চালিয়ে গেছেন তিনি। সেই লেখার সূত্রেই বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর। জানি না এই মূল্যবান বইগুলি সম্পর্কে কতজন অবহিত ! নিজের কাজের বিষয়ে ন্যূনতম কথাটুকুও খুব বেশি বাইরের লোককে নিজের মুখে বলতে দ্বিধা করতেন তিনি। তাঁর অগাধ পান্ডিত্যের, এক একটি বিষয়ে অসাধারণ বিশ্লেষণের যতটুকু স্পর্শ মুষ্টিমেয় সাংবাদিক পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে ওঁর সম্পর্কটা আত্মিক ছিল। এখানে সম্পর্কটা সংবাদ মাধ্যম সংক্রান্ত একেবারেই ছিল না। তাঁদের জন্য অবারিত ছিল অভিজিৎদার বাড়ির দরজা। সেভাবেই কেউ কেউ হয়তো জানতে পারেন। এ প্রসঙ্গে বলি, আমি যে ওঁর বইগুলি নিয়ে কিছুটা আলোচনা আমার সংবাদপত্রে করার সুযোগ পেয়েছিলাম, তার কৃতিত্ব আমি যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তার কর্তৃপক্ষের। কাজের ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বাধীনতা পেয়েছি আমি, যা সবকালে সবক্ষেত্রে বিরল।
এই যে আজ ইচ্ছে থাকলেও গুণী মানুষকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করতে বাধ্য হন বহু সাংবাদিক, এ ওই পরাধীনতার নাগপাশ। বাধ্য হয়েই তাঁরা সমঝোতা করেন। আজকাল অযোগ্য লোকজনকে মাথায় তোলার সংস্কৃতি সংবাদ মাধ্যমের ভুমিকাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে, তার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের নয়। তথাকথিত কর্পোরেট কালচার এখন সবটাই বিক্রয়যোগ্য প্যাকেজিং-এ নিয়ে এসেছে। সেখানে প্রবাদপ্রতিম মানুষও নিভৃতচারী হতে বাধ্য হন। এতে তাঁর বা তাঁদের কিছু যায়-আসে না। ক্ষতি হয় বৃহত্তর সমাজের। এই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আর একটি ছোট্ট কিন্তু ভাবনাযোগ্য স্মৃতির উল্লেখ। সংবাদপত্রে লেখালেখির প্রয়োজনে ( কোথাও আটকে গেলেই তো যোগাযোগ করতাম) সংগীত সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়, কোনও ঘটনা প্রসঙ্গে মতামতের জন্য ফোন করলেই বলতেন,”সাংবাদিক নয়, আমি কিন্তু শিল্পী অজন্তা সিনহাকে বলছি। তুমি তোমার মতো বুঝে লিখো।” এই বোঝাবুঝিটুকুই প্রত্যাশা করতেন। এটুকুই চাওয়া ছিল ওঁর। বাকি সব আমার প্রাপ্তি। আমাদের প্রজন্মের প্রাপ্তি। অনুপ্রাণিত করেই গেছেন সবসময়। বোধের, চেতনার, অন্তরাত্মাকে জাগিয়ে রাখার শিক্ষা দিয়ে গেছেন বরাবর।
নিজের একান্তের জগতে ডুবে থাকতে ভালোবাসতেন। কিন্তু, তাই বলে চারপাশের সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ থেকে উদাসীন ছিলেন না কখনওই। রাজ্য বা দেশে ঘটমান সামাজিক ও রাজনৈতিক চালচিত্র ভাবাতো তাঁকে। রুচিহীন, ক্ষুদ্র স্বার্থগন্ধযুক্ত পরিবেশ ও বিষয় গ্রহণ করতে অসুবিধা হতো অভিজিৎদার। তিনি ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই আদ্যন্ত একজন পরিচ্ছন্ন বাঙালি সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ। এর বিপরীত অবস্থানে আপোষ করতে পারতেন না বলেই নিজের জগৎকে সীমাবদ্ধ করে নেন। প্রযুক্তির উন্নতি, সময়ের পরিবর্তনে গানবাজনার পরিবেশ বদল, পরিচিত মানুষদের চিরতরে চলে যাওয়া–সবই গ্রহণ করেছেন। এই গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিক্রিয়াগুলি ছিল বিশেষ অনুধাবনযোগ্য। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলেছেন নির্দ্বিধায়। টিভির রিয়ালিটি শো থেকে সাধারণ সংগীত প্রতিযোগিতা–অংশ নিয়েছেন নিজের শর্তে, মতামত জানিয়েছেন কোনও কিছুর তোয়াক্কা না রেখে। অপ্রিয় কথা স্পষ্ট বলেছেন। আবার পছন্দের দিকটাকেও উচ্ছ্বসিতভাবে প্রকাশ করেছেন। কাজ করেছেন নতুন শিল্পীদের সঙ্গে, প্রজন্মগত বাধা সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে।
অসম্ভব রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন অভিজিৎদা। এক্ষেত্রেও ছিলেন সম্পূর্ণ আপোষহীন। বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু যেখানে, যখন, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষুদ্র স্বার্থ, দলীয় আগ্রাসনের প্রভাবে বৃহত্তর সমাজের ক্ষতি হতে দেখেছেন, বলতে ছাড়েননি। সেই কারণেই তিনি প্রিয়পাত্র হতে পারেননি কোনও আমলেই। হতে চানওনি। আমি গেলে বহুদিন এমন হয়েছে গান একপাশে রেখে, এইসব নিয়েই কথা বলে গেছি আমরা। বড় কোনও ঘটনা ঘটলেই যাওয়ার পর বলতেন, আচ্ছা, বল তো এই বিষয়ে তোমরা, সংবাদপত্র কী ভাবছো ? তারপরই শুরু হয়ে যেত আলোচনা। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক–কোনও ক্ষেত্রেই এতটুকু রক্ষণশীলতা দেখিনি তাঁর মধ্যে। আমার কলার টিউনে একটা দীর্ঘ সময় ‘তুহি রে…’ গানটা সেট করা ছিল। আমায় ফোন করে গানটা শুনলেই বলতেন, তুমি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হয়ে হিন্দি গান লাগিয়ে রেখেছো ফোনে ? আমি একদিন বললাম, আপনি বলুন, রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে, নিজেও এই গানটা পছন্দ করতেন, কিনা ! অভিজিৎদা হেসে বললেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জেতা মুশকিল ! যে স্নেহ এবং প্রশ্রয় নিয়ে তিনি আমায় সেদিন এই কথাটা বলেছিলেন, সেটা ওঁর জায়গা থেকে ক’জন পারেন ?
ভাবতে ভাবতে বলতে বলতে হারিয়ে যাচ্ছি অনেক পুরোনো দিনে। অভিজিৎদার সোনারপুরের বাড়িতে গান শিখতে যাওয়া। প্রতিদিন সময়সীমা অতিক্রম করে যেত। ঢুকেই দেখতাম অভিজিৎদা স্নান ইত্যাদি সেরে কোনও একটি বই খুলে পড়ছেন। সামনে বা পাশে হারমোনিয়াম। একটু আগে পৌঁছে গেলে দেখতাম কী যত্নে একটা একটা করে পুরস্কারের ট্রফি, মেমেন্টো কাপড় দিয়ে মুছছেন নিপুণ হাতে। বৌদি, অভিজিৎদার স্ত্রী হয়তো ব্রেকফাস্ট রেডি করে ডাকছেন। গান আর গল্পের আসরে মাঝে মাঝে বৌদিও যোগ দিতেন। এই মানুষটি তাঁর পুরো জীবনটা অভিজিৎদাকে দিয়ে রেখেছেন। অভিজিৎদার শরীর-স্বাস্থ্য, রুটিন মেনে দিনের যাবতীয় কাজ বৌদির নখদর্পণে থাকতো। জানি না, এইসময়ের এই গভীর শূন্যতা কেমন করে গ্রহণ করছেন তিনিও !
সোনারপুরের পর অভিজিৎদার গড়িয়ার বাড়ি, শেষে বাইপাসের ধারে–সব জায়গাতেই যাই। আমার পাহাড়ে পাকাপাকিভাবে চলে আসার সিদ্ধান্ত শুনে বলেছিলেন, তোমায় হিংসা করি আমি, শিকল ছিঁড়ে শেষ পর্যন্ত মুক্তির আকাশে পালাতে পারলে তুমি ! আমি পারলাম না। উত্তরবঙ্গে চলে আসার পরও বারকয়েক গিয়ে দেখা করেছি। আড্ডা হয়েছে প্রত্যেকবারই। আর ওঁর কাছে শোনার তো শেষ ছিল না। সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, নিজের বড় দাদা, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, নচিকেতা ঘোষ, সুধীন দাশগুপ্ত, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, সুবীর সেন, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা থেকে শ্রীকান্ত আচার্য, রূপঙ্কর, নচিকেতা, শ্রীরাধা বা লোপামুদ্রা, ভাইপো অগ্নিভ প্রমুখ সবার সৃষ্টি, গান, বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এক একটি কালজয়ী গানের ইতিহাস ও বিশ্লেষণ। বরাবর মুগ্ধ শ্রোতা হয়েই ছিলাম তাঁর সামনে। প্রজন্মগত সমস্যা তো একেবারেই ছিল না। সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন মানুষ অভিজিৎদা। কিন্তু সমাজের ভালোমন্দের সঙ্গে সংস্কৃতি ঠিক যেখানটায় জড়িয়ে, সেখানে তাঁর মূল্যায়ন ছিল চরম কঠিন ও নিরপেক্ষ। সেক্ষেত্রে আর ডি বর্মণ থেকে কবীর সুমন–গুণের বা প্রতিভার উল্লেখ করেও যেখানে প্রয়োজন, সমালোচনা করতেন তিনি।
শেষ করবো গান শেখার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গানে আমি যথেষ্ট আবেগ যুক্ত করি না, এ অভিযোগ অভিজিৎদার বরাবর ছিল। বলতেন, জীবন তোমাকে যত পিষে দেওয়ার চেষ্টা করবে, তত তোমায় গানের মধ্যে নিজের অন্তরের সুধা খুঁজে নিতে হবে। এই প্রসঙ্গে শ্রাবণীর (সেন) কথা খুব বলতেন। বলতেন, “ওর থ্রোয়িংটা দেখো। কী সুন্দর অভিব্যক্তি !” আমি রবীন্দ্রসংগীত ছাড়া ওঁর কম্পোজ করা গানও শিখতাম। তেমনই একটি ‘সারাদিন তোমায় ভেবে, হলো না আমার কোনও কাজ…’, সুবীর সেন গানটাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যেটার প্রভাবমুক্ত হয়ে গাইবার চেষ্টা করা মুশকিল। অভিজিৎদা নিজে গেয়ে শেখাচ্ছিলেন গানটা। সে এক অনির্বচনীয় মুহূর্ত। উনি যে কী অসাধারণ এক কন্ঠ-সম্পদের অধিকারী ছিলেন, সে কথা অভিজিৎদার ছাত্রছাত্রীরা হয়তো জানে। যেমন সুর, তেমন উচ্চারণ ও অভিব্যক্তি ! শুধু গান গাইলেই যথেষ্ট খ্যাতি ও সাফল্য পেতেন। কথাটা বললেই একটা অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠতো মুখে। কোনও জবাব দেননি কোনওদিন। বাইরে নীরব দুপুর। দূরে কোথাও একটা পাখি ডাকছে। অভিজিৎদা সঞ্চারী গাইছেন, ‘হাওয়ারা হঠাৎ এসে জানালো…’ আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম। ভিতরে একটা অচেনা কষ্ট ! প্রেমকে ঈশ্বর বলে মেনেছিলেন তিনি। এই মান্যতার প্রতি নিবেদিত থাকাই ছিল তাঁর যাপন ও দর্শন।
ছবিঃ সৌজন্যে গুগল