সকাল হলেই শ্যামের বাঁশি
দাদারা-দিদিরা, বৌদি, কাকু, মাসিমা উঠে পড়ুন !! ঘুমোলে চলে যাবে গাড়ি/সোজা হলদিবাড়ি…ছড়া মিলিয়ে এই হলদিবাড়ি বলাটা আমাদের পাড়ার তেনার বৈশিষ্ট্য। এ পাড়ায় থাকতে আসার প্রথম দিন থেকেই আমার ঘুম ভাঙাবার দায়িত্বে ইনি ! শুধু আমার কেন, অনেকেরই। আমার উল্টোদিকের বাড়ির প্রতিবেশী বলেন ‘শ্যামের বাঁশি’ ! হাঁকডাকের সঙ্গেই খুব জোরে বাঁশিও বাজান তিনি। প্রতি সকালে করপোরেশন থেকে আসেন সাফাইকর্মী–এক এক পাড়ায় এক এক স্টাইল তাঁদের। এই ‘প্রতি সকাল’টা কিন্তু ওঁদের ক্যালেন্ডার মেনে ঘটে। আপনাকে সেই ক্যালেন্ডার বুঝে চলতে হবে। আমাদের পাড়ায় যেমন একদিন বাদে একদিন পায়ের ধুলো পড়ে তাঁর।
আমার পরিচিত একজন বললেন, তাঁদের পাড়ার সাফাই কর্মীটি কোনও কথাবার্তায় থাকেন না। তাঁর হাতে একটি টিন থাকে। তিনি সেটাই খুব জোরে জোরে পেটান। লোকজন বাধ্য ও বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে ময়লার ব্যাগ নিয়ে। মজা হলো, শুরুর দিকে আমিও বিরক্ত হতাম। প্রথম টনক নড়লো অতিমারী শুরু হওয়ার পর। ঘরে ময়লা জমে থাকবে, জীবাণু ছড়াবে–সেই আতঙ্কে আমি এবং সবাই উপলব্ধি করলাম আমাদের জীবনে মানুষটির গুরুত্ব। সকালে এসে সে তাঁর দায়িত্ব পালন করে। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, নিজের অসুস্থতা–সব পরিস্থিতির মধ্যেই কাজটা করে যায়। বছরে একবার পুজোর বকশিশ। এছাড়া করপোরেশনের মাইনে। লোকে বলে সরকারি চাকরি, ভালোই তো আছেন ওঁরা ! সে হয়তো আর্থিকভাবে আছেন। কিন্তু সমাজের জন্য, আমার-আপনার জন্য যে কাজটা করেন এই মানুষগুলো, তার মূল্যায়ন কী শুধুমাত্র টাকার পরিমাপে হয় ? ভেবে দেখবেন পাঠক !