Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

অনুদান আছে উদ্যোগ নেই

টালিগঞ্জের অবস্থাই এই মুহূর্তে তেমন সুবিধাজনক নয়, রাজ্যের অন্য কোথাও আর নতুন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কী করে গড়ে উঠবে ?–বললেন একজন। প্রসঙ্গ উত্তরবঙ্গ। আমি পাকাপাকি উত্তরবঙ্গবাসী। উনি কর্মসূত্রে। ওঁর কথাটা একশোভাগ যুক্তিযুক্ত। তবু, কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। আর সেটা শুধু শিলিগুড়ি বা উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্র করেই উত্থাপিত নয়। এটা সমগ্র রাজ্যের ব্যাপার। এটা ঠিক, একটা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠা ছেলেখেলা নয়। বিশাল বিনিয়োগ, বিরাট কর্মযজ্ঞ ! রাতারাতি এটা হয় না। এই মুহূর্তে সত্যিই এই উদ্যোগ সম্ভবও নয় ! আর জায়গায় জায়গায় ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে, এটা ভাবার মতোও অপরিণত মনস্কও নই আমরা।

কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামান্য বিনিয়োগে জেলা শহরগুলিতে কিছু মানুষ যে ছোট ছোট স্তরে হলেও স্টুডিও তৈরি করছেন। মিউজিক ভিডিও থেকে স্বল্পদৈর্ঘের ছবি বানাচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের মতো করে একটা নেটওয়ার্কও তৈরি করেছেন। এগুলো কী করে সম্ভব হচ্ছে ? কাজগুলো খুব উন্নতমানের হচ্ছে, সেটা বলছি না। সেটা বাস্তবে সম্ভবও নয়। প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই বললেই চলে। সব কাজটাই তাঁরা করেন নিজেদের সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। তবু,করছেন তো তাঁরা ! অসম্ভবকে সম্ভব করছেন নিজেদের সৃজনশীল আবেগের তাগিদে।

সারা রাজ্যেই মফঃস্বল বা ছোট শহরে প্রচুর প্রতিভাবান তরুণ-তরুণী আছেন–শিল্পী এবং টেকনিশিয়ান। এঁরা কোথায় যাবেন ? সবাই তো কলকাতায় পৌঁছতে পারেন না ! আমার চেনা এমন বহু ছেলেমেয়ে আছেন, যাঁরা নিজেদের প্রতিভা ও স্বপ্নকে গলা টিপে মেরে রোজ নিজের অঞ্চল থেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে কলকাতায় চাকরি করতে আসেন। তাঁর ভালোবাসার বিষয় তাঁকে ভাতের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তিনি অভিনয়, পরিচালনা, এডিটিং বা সিনেমাটোগ্রাফিকে নিজের পেশায় পরিণত করতে পারেননি। আবার এমনও আছে, তাঁরা নিজের এলাকাতেই দাঁত কামড়ে পরে থেকে স্বপ্ন সফল করার কঠিনতম লড়াইটা করে যাচ্ছেন। এঁদের কথা আগেই বলেছি।

এবার কথা হলো, এই ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলো যদি একটু বাড়তি বিনিয়োগ পায় অথবা সরকারি কোনও প্রকল্পের আওতায় যদি স্টুডিও বা বিষয়গুলিকে আনা যায়, তাহলে অবস্থাটা কিছুটা ইতিবাচক দিকমুখী হয় না কী ? আক্ষেপ, কোনও দিনই বিষয়টা নিয়ে ভাবা হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে কিনা সন্দেহ। আমরা জোড়াতালি দিয়ে চলতেই ভালোবাসি। অনুদান দিতে দিতে ভাঁড়ার শূন্য হয়ে গেলেও আমরা ভোটের রাজনীতির ফর্মূলায় সেটাই করে যাব। এর বাইরে গিয়ে নতুন শিল্পদ্যোগকে স্বাগত জানাবার ইতিবাচক ঝুঁকি আমরা নেব না !! আর উদ্যোগ নিলেও তা শিলান্যাস পর্যন্ত গিয়ে চলে যাবে বিস্মৃতির অতলে।

একদা শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে ফিল্ম সিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। টলিউডের এক নম্বর মানুষ, সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। ওই পর্যন্তই। তারপর আর কাজ এগোয়নি সেখানে, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে। শোনা যাচ্ছে সিকিমের রুমটেক, সৌরেনি, রিমপংচেং-সহ বেশ কিছু জায়গা এবং তিস্তার পাড় সাজিয়ে তোলার পাশাপাশি প্রমোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ এবং উৎসাহের কমতি নেই এই রাজ্যে। যা আছে তা নিয়েই শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের ফিল্ম প্রমোশন বোর্ডের চেয়ারপার্সন পূজা শর্মা।

আগামী দু’টি বছর সময় নির্ধারিত করা হয়েছে ফিল্ম সিটি তৈরির জন্য। এছাড়াও, একাধিক স্টুডিও তৈরি করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এতে নতুন কর্মসংস্থান তো হবেই। সিকিমের প্রচুর লোক বলিউড ও টলিউডে কাজ করেন। এর ফলে ঘরের ছেলেমেয়েরাও ঘরে ফিরে তাঁদের স্বপ্নের পেশায় জীবিকা অর্জন করতে পারবেন। প্রতিবেশী এই ছোট রাজ্যের দিকে তাকিয়ে আছি প্রত্যাশায় ভর করে। পর্যটন শিল্পে ওঁরা দেখিয়েছেন, চাইলে অনেক কিছুই করা যায়। এবার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেও এই রাজ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, বিশ্বাস তামাম উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট মানুষজনের।