দর্শককে হলমুখী হতে হবে
হাতের মুঠোয় সারা বিশ্বের সিনেমা। হলিউডের কথা ছেড়েই দিলাম। কোনও দিন ভাবতেই পারিনি, এমন এমন দেশের ছবিও এখন মন চাইলেই দেখবার সুযোগ ঘটছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো একটা ব্যাপার। সিনেমা সম্পর্কে আমাদের ধ্যানধারণা আরও পরিষ্কার হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি, সারা বিশ্বের মানবসমাজে বাহ্যিক চালচলন, আচারবিচারের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, হৃদয়বৃত্তির জায়গাটায় সকলেই এক। এইসব অবলোকনের জানালা খুলে যাচ্ছে আমাদের সামনে, বিশ্ব সিনেমার দৌলতে। আরও বেশি করে বলার, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সৌজন্যে।
সে তো হলো। কিন্তু তাই বলে বড়পর্দায় সিনেমা দেখার সঙ্গে কোনও মাত্রাতেই এর তুলনা চলে না। সিনেমা শুধু গল্প নয়, শুধু অভিনয়ও নয়। সিনেমা এক বহুমাত্রিক শিল্প। বহু ক্ষেত্রের বহু গুণী মানুষের অবদান জড়িয়ে থাকে এক একটি সিনেমা নির্মাণের পিছনে। একেবারে কাঠামো তৈরি অর্থাৎ চিত্রনাট্য লেখার স্তর থেকে–সিনেমাটোগ্রাফি, লোকেশন, লাইট, এডিটিং, মিউজিক, ডাবিং, সাউন্ড ডিজাইনিং ইত্যাদি ইত্যাদি। সব মিলিয়ে যেটা তৈরি হয়, তার সম্পূর্ণ রসাস্বাদন আর যা-ই হোক, মুঠোফোনের দ্বারা সম্ভব নয়।
এবার কিছু বাস্তব সমস্যায় আসি। অতিমারী পরিস্থিতি ও লকডাউন জনজীবন স্তব্ধ করে দেয় একটা দীর্ঘ সময় যাবৎ। সেইসব স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার পরও সিনেমাহল খুলতে খুলতে চলে যায় আরও অনেকগুলো দিন। স্টুডিও বন্ধ থাকায় ছবির শুটিংও হতে পারেনি বহুদিন। সব মিলিয়ে গত দু’বছরে সিনেমা নির্মাণ থেকে হলে বা মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা মুক্তির ক্ষেত্রে একটা প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার থেকে সিনেমা দেখার অভ্যাসটাই কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা এখানেই উঠে আসে। এই যে অভ্যাস বদল, এই যে ঘরে বসে, গাড়িতে ট্রাভেল করতে করতে একা একটি ডিভাইসে সিনেমা দেখার অভ্যাস হয়ে গেল আমাদের, এর প্রভাব কী সিনেমার বাণিজ্যিক দিকটায় পড়বে না ? দু’একটি ছবি ফ্লুকে ১০০ কোটির ঘর ছুঁলেও, সামগ্রিকভাবে সিনেমা বাণিজ্যের পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে, দর্শককে সিনেমা হলমুখী হতে হবে। আর এই দায়িত্ব শুধু নির্মাতা-নির্দেশকদের নয়, দর্শকদেরও। তাদেরও বুঝতে হবে, একটা ইন্ডাস্ট্রি মানে বহু মানুষের রুটি-রুজি। সেটা বাড়লে সমাজের ভালো। কমলে সমাজের ক্ষতি।