Monday, February 3, 2025
ঠিকানা দিকশূন্যিপুর

চোখ মেললেই কাঞ্চনজঙ্ঘা

দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা

মধুমিতার সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয়। ক্রমে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে মূলত পাহাড়, বিশেষত, উত্তরবঙ্গকে ঘিরে। উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে হোমস্টে আছে ওঁদের। মধুমিতার বেটার হাফ বাপি, তাঁদের একমাত্র কন্যা–সকলের সঙ্গেই ক্রমে ক্রমে আলাপিত হয়েছি আমি। তবে, এ যাত্রায় ওঁদের কন্যা কলকাতায়। এবার শুধু ওঁরা। তুরুক ও সাংসের নামে উত্তরবঙ্গের আরও দুটি গ্রাম ঘুরে, একটু আগেই এই পাহাড়প্রেমী দম্পতির সঙ্গে চারকোল এসেছি। বলা বাহুল্য, এই দু’টি গ্রামেই হোমস্টে আছে ওঁদের।

তবে, চারকোলে আমি আগেও থেকেছি। সেটা এখানকার মমতা গুরুংয়ের হোমস্টে-তে। চারকোল থেকে কিছুটা এগিয়ে পাবুং বলে একটা জায়গাতেও ছিলাম একবার। তার মালিক স্থানীয় তরুণ খড়্গ গুরুং। পাবুংয়ে ওঁদের পারিবারিক ফার্ম হাউস। সে আবার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। সেবার কলকাতা থেকে বন্ধু সুজাতা সঙ্গী হয় আমার। সেসব গল্প পরে কখনও হবে। এবারে আসা মধুমিতার সৌজন্যে। ডেস্টিনেশন, চারকোলের স্নো হোয়াইট হলিডে ইন হোমস্টে। এ প্রসঙ্গে একটাই কথা, চারকোল এমন এক দৃষ্টিনন্দন গ্রাম, যেখানে বারবার আসা যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ ভিউ মেলে বেশ কয়েকটি স্পট থেকে। আর উত্তরবঙ্গের পাহাড় মানেই তো প্রতিবারই নতুন কিছু আবিষ্কার !

Img 20220301 Wa0049

স্নো হোয়াইট হলিডে ইন-এর কটেজের বারান্দায় আমাদের আড্ডা জমেছে। সামনে অস্তগামী সূর্য। যত দূর চোখ যায়, পাহাড়ের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে গোধূলির মন কেমন করা আলো। ঠান্ডা বাতাস হু হু করে ঢুকে পড়ছে নাক-কান দিয়ে। বুঝতেই পারছিলাম, আর বেশিক্ষণ বাইরে বসে থাকা যাবে না। সোয়েটার-চাদর-টুপি-মোজায় শোভিত হয়েও কাঁপছি। তবু, বসে আছি। কী অনির্বচনীয় এক মুহূর্ত ! মায়াময় সন্ধ্যা তার আঁচল দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে এই নির্জন পাহাড়ী গ্রাম। বাসায় ফেরা পাখির কূজনে দিবাশেষের কাব্যের সুর। ঘরে ফিরছে পোষা গরু-ছাগলের দল। তাদের ডাকাডাকির সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে চরাচর জুড়ে।

২০২০-র অক্টোবরে শুরু হয় স্নো হোয়াইট হলিডে ইন হোমস্টে-র যাত্রা। এর আগে স্থানীয় তরুণ বিজয় গুরুংয়ের এই বাড়িরই দু’টি ঘরে মিটমিট করে জ্বলছিল পর্যটনের প্রদীপ। তার পলতেকে অনেকটাই উস্কে দিয়ে একটা পেশাদারী রূপ দিলেন বাপি ও মধুমিতা। পরিষেবা ব্যবস্থায় আনুষঙ্গিক পরিবর্তন এলো। এছাড়াও আর একটি কটেজ নির্মিত হলো। এই কটেজই এখন আমার অস্থায়ী ঠিকানা। সত্যি বলতে কী, নতুন কাপলদের জন্য এই কটেজ একেবারে স্বর্গ ! তবে ব্যবস্থা এমন, হেসেখেলে চারজনের পরিবার বা চার বন্ধুও থাকতে পারে। জব্বর ঠান্ডা পড়েছে। তবু, ঘরে কী আর মন বেঁধে রাখা যায় ? হোমস্টের সামনে অনেকটা খোলা আকাশে তারার প্রদীপ রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সেসব দেখতে দেখতে সন্ধ্যা গড়ায় রাতের দিকে। 

Img 20220301 Wa0047

আগেই লক্ষ্য করেছি হোমস্টে-র পুরোনো যে অংশ, সেখানে অতিথি হয়ে এসেছে একদল তরুণ। তরুণদের দলটি এবার বায়না তোলে, “বাপি ভাইয়া এত ঠান্ডা ! একটু বন ফায়ার হবে না ?” সত্যিই তাই। এমন ঠান্ডায় আগুনের সেঁক তো অবশ্যই চাই। বিজয় ভাইয়ের কাছে কাঠকুটো মজুতই থাকে ! মহা উৎসাহে তিনি সেসব নিয়ে আসেন। তারপর আর কি ? আড্ডা, বন ফায়ার, ছেলেদের বেসুরো গান…জমে যায় মাঘের সন্ধ্যা। কিচেনে তখন মুরগি তৈরি হচ্ছে ডিনারের জন্য। খুঁজে পেতে গ্রাম থেকে দেশি মুরগি যোগাড় করেছেন বাপি। সব মিলিয়ে বেশ একটা পিকনিকের আবহ। ডিনারে দুর্দান্ত রুটি-চিকেন খেয়ে আমরা যখন বিছানায়, তখনও হাওয়ায় উড়ছে আগুনের ফুলকি। উড়ন্ত জোনাকিদের সঙ্গে দেখাদেখি, কানাকানি চলছে তাদের। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জমে যেতে যেতে জানালার কাঁচ দিয়ে দেখি সেই অনির্বচনীয়তা।

ঘুম ভেঙ্গেই কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন ! অনেকটা বিস্তারে একেবারে স্বর্গীয় মেজাজে দৃশ্যমান তিনি এখানে। সচরাচর কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে আমার তেমন দেখাসাক্ষাৎ হয় না। চারকোল এসে ভাগ্য সুপ্রসন্ন ! সকলেই মুগ্ধ, অভিভূত। এই পর্ব শেষ হলো সূর্যদেব আবির্ভুত হওয়ার পর। সূর্য ওঠার পর আর দেখা যায় না তাকে। ততক্ষণে রোদ্দুর মাখা নীল আকাশ বিছিয়েছে সামিয়ানা। দূর পাহাড়ের স্তরে স্তরে লেখা রূপসী বর্ণমালা। আবহমানকাল দাঁড়িয়ে প্রাচীন গাছেরা। অতি চেনা হলুদ গাঁদাফুলের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে দুষ্টু রোদ্দুরকণা। ইতিউতি উড়ছে প্রজাপতির দল। এইসব দেখতে দেখতেই ব্রেকফাস্ট-এর ডাক পড়ে। আজ টোস্ট আর অমলেট। এই গন্ডগ্রামে পাউরুটি ? বাপির কথায় জানতে পারি, গ্রামের যে সার্ভিস গাড়িগুলি শহরে যায়, তার ড্রাইভাররাই অর্ডার মতো রসদ আমদানি করেন গ্রামে। সেই সূত্রেই সকালের এই নাগরিক ব্রেকফাস্ট প্রাপ্তি।

“সেটা ১৯৯৯ সাল। আমি হোমস্টে ব্যবসা শুরু করলাম চারকোলে। সেই সময় এই অঞ্চলে এটা কেউ ভাবতেই পারতো না। সেই দিক থেকে এই হোমস্টে হলো চারকোলের সবচেয়ে পুরোনো হোমস্টে”–বললেন বিজয় গুরুং। হোমস্টে-র ঘরে বসে আমরা কথা বলছিলাম। সেখানে বাপি এবং মধুমিতাও ছিল। বিজয়ের কাছে আরও কিছু তথ্য পেলাম। কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা তো আগেই বলেছি। শুনলাম নাথুলা রেঞ্জও অনেকটা দেখা যায় এই হোমস্টে থেকে। তবে, সেটা দেখার জন্য একেবারে ভোরে উঠতে হবে। এবার আর হলো না সেটা। পরে কখনও…! কাছাকাছি রয়েছে গুরুং মনাস্ট্রি, দেবী মন্দির (গুহার ভিতরে) আর সংসারী মা। আশপাশের সকলেই খুব জাগ্রত বলে মনে করে এই দেবীকে। চারকোল থেকে সাইট সিয়িংয়ে যাওয়া যায় বেশ কয়েকটি জায়গায়। কালিম্পং খুব দূরে নয়। কালিম্পং শহরের দ্রষ্টব্যগুলি ছাড়াও, এখান থেকেই যেতে পারেন পেডং, রিশপ, লাভা, লোলেগাঁও, বারমিয়াক, রামধুরা, সিলেরি গাঁও, ইচ্ছে গাঁও ইত্যাদি জায়গা। সব ঘুরে দেখতে হলে কয়েকটা দিন থাকার পরিকল্পনা করে আসতে হবে।

লাঞ্চে ডিম কষা, স্কোয়াশের তরকারি, ডাল আর আলুভাজা খেয়েছি। সঙ্গে আচার তো আছেই। বিকেলে আবার কিছুটা পুরোনো গল্প বিজয় গুরুংয়ের মুখে। বললেন,”এখন তো বিএসনএনএল-এ চাকরি করি একটা। সেই সময় সম্পূর্ণ বেকার। লোলেগাঁও থেকে এক বন্ধু ট্যুরিস্ট পাঠাতো। বেশিরভাগ বাঙালি ট্যুরিস্ট। মূলত সাইট সিয়িংয়ের জন্যই সবাই আসতো এদিকে। আমি আমার এখানে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতাম। লক্ষ্য করে দেখলাম, সবারই বেশ ভালো লাগছে জায়গাটা। সেটাই আমার হোমস্টে সম্পর্কিত ভাবনার উৎস বলা যায়। এরপর অন্যরাও ভাবতে শুরু করে। এখন তো ১৭/১৮ টা হোমস্টে হয়ে গেছে।”

নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক এক কাহিনি। প্রসঙ্গত, চারকোল বেশ বড় অঞ্চল। ছোট ছোট অঞ্চল ঘিরে লোকালয়। এই হোমস্টে’র একেবারে আশপাশে ২৫টি মতো পরিবার থাকে। পেশা মূলত চাষবাস। প্রায় সব ধরনের শাকসবজি হয় এখানে। যেমন, স্কোয়াশ, বিন, সব ধরনের কপি, রাই শাক, ধনে পাতা ইত্যাদি। এছাড়া আদা, ভুট্টা খুব বেশি। ফুলঝাড়ু গাছের চাষও করেন অনেকেই। মৌমাছি চাষের জন্যও এখানকার আবহাওয়া বিশেষ উপযোগী। এখন হোমস্টে ব্যবসায় এসে গেছেন অনেকেই। সরকারি চাকরি প্রায় নেই বললেই চলে। ছোট স্তরে গরু-ছাগল, মুরগির ডেয়ারি ও পোলট্রিও বেশ কিছু মানুষের জীবিকা। ড্রাইভিং-এ আছেন কেউ কেউ। আর অনেকেই আর্মিতে যান। বলা ভালো, তরুণদের অধিকাংশ স্বপ্ন দেখেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার।

গ্রামে একটিই প্রাইমারি স্কুল। হাইস্কুলে পাঠরতদের  যেতে হয় বেশ কিছুটা দূরের সিনজিতে। আর কলেজে পড়তে চাইলে কালিম্পং। এখানে কোনও হেল্থ সেন্টার নেই। দরকারে যেতে হয় সিনজিতে। সেখানেও সপ্তাহে একদিনই মাত্র ডাক্তার বসেন। ফলে, সমস্যা সামান্য জটিল হলেই গ্রামের মানুষকে কালিম্পং যেতে হয়। চারকোলে পানীয় জলের সংকট মারাত্মক। এটার আশু সমাধান প্রয়োজন। মধুমিতা জানান, এটা পর্যটন ব্যবসার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করছে। এইসব কঠিনতা, সমস্যা নিয়েও ভালোই আছেন ওঁরা, বললেন বিজয়। আসলে ভালো থাকতে পারাটা পাহাড়ের মানুষের সহজাত। মিলেমিশে থাকেন সকলে। দুর্গাপূজা, দশেরা, দিওয়ালি, ভাইফোঁটা, লোসার, ক্রিসমাস একসঙ্গে উদযাপন করেন। গ্রামে মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস। আজও ঠান্ডা জাঁকিয়ে পড়েছে। খিচুড়ির সঙ্গে ঝুরি ঝুরি আলুভাজা, পাঁপড় আর ডিমের অমলেট। সঙ্গে পাহাড়ের গোল লঙ্কার আঁচার। এককথায় অমৃত। আজকের ডিনারের এই আয়োজন আমারই অনুরোধে।

পরের দিন ঘুম ভাঙতেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ি। গ্রামের মানুষ অপরিচয়ের গন্ডি মুছে আত্মীয়তার হাসি হাসে। এদিক-ওদিক চোখ ফেরালেই দেখি অপরূপা প্রকৃতি। সামনে বহুদূর পর্যন্ত খোলা আকাশ, দূরের পাহাড়শ্রেণী দেখতে দেখতে ব্রেকফাস্ট, এক স্মৃতিময় গাথাকাব্য হয়ে থাকবে। আজ ব্রেকফাস্টে খেয়েছি পরোটা আর আলুর সবজি। বিজয়ের স্ত্রী দীপার রান্না সাধারণ আলুর সবজির চমৎকার স্বাদ অনেকক্ষণ মুখে লেগেছিল। হাসিখুশি এই তরুণীর সারল্য এখানকার প্রকৃতির মতোই সরল ও নির্মল। রান্নার প্রশংসায় খুশি লুকোয় না সে। আর একটা কথা, পাহাড়ী অঞ্চলের নিয়মমতোই উঁচুনিচু জমির ওপর পুরো বাড়িটা। স্বাভাবিকভাবেই ওঠানামায় কিছুটা কষ্ট হচ্ছিল। আমার অনুরোধে কটেজের বারান্দায় ব্রেকফাস্ট সযত্নে পৌঁছে দিয়ে গেছে বিজয়ের ছেলে। নিতান্তই কিশোর। সঙ্গে তার পিসতুতো দাদা। দুজনেই অতি চটপটে ও কর্মঠ। ওদের যত্ন ও আন্তরিকতার সত্যিই কোনও তুলনা হয় না।

আজ সকালে ছেলের দল বিদায় নিয়েছে। তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে দুপুরেই আর একটি দল এসে গেছে । স্কুল শিক্ষিকার এই টিম নিচের বড় ঘর দু’টিতে আছেন। বিকেল থেকেই বাপি আর বিজয়ভাই বার-বি-কিউর সরঞ্জামাদি নিয়ে ব্যস্ত। কাছেই মাঘী পূর্ণিমা। চাঁদ ক্রমশ অহংকারী। আজ সন্ধ্যায় সেই অনুষঙ্গেই মেতে ওঠা। আমার তত্ত্বাবধানে পাক্কা বাঙালি মুড়ি মাখা প্রস্তুত। সঙ্গে আদা দেওয়া লিকার চা। আড্ডায় সেইসব নিয়ে বসেছি আমরা। চরাচর শান্ত। সামান্য কোলাহল নিচের ঘর দু’টিতে। শীত পোশাকে সাজুগুজু করে বার-বি-কিউর মজা নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন অতিথিরা। চারকোলের প্রকৃতি জ্যোৎস্নায় মাখামাখি। কাল সকালে ফেরার পালা। বিদায়ের বাঁশি বেজে উঠেছে আজ বিকেলেই। গোছগাছ, প্যাকিং চলছে। বাপির কাছে শুনলাম চারকোলের আরও কয়েকজন বঙ্গ সন্তানের কথা। তাঁরাও ছাপ রেখেছেন এখানকার পর্যটন মানচিত্রে। কেউ কেউ তো বেশ পুরোনো।

হোমস্টে-তে থাকা-খাওয়ার খরচ দিনপ্রতি জনপ্রতি ১২০০ টাকা। পাবেন ভাত-রুটি, ডাল-সবজি-ভাজি, চিকেন-ডিম, আচার-পাঁপড়-স্যালাড। ব্রেকফাস্টে টোস্ট-অমলেট, রুটি বা পুরি এবং সবজি/ভাজি। সন্ধ্যার স্ন্যাকসে পকোড়া পাবেন। চা-কফি বার তিনেক। বন ফায়ার ও বার-বি-কিউর বন্দোবস্ত আছে। চমৎকার খোলামেলা পরিবেশ। দল বেঁধে গেলে দারুন উপভোগ করবেন। আবার একান্তে কাটাতে চাইলেও অসুবিধা নেই। শীতে খুব বেশি ঠান্ডা পড়ে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে তাই যথেষ্ট শীতবস্ত্র সহ যাওয়া জরুরি। কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ, বিস্কুট বা শুকনো খাবার সঙ্গে রাখলে ভালো। গিজার, রুম হিটার ও Wifi-এর সুবিধা আছে এখানে। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রেক্ষিতে যা  বিশেষ উল্লেখ্য।

এনজেপি/ শিলিগুড়ি থেকে চারকোল রিজার্ভ গাড়ির ভাড়া ৩২০০-৩৫০০ টাকা (বড় গাড়ি)। ছোট গাড়ির ভাড়া ২৫০০-২৮০০ টাকা। শিলিগুড়ি মহানন্দা ব্রিজ/ এয়ার ভিউ মোড় থেকে শেয়ার গাড়ি ছাড়ে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত। ফেরার জন্য চারকোল থেকে এনজেপি শেয়ার গাড়ি যায় সকাল ৬.৩০ থেকে ৭.৩০ পর্যন্ত। ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া এনজেপি/ শিলিগুড়ি থেকে প্রায় সারাদিন শেয়ার গাড়ি কালিম্পং পর্যন্ত আসে, ভাড়া ১৫০ টাকা। কালিম্পং থেকে চারকোল শেয়ার গাড়ি আসে রোজ সকাল থেকেই মোটামুটি। দুপুর ১টায় শেষ গাড়ি। ভাড়া ১০০ টাকা। হোমস্টে কর্তৃপক্ষকে আগাম জানালে শেয়ার গাড়িতে আসা-যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেন ওঁরা। গাড়ি ভাড়া উনিশ-বেশ হতে পারে। নিচের নম্বরে ফোন করে সব তথ্যই আগাম জেনে নিতে পারেন।

Img 3 1648454057393

♦️ বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ : 7980681264, 7278803993, 7003252526, 9433703990

★★ যখনই বেড়াতে যাবেন (নিয়মিত বিভাগ)

🌈 প্যাকিং ফান্ডা

🔺কি কি নিয়ে যাবেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন চটপট। এটা বেশ কয়েকদিন আগেই করুন। এতে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

🔺ব্যক্তিগত জরুরি জিনিস, টাকাপয়সা, ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের বুকিং স্লিপ ইত্যাদি এমন জায়গায় রাখুন যা হাতের কাছে থাকবে অথচ বিশেষ যত্ন-খেয়ালও রাখা যাবে। ক্যামেরা, ল্যাপটপ ব্যাগের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।

🔺 ফার্স্ট এড বক্স, সাধারণ জরুরি ওষুধ এবং আপনি নিয়মিত যে ওষুধ খান তা যথাযথ পরিমানে সঙ্গে রাখুন।

🔺 টর্চ-মোম-দেশলাই অবশ্যই রাখতে হবে।

🔺সানগ্লাস, ছাতা ও বর্ষাতি রাখতে পারলে ভালো।

🔺ভাঁজ নয় জামাকাপড় ফোল্ড করে প্যাক করলে কম জায়গায় বেশি পোশাক আঁটবে। আর জামাকাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হবে না।

🔺জামাকাপড়-জুতো ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিন কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুসারে। যেমন, পাহাড়-জঙ্গল-সি বিচ যেখানে, সেখানে হিলতোলা  জুতো নয়, স্পোর্টস শু জাতীয় হলে ভালো। আর পোশাকও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রসাধনী ও রূপচর্চার উপকরণও যেটা না হলে নয়, ততটুকুই। মনে রাখুন, বোঝা বাড়ালে পথে চলাফেরায় কষ্ট। শীতের জায়গায় যথেষ্ট শীতপোশাক রাখুন সঙ্গে।

 🔺গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সঙ্গে রাখুন কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ, কফি পাউডার, গরমজল করার ইলেকট্রিক কেটলি, কাগজের কাপ ও প্লেট, টিস্যু পেপার।

Img 20210118 082958

🌈 যাওয়ার আগে কি কি করবেন

◾যথাসম্ভব জায়গাটা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর নিয়ে নিন। স্পটে গিয়ে কি কি দেখবেন, কিভাবে সময় কাটাবেন, তার একটা ধারণা থাকলে সুবিধা হবে আপনার। বাজেট করা ও প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি।

◾জেনে নিন, কাছাকাছি এটিএম, প্রয়োজনে ডাক্তারের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলে সেই অনুসারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

◾চেষ্টা করবেন থাকা-খাওয়া-যাতায়াত-সাইট সিয়িং-শপিং ইত্যাদি খরচাপাতির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নেওয়ার।

◾বেড়াতে গিয়ে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য আগে থাকতেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

🌈 আগাম বুকিং এবং

এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত দিক। যাঁরা হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন, দল বেঁধে বা একা এবং বুকিংয়ের তোয়াক্কা করেন না, তাঁদের জন্য এই বিভাগ নয়। যাঁরা কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাট বেড়ানো পছন্দ করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সচরাচর এডভান্স বুকিং না করে যান না। আমি নিজেও সেভাবেই সারা জীবন ঘুরেছি। এই বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই এজেন্ট, পাহাড়ের ক্ষেত্রে হোমস্টে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে পর্যটকদের নানা বিষয়ে অশান্তির কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে যে সাবধানতা গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে—

■ এজেন্ট সম্পর্কে ভালো করে আগে খোঁজ নিন

■পাহাড়ের হোমস্টে মালিকরা এমনিতে সৎ। কিন্তু ততটা পেশাদার এখনও নয়। কথাবার্তা, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও ওদের কিছুটা সমস্যা আছে। ওদের ক্ষেত্রে বার বার জিজ্ঞেস করে, ভাষার কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কাটিয়ে উঠে, নিজের চাহিদা পূরণের ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝে নিন।

■ কোনও কারণে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হলে এডভান্স বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না, এটাই নিয়ম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার টাকা গচ্ছিত থাকবে ওই এজেন্ট, হোমস্টে মালিকের কাছে এডভান্স হিসেবেই। সেই সময়ের মধ্যে আপনি যেতে পারবেন সেখানে। এই বিষয়টিও বুকিংয়ের সময় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।

🌈 কি করবেন

◾মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেখানে গেছেন, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি মানিয়ে চলবেন, তত মজা-খুশি-আনন্দ অনন্য প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেবে আপনার অভিজ্ঞতায়।

◾যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঘুরুন। এতে জায়গাটির সত্যিকারের এসেন্সটা পাবেন।

◾জেনে নিন এলাকার মানুষের জীবন, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাস।

🌈 কি করবেন না

◾যত্রতত্র প্লাস্টিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।

◾লক্ষ্য রাখুন আপনার আনন্দ-উল্লাস যেন অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।