কোন বয়সে কী দেখবো !
প্রযুক্তির কল্যাণে গত কয়েক বছরে কত কি-ই যে শেখা হলো আমাদের। কত নতুন নতুন বিনোদন পরিষেবা যে পেয়ে গেলাম হাতের মুঠোয় ! এখন কথা হলো, তার কতটুকু, কীভাবে নেব আমরা ? প্রবীণত্বের সীমায় পৌঁছে ইদানীং সেই প্রশ্নই যেন কুরে কুরে খাচ্ছে ! একটা সময় ছিল, যখন শুধুই সিনেমা ছিল বিনোদনের মাধ্যম। তারপর এলো টেলিভিশন। ইন্টারনেট আসার পর যুগান্তর ঘটে গেল বিনোদন জগতে। স্মার্ট ফোনের হাত ধরে সেই যুগান্তরের প্রসাদ পৌঁছে গেল প্রায় ঘরে ঘরে। এখন মুঠো ফোনে শুধু সিনেমা নয়, কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবো, এমন এক অবস্থা !
বিপদটা শুরু এখান থেকেই। আজ সবটাই হাতের মুঠোয়। আট থেকে আশি, সকলেই একইসঙ্গে একই বিষয় দেখছে। আমাদের ছোটবেলার মতো ‘বড়দের সিনেমা’, ‘ছোটদের সিনেমা’ জাতীয় বিভাজনটাই আর নেই ! একটি বালকের হাতেও স্মার্ট ফোন। সে ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ নির্দিষ্ট ট্যাগলাইন মেনে চলতে বাধ্য নয়, যেটা সিনেমাহলে অপরিহার্য ছিল। টিভির ক্ষেত্রেও বাড়ির বড়রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারতেন। স্মার্ট ফোনে সেটা সম্পূর্ণ উধাও। সংবিধান যে একটি নির্দিষ্ট বয়সকে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে মান্যতা দেয়, তার কিছু বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি তো আছেই। সেটা না মেনে এক শিশু যখন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত একটি বিষয় দেখে, তখন তা বদহজম হতে বাধ্য। বলা বাহুল্য, সেটা বিপুল হারে হচ্ছে।
বিনোদন মাধ্যমের প্রভাব এমনিতেই মাত্রাছাড়া। স্কুলের পাঠক্রম একটি শিশুকে কিছু সামাজিক রীতি রেওয়াজ শিখতে হয়তো বাধ্য করে। কিন্তু সেটা তাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তাই নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায়। কিন্তু একটি শিশুর, শৈশব থেকে কৈশোর পার করে তারুণ্যে পৌঁছনোর পথে বিনোদন বস্তুটির প্রভাব যে চরম, সেটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। সামাজিক ক্ষেত্রে আজ এ এক নতুন সংকট। হাতের মুঠোয় গোটা বিনোদন দুনিয়া। সেই দুনিয়ার কোনটার উপভোক্তা একজন মানুষ কোন বয়সে হবে, তা আজ আর নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট নয়। এর কুফল নানাভাবে নজরে পড়ছে। বাড়ছে শিশু-কিশোর অপরাধ। অনেকেই ভুল পথে এগোচ্ছে। বহু জটিল মানসিক রোগের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন মনরোগ চিকিৎসকরা। একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা টানার কথা ভাবার বোধহয় সময় এসেছে এবার, সব এলোমেলো হয়ে যাওয়ার আগে।