Tuesday, May 13, 2025
কৃষ্টি-Culture

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস

আগামী ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। সেই বিষয়টিকে ভাবনায় রেখেই এই বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন মন্দিরা পান্ডা।

জনসংখ্যাকে সম্পদ বলা হলেও অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ নয়, বরং বোঝা। অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত শিক্ষা, বেকারত্ব, চিকিৎসা পরিষেবার অব্যবস্থা–ইত্যাদি সমস্যার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। বিষয়টার গুরুত্ব বোঝা যাবে, উল্লেখিত পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই। ২০২১ সালের শেষে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ। বিশ্বব্যাংকের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০২১’-এ এই পরিসংখ্যান জানা গেছে। এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩০ সালে ৮৫০ কোটি, ২০৫০ সালে ৯৭০ কোটি এবং এবং ২১০০ সালে গিয়ে ১০৯০ কোটিতে পোঁছতে পারে বলে জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। এরই সঙ্গে জানা গেছে, ২০২৭ সাল নাগাদ ভারত চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্রে পরিণত হবে। অত্যন্ত গুরত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘ এই জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।

১৯৮৭ সালের ১১ই জুলাই তারিখে বিশ্ব জনসংখ্যা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলে সারা বিশ্বের জনমানুষের মধ্যে একটা তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এরপরই  ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালনা পরিষদ এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা করে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রবর্তিত হয় ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’-এর ধারণা। প্রতি বছর ১১ই জুলাই রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ‘জনসংখ্যা দিবস’ পালিত হয়। এর লক্ষ্য বিশ্ব জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের ওপর আলোকপাত করা। আরও গভীরে গিয়ে বলা যায়, পরিবার পরিকল্পনা, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারের মতো জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই দিবস যাপনের উদ্দেশ্য।

প্রসঙ্গত, জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই প্রবণতা কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়। বলা যায়, কৃষি বিপ্লবই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। এর পূর্ব পর্যন্ত খাদ্যাভাব পরোক্ষভাবে জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতো। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে অনেকেই মনে করেন, পৃথিবীর যা সম্পদ রয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি লোককে জায়গা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭৭৫ কোটি, যা ধরিত্রী মাতার ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। তাঁদের মতে, ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। কেবল এ ভাবেই প্রকৃতির ওপর যে নির্যাতন চলছে তা বন্ধ করা সম্ভব। পাশাপাশি ভিন্ন মতও আছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নত বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত চিন এক সন্তান নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। চিনের এই পদক্ষেপ বর্ধিত জনসংখ্যায় জর্জরিত আর কোনও দেশ অনুসরণ করবে কী করবে না, সে এক জটিল প্রশ্ন ! প্রত্যেক দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি পৃথক। এছাড়া, ক্ষমতাশালীদের রাজনৈতিক স্বার্থ একটি বড় প্রশ্ন ! তবে, বিষয়ের গুরুত্ব বুঝে এখনই পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সংকট যে তীব্র হবে, তাতে সন্দেহ নেই। উন্নয়নও ব্যাহত হবে।

ছবি : প্রতীকী