চূর্ণী ও জয়ার অভিনয়ে ‘অর্ধাঙ্গিনী’ সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। কৌশিক গাঙ্গুলির মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী’ নিয়ে লিখেছেন নির্মল ধর।
কথায় বলে, স্ত্রী স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী ! তাহলে, স্বামীর বাকি অর্ধেক কে? যদি স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন, তিনি কী হতে পারেন বাকি অর্ধাঙ্গিনী ? কারও জীবনে এমন জটিল পরিস্থিতি তৈরি হলে, দুই নারী এবং এক স্বামীর পরিস্থিতি কেমন হয়, সেটাই ক্যামেরার সামনে অণুবীক্ষণ লেন্সে তুলে আনছেন পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি তাঁর ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ছবিতে। যদিও এখানে বিষয়টা শুধু দুই নারীর মাঝে এক পুরুষের নয়। সমস্যাটি আরও জটিল অন্যান্য কারণে। এখানে দেখানো হয়, তরুণ বয়সেই স্বামী মুমূর্ষ অবস্থায় ! চেতনাহীন ও নিশ্চল অবস্থায় তিনি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। তাঁর দুই স্ত্রীই চাইছেন স্বামীর সুস্থতা। কার্যকারণে, এই হাসপাতালেই অসুস্থ স্বামীর দুই স্ত্রীর মুখোমুখি হওয়া! প্রাক্তনী জানেন স্বামীর অতীত, তাঁর পছন্দ অপছন্দের খবর। আর যিনি বর্তমানের, তিনি জানেন স্বামীর এখনকার মনের অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা।
দুজনের দেখা হয় হাসপাতালে। এরপর চলতে থাকে স্বামীকে নিয়ে প্রাক্তন ও বর্তমান–দুজনের স্মৃতিচারণের খেলা। সেই খেলা থেকেই উঠে আসে, দুই স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর প্রেম এবং বিচ্ছেদ-মিলনের এক কোলাজ। বোঝা যায়, দুজনেই এখনও হৃদয়ের গভীরে কোনও অজানা অন্ধকারে লুকিয়ে রেখেছেন তাঁদের প্রেম! বিচ্ছেদ ঘটলেও মানসিক সম্পর্কের একটা বিনিসুতোর মৃদু টান যেন থেকেই গেছে। কৌশিককে প্রশ্ন ছিল, আপনি সাধারণত নিজের অভিজ্ঞতা বা বাস্তবের ঘটনা নিয়েই চিত্রনাট্য লেখেন। এই গল্প বেছে নেওয়ার পেছনে তেমন কিছু আছে কি? কৌশিক উত্তরে বললেন, “না, তেমন কিছু নেই। তবে আমি এটা জানি, অসুস্থ স্বামী যখন একেবারেই কোমায় আছন্ন, তখন তাঁর দুই স্ত্রীর মধ্যে যে টেনশন তৈরি হয়, সেটা কিন্তু দুরকম। প্রাক্তন ও বর্তমান স্ত্রীর সেই টেনশন এবং তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি আমি এখানে এক্সপ্লোর করতে চেয়েছি।”
কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি মানেই তিনি একটি সিচুয়েশন তৈরি করে, তার মধ্যেই চরিত্রগুলির টানাপোড়েন বের করে আনেন। ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ছবিতেও সেটাই করতে চাইছেন তিনি। কৌশিক এই প্রসঙ্গে বললেন, “আমাদের এখনকার সমাজে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো বড়ো জটিল, কমপ্লেক্স টাইপ। এখন আর সাদা-কালো বা ভালো-মন্দ এমনভাবে কোনও মানুষকে বিচার করা যায় না ! নারী-পুরুষ, প্রায় সকলের মধ্যেই কিছু গ্রে এরিয়া থাকে। সেটাকেই একটু নেড়েচেড়ে দেখতে চাইছি আর কি !”
এই ছবির সবচাইতে বড় আকর্ষণ হচ্ছে, দুই স্ত্রীর চরিত্রে চূর্ণী গাঙ্গুলি (প্রাক্তন) এবং জয়া এহসানের (বর্তমান) উপস্থিতি। চূর্ণীর দুর্দান্ত সব অভিনয় দেখেছি আমরা। এবারও তিনি নিরাশ করবেন না, এমনটাই প্রত্যাশিত। আর জয়া এহসানও যে দর্শকের মন ছোঁয়া অভিনেত্রী, সেটা আমরা দেখেছি কৌশিকেরই দুটি ছবি ‘বিসর্জন’ ও ‘বিজয়া’-তে। আবার অতনু ঘোষের দুটি ছবি ‘রবিবার’ ও ‘বিনিসুতোয়’ জয়াকে দেখেছি কী সুন্দর আন্ডার-একটিং করতে পারেন জয়া! স্বামীকে পূর্ণাঙ্গ করে তুলতে এই দুজন অভিনেত্রী দারুণ ‘অর্ধাঙ্গিনী’ হবেন নিঃসন্দেহে।
স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করছেন কৌশিক সেন। তাঁর অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই! এক্সট্রোভার্ট ও ইন্ট্রোভার্ট দু’ধরনের চরিত্রেই তিনি সাবলীল। বস্তুত, এক কৌশিকের পরিচালনায় আর এক কৌশিকের অভিনয় দেখার প্রতীক্ষায় আমরা সবাই। সবশেষে, যাঁর হাত থেকে আমরা ‘শব্দ’, ‘চতুষ্কোণ’, ‘অপুর পাঁচালি’, ‘বিসর্জন’ বা ‘সিনেমাওয়ালা’-র মতো সিনেমার ভাষায় ঋদ্ধ এবং একই সঙ্গে গল্প শোনানোর সুকৃতি দেখেছি, তাঁর হাতে এই ত্রিকোণ প্রেমের ব্যাপারেও একটু অন্য রকম সিনেমা দেখার আশা রাখছি।