কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর শতবর্ষ উদযাপন
বলা হয়, আমাদের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেওয়ার ক্ষেত্রে গান হলো এককথায় মহৌষধ। জীবনের সর্ব অবস্থায় গান আমাদের সঙ্গী। আর ভালো গানের আবেদন তো চিরকালীন। সে গানে যদি থাকে মাটির টান, তাহলে তো কথাই নেই। সে গান আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে নাড়া দেবেই। তাই লোকসংগীত আমাদের এত প্রিয়, এত কাছের। আর বাংলায় এই লোকসংগীতকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে যেসব শিল্পীর অবদান অনস্বীকার্য, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন কিংবদন্তী শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী। তাঁর গাওয়া সাগরকূলের নাইয়া, সোহাগ চাঁদবদনী, ভালো কইরা বাজান গো দোতারা, ও আমার দরদী, ও লোকে বলে বলে রে–এরকম অজস্র গান আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে।
লোকসংগীতকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আমজনতার মধ্যে। তাই মৃত্যুর ৪২ বছর পরেও তাঁর গান সমান জনপ্রিয়। শুধু গান গাওয়াই নয়, লোকসংগীতের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯৬৫ সালে নির্মলেন্দু চৌধুরী গড়ে তুলেছিলেন লোকভারতী নামক একটি সংগঠন। ১৯৮১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর লোকভারতীকে এগিয়ে নিয়ে যান তাঁর সুযোগ্য পুত্র লোকসংগীত শিল্পী উৎপলেন্দু চৌধুরী। নিজে লোকসংগীতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাংলার লোকসংগীত শিল্পীদের একত্রিত করে একাধিক লোকসংগীতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন উৎপলেন্দু।
বারো বছর আগে উৎপলেন্দু চৌধুরীও পাড়ি দিয়েছেন অমৃতলোকে। লোকভারতীর কাজ অবশ্য তাতে থেমে থাকেনি। এ বছর নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ। তাঁরই সৃষ্ট লোকভারতীকে নতুনভাবে সাজিয়ে, তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এই উপলক্ষে আগামিকাল ও পরশু (৩-৪ জুন) মধুসূদন মঞ্চে অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অফ শ্রীহট্ট সন্মিলনীর সহায়তায় দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে লোকভারতী। অনুষ্ঠানে নির্মলেন্দু চৌধুরী সন্মাননা জ্ঞাপন করা হবে লোকসংগীত শিল্পী পূর্ণদাস বাউল ও গীতা চৌধুরীকে। থাকবে নির্মলেন্দু চৌধুরী বিষয়ক বক্তব্য-প্রদান।
অনুষ্ঠানে ভারত এবং বাংলাদেশ–দুই দেশের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। যাঁরা গানে গানে নির্মলেন্দু চৌধুরীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন লোপামুদ্রা মিত্র, মা-দল, স্বপন বসু, প্রাণেশ সোম, বিমলেন্দু দাস, বিপ্রেশ (হরিগঞ্জ, বাংলাদেশ), দোহার, অভিজিৎ বসু, অরিন্দম গাঙ্গুলী, প্রতীক এন্দ (সিলেট, বাংলাদেশ), সেলিম চৌধুরী (ঢাকা, বাংলাদেশ), সর্বানী ভট্টাচার্য (শিলচর, আসাম) প্রমুখ। উৎপলেন্দু চৌধুরীর আরব্ধ কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও লোকভারতীর অন্যতম উদ্দেশ্য থাকবে বলে জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত, জীবনের শেষ ২৪ বছর লিন্টন স্ট্রিটের একটি বাড়িতে বসবাস করেছেন নির্মলেন্দু চৌধুরী। তাই শিল্পীপুত্র উৎপলেন্দুর ইচ্ছে ছিল লিন্টন স্ট্রিটটি তাঁর পিতার নামে নামাঙ্কিত হোক। আক্ষেপের বিষয়, ইচ্ছেপূরণের আগেই চলে গেছেন উৎপলেন্দু। নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্মশতবর্ষে সরকারের কাছে তাঁরা সেই রাস্তার নামকরণের আবেদনটিও রাখবে বলে জানিয়েছে লোকভারতী।