রসে রসনায় – পর্ব ১১
বাঙালির পার্বণ মানেই পেটপুজোর ভরপুর আয়োজন। আসন্ন দুর্গাপুজোকে ঘিরে আমাদের এই বিভাগেও এখন থাকছে পুজোর চারদিনের বিশেষ রেসিপি। জেনে নিন আমিষ-নিরামিষ ও মিষ্টির রকমারি। গত সপ্তাহে ছিল সপ্তমীর সম্ভার। আজ অষ্টমী। জানিয়েছেন জয়ন্তী ঠাকুর।
◾ পুজোয় হিট খিচুড়ি
আমাদের সকলেরই পুজোর সময় ভোগের খিচুরি খেতে মন চায়। সবসময় সেটা সহজলভ্য হয় না। কারও বাড়ি থেকে পুজো মন্ডপ দূরে, কেউ হয়তো কার্যকারণে প্রবাসী। তাঁরা বাড়িতেই বানিয়ে নিন সুস্বাদু ভোগের খিচুড়ি। মনে মনে মাকে উৎসর্গ করে নিলেই তো হলো। ভক্তজন খুশি থাকলে, আনন্দময়ী মা দুর্গাও খুশি। আজ আমি এখানে চারজনের আন্দাজে রেসিপি দিলাম।
উপকরণ
- গোবিন্দভোগ চাল মাঝারি ১ কাপ
- মুগডাল মাঝারি ১ কাপ
- আলু ১টি বড় মাপের
- গাজর ১টি মাঝারি মাপের
- ফুলকপি ১টি ছোট মাপের
- বিন ৫/৬ টি
- মটরশুঁটি আধ কাপ
- কাঁচালঙ্কা ২টি
- ঘি ১ টেবল চামচ
- সরষের তেল ২ টেবল চামচ
- জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ
- গোটা জিরে আধ চা চামচ
- গোটা ধনে আধ চা চামচ
- এলাচ ২টি, লবঙ্গ ৪টি, দারুচিনি ১ ইঞ্চি মাপের
- গোটা গোলমরিচ ১ চা চামচ
- তেজপাতা ২টি
- নুন ও চিনি পরিমানমতো
প্রণালী
গোবিন্দভোগ চাল পরিস্কার করে ধুয়ে নিন। সব সবজি মাঝারি মাপে কেটে ধুয়ে রাখুন। কড়াইতে মুগডাল শুকনো করে ভেজে নিন এরপর। খুব কড়া ভাজা হবে না। এবার ওই কড়াইতেই গোটা জিরে, ধনে, গোলমরিচ ও গোটা গরম মশলা একসঙ্গে ভেজে, ঠান্ডা হয়ে গেলে গুঁড়ো করে রাখুন । ওভেনে কড়াই বসিয়ে তেল দিন। তেল গরম হলে, কেটে রাখা সবজিগুলো একে একে তেলের মধ্যে নুন-হলুদ দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন। কড়া করে ভাজবেন না কিন্তু ! এরপর চাল ও ডাল একসঙ্গে অল্প ঘিয়ে ভেজে নিন। আঁচ কমিয়ে ভাজবেন। এবার হাঁড়িতে চাল ও ডালের যে পরিমাণ, তার ডবল জল দিয়ে গরম করতে দিন। জল ফুটে উঠলে ঘিয়ে ভাজা চাল-ডাল দিয়ে দিন তাতে। চাল-ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে, ভাজা সবজিগুলো এর সঙ্গে মিশিয়ে দিন।তারপর একে একে নুন, চিনি, ভাজা মশলা ও বাকি ঘি মিশিয়ে ঢেকে দিন ও গ্যাস বন্ধ করে কিছুক্ষণ দমে বসিয়ে রাখুন। ভোগের খিচুড়ি তৈরি। এরপর নামিয়ে বেগুন ভাজা (অথবা অন্য যে কোনও ভাজা) ও লাবড়া সহযোগে পরিবেশন করুন। লাবড়ার রেসিপি দিয়ে দিচ্ছি এরপরই।
◾ খিচুড়ির সঙ্গে লাবড়া
পুজোর খিচুড়ি ভোগের সঙ্গে লাবড়া এককথায় অপরিহার্য। এমনিতেও নিরামিষ আয়োজন হিসেবে লাবড়া অতি জনপ্রিয় একটি পদ। বাঙালি রান্নাঘরে মা-ঠাকুমার আমল থেকেই লাবড়ার জয়জয়কার। আমি আজ চারজনের মতো লাবড়ার রেসিপি জানালাম।
উপকরণ
- আলু ১টি মাঝারি মাপের
- কুমড়ো ২০০ গ্রাম
- বেগুন ১টি মাঝারি মাপের
- গাজর ১টি মাঝারি মাপের
- বিন ৫/৬ টি
- ঝিঙে ১টি মাঝারি মাপের
- পটল ছোট মাপের ৩/৪টে (বড় ২/৩টে)
- বাঁধাকপি (বড় ১টি কপির ৪ ভাগের ১ ভাগ)
- কিছুটা ফুলকপির পাতা
- কাঁচালঙ্কা ৪টি
- বিউলি ডালের বড়ি ৫/৬টি
- সরষের তেল ২ টেবল চামচ
- হলুদ গুঁড়ো হাফ চা চামচ
- জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ
- পাঁচফোড়ন আধ চা চামচ
- আদাকুচি ১ চা চামচ
- নুন ও চিনি স্বাদমতো
প্রণালী
প্রথমে সব সবজি ধুয়ে একইরকম মাপে কেটে নিন। তারপর গ্যাসে কড়াই বসিয়ে, তেল দিন। তেল গরম হলে বড়িটা আগে লালচে করে ভেজে তুলে রাখুন। এরপর আরও কিছুটা তেল কড়াইতে দিয়ে, পাঁচফোড়ন দিন। ফোড়ন তৈরি হলে, তাতে আদাকুচি ও চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে দিন। এরপর এরমধ্যে সবজিগুলো দিন এবং ভালোভাবে কষিয়ে নিন। এবার একে একে জিরে গুঁড়ো, হলুদ, নুন ও চিনি দিয়ে আরও একবার কষিয়ে নিয়ে, গ্যাস মিডিয়াম ফ্লেমে রেখে, ঢাকা দিয়ে দিন। অপেক্ষা করুন সবজি সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত । সবজি সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ভাজা বড়ি হাতে করে ভেঙে ছড়িয়ে দিন এবং আর একবার ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে নামিয়ে দিন।
◾ শেষ পাতে পরমান্ন
কথায় আছে, প্রথম পাতে শাকান্ন আর শেষ পাতে পরমান্ন। বাঙালি খাওয়াদাওয়ার এইসব রীতি-রেওয়াজের মধ্যেই লুকিয়ে আমাদের চিরন্তন খাদ্য সংস্কৃতি। এখানে পরমান্নর রেসিপি জানালাম ৪/৫ জনের মতো।
উপকরণ
- গোবিন্দভোগ চাল ৫০ গ্রাম
- দুধ ১ লিটার
- চিনি বা খেজুরের গুড় ১০০ গ্রাম
- তেজপাতা ২টি
- ছোট এলাচের গুঁড়ো (১ চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ)
- কাজু ও কিসমিস ১ টেবিল চামচ
প্রণালী
প্রথমে চাল ধুয়ে ১০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখুন। এবার ১ লিটার দুধ ফুটিয়ে ঘন করে নিন এমন ভাবে, যেন দুধটা হাফ লিটার হয়ে যায়। এরপর ওই ঘন দুধে চালটা দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন, সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত। তারপর চিনি/খেজুর গুড় দিয়ে আরও একটু নাড়ুন। এবার কাজু, কিসমিস ও এলাচ গুঁড়ো দিয়ে, গ্যাস বন্ধ করে, ঢাকা দিয়ে বসিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজে তুলে রাখুন। পরে সময়মতো বের করে পরিবেশন করুন।