Monday, February 3, 2025
অন্য সিনেমা এবংবিনোদন প্লাস স্পেশাল

আমার পরের ছবির বিষয়

দণ্ডকারণ্যের বাঙালি

সিনেমা ওঁদের প্যাশন। প্রতিভা, মেধা, দক্ষতা আর নতুন নতুন ভাবনার আলিঙ্গনে বিচিত্র পথগামী ওঁরা। কেউ পূর্ণদৈর্ঘের ছবি নির্মাণে ব্যস্ত, কেউ তথ্যচিত্র বা ছোট ছবি। কখনও স্বাধীনভাবে, কখনও সামান্য বিনিয়োগ―স্বপ্নের কারিগররা ব্যস্ত তাঁদের নিজের ভুবনে। এইসব সিনেমা পরিচালক ও তাঁদের কাজ নিয়েই এই বিভাগ। এবার অমিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতা। কথা বলেছেন অজন্তা সিনহা । আজ তৃতীয় ও শেষ পর্ব।

এদেশে দর্শক কতটা প্রস্তুত তথ্যচিত্র দেখার ক্ষেত্রে ?

আমাদের দর্শক টিভির বাইরে তথ্যচিত্র সে ভাবে দেখার সুযোগ পান কোথায় ? তাঁদের তথ্যচিত্র দেখা ডিসকভারি, ন্যাট জিও, হিস্ট্রি চ্যানেল, এপিক ইত্যাদি চ্যানেলে সীমাবদ্ধ। ইদানীং হয়তো কিছু ওটিটি তথ্যচিত্র  দেখাচ্ছে। কিন্তু টিভি চ্যানেলগুলির জনপ্রিয়তা বলে, যত্ন নিয়ে বানালে তথ্যচিত্র মানুষ দেখে।

তথ্যচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় ?

তথ্যচিত্র কেন, যে কোনও শিল্প সৃষ্টিতেই কিছু প্রতিকূলতা থাকে। আমার তথ্যচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিকূলতাটাই সব থেকে বড় হয়েছে সবসময়। অধিকাংশ সরকারি ছবির বাজেট খুবই কম থাকে। ছবি করার সময় মনে হয়, আর একটু টাকা থাকলে আর একটু বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারতাম বা আরও একটু শুট করতে পারতাম। আর নিজের এত টাকা নেই যে একের পর এক ছবি করব নিজের টাকায়।

নতুন প্রজন্মের তথ্যচিত্র নির্মাতাদেরদের জন্য তোমার পরামর্শ কী কী ?

নতুন প্রজন্ম। এই প্রজন্মেরই একজন আমার পুত্র অরণ্য। আমার বয়েসি অনেকেই তরুণ প্রজন্মের প্রতি আস্থা রাখে না। কিন্তু আমি রাখি। কারণ আগামী দিনে এই দেশকে ও বিশ্বকে তারাই চালাবে। নতুন প্রজন্মের যারা  তথ্যচিত্র তৈরি করবে তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, পড়াশোনার পরিধি বাড়াক তারা। দেশের ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতিকে জানার চেষ্টা করুক। দেশের চিরন্তন অসাম্প্রদায়িক চরিত্রটা বোঝার চেষ্টা করুক। সব থেকে বড় কথা বই বা ইন্টারনেট থেকে বেরিয়ে এই ধরিত্রীর পথে-ঘাটে হাঁটতে হবে। মানুষের কাছাকাছি আসতে হবে। আর একটা কথা, প্রথাগত ছবি তৈরি থেকে বেরিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গেলে আগে প্রথাগত ছবি তৈরিটাকে আয়ত্তে আনতে হবে। যেটা আমি জানিই না, সেটাকে আমি ভাঙবো কী করে ! এটা শুধু তথ্যচিত্র নয়, সব শিল্পের জন্যই সত্যি।

নতুনদের মধ্যে আগ্রহই বা কতটা দেখতে পাও এক্ষেত্রে ?

নতুনদের মধ্যে সব বিষয়েই আগ্রহ আছে। অনেকেই অতি উচ্চমানের তথ্যচিত্র তৈরি করছে। ডিজিটাল যুগ আসার পর প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিচিত্র বিষয়ে ছবি করার দরজা খুলে গেছে। এখন নবীন প্রজন্মের সামনে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে তথ্যচিত্র দেখাতে আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগী হওয়া।

আগামী ছবির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানাও।

আগামী ছবি দণ্ডকারণ্যের বাঙালিদের নিয়ে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় সাবেক পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাস্তুহারা হয়ে চলে আসা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল শ্বাপদসঙ্কুল দণ্ডকারণ্যে। তারপর শুরু হয় বন কেটে বসত গড়ার কঠিন লড়াই। মাঝে আছে পশ্চিমবঙ্গের নির্লজ্জ রাজনীতিকদের ‘সৌজন্যে’ মরিচঝাঁপি পর্ব। বহু প্রাণের বিনিময়ে দণ্ডকারণ্যে বসত গড়া বাঙালি আজ সামাজিক, রাজনৈতিক  ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত।

ওড়িশার দণ্ডকারণ্য মানে মালকানগিরি, উমরকোট, ছত্তিশগড়ের দণ্ডকারণ্য পাখানজোড়–এখানকার বাঙালিদের সংগ্রাম ও প্রতিষ্ঠা নিয়ে ছবিটা করছি। এই দণ্ডকারণ্যে বসতি গড়া বাঙালিদের মধ্যে যাঁরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসে বন কেটে বসত গড়েছিল তাঁরা বেশির ভাগই প্রয়াত। যে ক’জন বেঁচে আছেন, তাঁদের মুখ থেকে লড়াইয়ের কাহিনি না শুনলে ও সেই কাহিনি ক্যামেরায় রেকর্ড না করলে বাঙালির ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হারিয়ে যাবে। তাই এই ছবিটি করছি। এর বেশির ভাগ অংশের শুটিং করে ফেলেছি ইতিমধ্যেই। অল্পই বাকি। এই ছবিতেও আমার সহ পরিচালক পুত্র অরণ্য। আমার সাম্প্রতিক সব ছবির মতো এই ছবিটি সম্পাদনাও করবে সে।                                       (সমাপ্ত)