এক দশক পর লক্ষ্মীছাড়া
জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ‘লক্ষ্মীছাড়া’-র সাম্প্রতিক নিবেদন প্রকাশিত হলো সম্প্রতি। বাংলা সঙ্গীত জগতের একঝাঁক তারকার উপস্থিতিতে মুক্তি পেল ‘এক দশক পর’। সাংবাদিক সম্মেলনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বিধুরা ধর।
“লক্ষীছাড়া নামটা তৈরি হয়েছিল একটা ছবির গানের জন্য। ছবিটিতে ‘পড়াশোনায় জলাঞ্জলি…’ গানটা তৈরি করি আমি ও সলিল চৌধুরীর ছেলে সঞ্জয় চৌধুরী। ছবিটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু পরে সেটাই একটা ব্যান্ড হয়ে গেল…”–জানালেন দেবজ্যোতি মিশ্র। তারপরই আর একটু আবেগের সঙ্গে তিনি বললেন, “১৯৯৯ সাল থেকে পথ চলা শুরু ‘লক্ষ্মীছাড়া’ ব্যান্ডের। ওদের গান আমি খুবই পছন্দ করি। পছন্দ করি ওদের মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট। বেশ কিছু ভালো রক গান তৈরি করেছে ওরা। আমরা করেছিলাম ‘আবার বছর কুড়ি পরে…'(মহীনের ঘোড়াগুলি)। আর আজ দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে নানা টানাপোড়েনেও সেই চলা বজায় রেখে, দীর্ঘ একদশক পর ‘এক দশক পর’ শিরোনামে তাদের ষষ্ঠ অ্যালবাম প্রকাশ করল ‘লক্ষ্মীছাড়া’। এটা সত্যিই একটা স্মরণীয় ঘটনা !”
সাদার্ন এভিনিউ-এর চ্যাপ্টার ২-তে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ পেল লক্ষীছাড়ার ৪টি রক গান সম্বলিত মিউজিক অ্যালবাম ‘এক দশক পর’। অ্যালবামে যে গানগুলি রয়েছে–ঘেঁটে যাচ্ছে সব, এখানে বিজ্ঞাপন মারিবেন না, পদবী ও উপহার। এদিনের অনুষ্ঠানে অ্যালবামের প্রথম গান ‘ঘেঁটে যাচ্ছে সব’-এর মিউজিক ভিডিওটিরও আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটল। দেখানোও হলো। ভিডিওটি তৈরি করেছেন শান ভট্টাচার্য। মিক্সিং শ্রীরূপ চ্যাটার্জি। মাস্টারিং করেছেন শমী চ্যাটার্জি। এক দশক পর এই প্রথম–নতুন লাইন-আপে অ্যালবামের গানগুলি লিখেছেন অনির্বান বব মজুমদার।
ব্যান্ডের সদস্যরা হলেন রাজীব মিত্র (কন্ঠ), গৌরব চ্যাটার্জি ওরফে গাবু( ড্রামস ও কন্ঠ), দেবাদিত্য চৌধুরী (কী-বোর্ড), সকেত ভট্টাচার্য ওরফে পাংকু (বাস গীটার/এদিন অনুপস্থিত ছিলেন) বোধিসত্ত্ব ঘোষ (গীটার ও কন্ঠ), জন পল (গীটার ও কন্ঠ)। সকলের উপস্থিতিতে কসমিক হারমনি থেকে প্রকাশিত হলো ‘এক দশক পর’। অনুষ্ঠানে সংগীত জগতের বহু বিশিষ্ট মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯৯-এর শুরুতে বিভিন্ন কলেজ সোশ্যাল, হোটেল ও পাবে গান গাইতে শুরু করে তারা। ২০০১-এ তাদের প্রথম অ্যালবাম মুক্তি পায়। ‘কেয়ার করি না’, ‘শুধু চাই তোমায়’ প্রবল জনপ্রিয়তা পায়। ২০০৩-এ তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘জীবন চাইছে আরো বেশি’, ২০০৫-এ তৃতীয় অ্যালবাম ‘একা’-র মাধ্যমে বাংলা ব্যান্ডের দুনিয়ায় পাকাপাকি জায়গা করে নেয় ‘লক্ষ্মীছাড়া’। মাঝে ২০১২-য় ‘কেমন আছো শহর’। তার এক দশক পর এই নতুন অ্যালবাম।
ব্যান্ডের অগণিত ভক্তের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দু’বছরের পরিকল্পনার ফসল আজকের এই নতুন অ্যালবাম ‘এক দশক পর’। সিঙ্গলস-এর সময় দাঁড়িয়েও একটা গোটা অ্যালবামের প্রকাশের পিছনের ইতিবৃত্ত জানালেন গৌরব ওরফে গাবু। তাঁর কথায়, “আমরাও প্রথমে ভেবেছিলাম সিঙ্গলস-ই বানাবো। কিন্তু যখন ৪টে গান পরপর শুনলাম, তখনই মত বদলালাম। এই গানগুলো আগেই আমরা নানা কনসার্টে গেয়েছি। গানগুলো শুনে অনেকেই বাজারে সেগুলো না পাওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁরা তাঁদের প্লে-লিস্টে গানগুলো রাখতে চাওয়ারও আবদার করেন। এই চারটে গান একত্রে রাখার পর যে ইমপ্যাক্ট শুনলাম, সেটা একটা গানে কিছুতেই আসবে না। তাই এই চারটে গানই একসঙ্গে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিই। যে কোনো মিউজিক অ্যাপে ‘এক দশক পর’ নাম দিয়ে খুঁজলে, চারটে গানই পর পর শোনা যাবে বলে জানান গৌরব। এছাড়া, কিছুদিন পর এই অ্যালবাম প্রকাশের জন্য একটি কনসার্টের আয়োজনও হতে চলেছে বলে জানালেন তিনি।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ‘লক্ষ্মীছাড়া’-কে উৎসাহিত করেন রূপঙ্কর, শিলাজিৎ মজুমদার, অনুপম রায়, প্রবুদ্ধ ব্যানার্জি, অভিজিৎ বর্মণ (পটা), সোমলতা আচার্য, উজ্জয়িনী মুখার্জি, ক্যাকটাস, ফকিরা, আত্মহত্যা, মিসিং লিংক ইন্ডিয়া, গ্যালাক্সি ডিজিটাল প্রাইভেট লিমিটেড ও সংগীত জগতের অন্যান্য বিশিষ্টজন। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এই ভাঁটার সময় অ্যালবাম প্রকাশ করার মতো সাহস দেখাবার জন্য প্রত্যেকেই ‘লক্ষ্মীছাড়া’-কে সাধুবাদ জানান। “এই অ্যালবাম প্রকাশ থেকেই আমরা শিল্পীরাও এবার ব্যক্তিগত অ্যালবাম প্রকাশের সাহস দেখাতে পারবো”–জানালেন সংগীতশিল্পী রূপঙ্কর। “বাংলা গানের দোলাচলের সময় সব শিল্পীকেই যুদ্ধ করতে হচ্ছে ও হবে। এর মধ্যেও ‘লক্ষ্মীছাড়া’ অ্যালবাম প্রকাশ করার যে চ্যালেঞ্জটা নিল, তার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতেই হয়”,–বললেন পটা। তিনি সবাইকে অ্যালবামটি কেনার অনুরোধও করেন, যাতে শিল্পীরা পরবর্তী ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত হন ও প্রাণিত হন। তাতে আখেরে লাভবান হবে সমগ্র সংগীত জগৎ।