গাঙ্গুবাঈ বা ওই ফ্লেভারের চরিত্র করতে ইচ্ছে করে
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ স্বীকৃতি মজুমদার। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন অজন্তা চৌধুরী। দুটি পর্বে প্রকাশিতব্য সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ।

‘মেয়েবেলা’-তে অভিনয়ের সৌজন্যেই রূপা গাঙ্গুলির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হলো। কেমন সেই অনুভূতি ?
◾রূপাদির সঙ্গে কাজ করার আগে একটু ভয় তো ছিলই। অত নামী ও সিনিয়র একজন অভিনেত্রী। যেটা প্রথমেই মনে হয়েছিল, কী ডিগনিফায়েড পার্সোনালিটি! কাজ করতে গিয়ে দেখলাম খুব মিষ্টি স্বভাবের একজন মানুষ আর ভীষণ বুঝদার। হয়তো আমি কোনও সময় লাইটের বাইরে চলে গেছি বা লাইটটা ঢেকে দাঁড়িয়ে আছি–বলতেন,”বাবু, তুই লাইটের বাইরে চলে গেছিস, এভাবে দাঁড়া।” এছাড়াও সিনটা বলে দেওয়া। সব মিলিয়ে খুবই ভালো অভিজ্ঞতা।
এই ধারাবাহিকে তোমার বিপরীতে ছিল অর্পণ ঘোষাল। অর্পণের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও একটু বলো।
◾ অর্পণ খুব ভালো অভিনেতা। ও থিয়েটারও করে। ওয়েব সিরিজও করেছে। খুব নলেজেবেল একজন মানুষ। ওর থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমি। শিখব বলে শিখিনি, কাজ করতে করতে শিখেছি। তাছাড়া, আমাদের ওয়েভলেন্থে এমন মিল হয়েছিল যে জোর করে কোনও কিছু করতে হতো না। সবটাই খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হতো। তাই সো কল্ড প্রেমিক-প্রেমিকা না হওয়া সত্বেও (গল্পে প্রেম দেখানই হয়নি প্রায়) আমাদের জুটিটা এত হিট। ওর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও খুব ভালো।


মাত্র পাঁচমাসের মধ্যে ‘মেয়েবেলা’ বন্ধের কারণটা ঠিক কি বলে মনে করো তুমি ?
◾ আমার মনে হয়, সিরিয়াল চলা বা না চলার একটাই কারণ হতে পারে, সেটা হচ্ছে টিআরপি। মফস্বলও টিআরপি দেয়। শহরের দর্শকও টিআরপি দেয়। ‘মেয়েবেলা’ যে টোনের সিরিয়াল ছিল, আমার মনে হয়, শহরের দর্শকই এর গল্পের সঙ্গে বেশি কানেক্ট করতে পারছিল। আমরা শহরের কয়েকটা জায়গায় সার্ভে করতে গিয়েছিলাম। সেখানে ৪০ জন মহিলার মধ্যে ভোটিং নেওয়া হয়েছিল–কারা কারা, কোন মাধ্যমে সিরিয়ালটা দেখেন ! ৪০ জনের মধ্যে ৩৫ জনই বলেছিলেন হটস্টারে দেখেন। কারণটা কী? অধিকাংশই বলেছেন, চাকরি করে বাড়ি ফিরে তাঁদের সিরিয়াল দেখার সময় হয় রাত্রিবেলা। সুতরাং, হটস্টার ছাড়া গতি নেই। হটস্টার অর্থাৎ ওটিটি স্ট্রিমিং। এর রেটিং টিভির টিআরপি রেটিং-এ কাউন্ট করা হয় না। এই কারণেই, ধারাবাহিকের মান যথেষ্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও বন্ধ হয়ে গেল।

রূপা গাঙ্গুলি সিরিয়াল ছেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে যে যুক্তিগুলি দিয়েছেন, তুমি কী তার সঙ্গে একমত?
◾উনি যখন বলেছেন, “আমি এইজন্য এটা করব না”–তার নিশ্চয়ই কোনও কারণ ছিল। নাহলে, একটা ভালো প্রোজেক্ট উনি কেন ছেড়ে দেবেন ? উনি নিশ্চয়ই কিছু ভেবে জয়েন করেছিলেন, যেটা ওঁর মতে হয়নি। আর উনি কোন মুহূর্তে ছাড়বেন বা আর একটু সময় নিয়ে বিষয়টা দেখবেন–সেটাও ওঁর সিদ্ধান্ত। প্রত্যেক মানুষেরই তো নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকে। উনি যতদিন কাজটা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, করেছেন। যখন ভালো লাগেনি, ছেড়ে দিয়েছেন। পছন্দ-অপছন্দ তো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, তাই না?
এর আগে ‘খেলাঘর’ সিরিয়ালে তুমি লিড রোলে ছিলে, ‘মেয়েবেলা’-তেও তাই। দর্শকদের কাছে আজ খুবই পরিচিত তুমি। রাস্তাঘাটে এই স্টারডমটা কেমন উপভোগ কর?
◾ সত্যি কথা বলতে কী, আমাকে কেউ চিনতে পারলে, আমার খুব লজ্জা লাগে। ভালো তো লাগেই। ভালো লাগে বলেই তো লজ্জা পাই। যতটা সম্ভব মাস্ক পরে থাকি। তার মানে এটা নয় যে আমি নিজেকে বিরাট কিছু ভাবছি। আসলে কেউ যদি চেনার পর কথা বলতে আসেন, আরও লজ্জা লাগে। কিন্তু সেই লজ্জা পাওয়াটা আবার আমি দেখাতেও চাই না। মা অনেক সময় বলে, “দেখ, তোকে চিনতে পেরেছে।” যেন, মা-ই বেশি এক্সাইটেড। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি চিনতে পেরে বলে, “তুমি এই সিরিয়ালটা করছ না? ওই সিরিয়ালটা করছ না?” এই যে ভালবেসে মনে রাখা, এটা অবশ্যই একটা বিরাট প্রাপ্তি।



নায়িকা না অভিনেত্রী–কোনটা তোমার লক্ষ্য? অর্থাৎ সব ধরণের চরিত্রেই অভিনয় করার ইচ্ছে আছে কী?
◾ এই মূহুর্তে নায়িকা চরিত্রেই অভিনয় করতে চাই।
তোমার পরবর্তী প্রোজেক্ট কি ?
◾ মেগা থেকে কয়েক মাসের জন্য বিরতি নিয়েছি। সবাইকে বলেও রেখেছি, কয়েকটা মাস একটু অবসর চাই। মাঝে অবশ্য কয়েকটা খুচখাচ কাজ আছে, সেগুলো চলতেই থাকবে। বিরতি নেওয়ার একটা কারণ কী, বলো তো? দর্শক যখন একটা চরিত্রকে খুব ভালবেসে ফেলে, ওটাকেই ধরে বসে থাকে। পুরনো সিরিয়ালের চরিত্রটা কী ভালো ছিল ! এটা অন্যরকম–এই ধরনের তুলনামূলক আলোচনা চলতেই থাকে। নতুনটাকে একসেপ্ট করতে করতে পারে না। তাই দর্শক যতদিন না পুরনো চরিত্রটা ভুলছে, ততদিন না হয় একটু বিরতি থাক।

স্বপ্নের চরিত্র?
গুন্ডার চরিত্রে অভিনয় করার খুব ইচ্ছে আমার। গাঙ্গুবাঈ বা ওই ফ্লেভারের চরিত্র করতে ইচ্ছে করে, যাতে আমি নিজেকেও একটু এক্সপ্লোর করতে পারি। যেরকম আমি নই, সেরকম চরিত্র প্লে করতে পারলে একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতাও হবে, তাই না?

মুম্বাইতে কাজ করার ইচ্ছে আছে ?
◾কাজ করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু সেটল করার ইচ্ছে নেই। বাংলাতে থেকেই কাজ করতে চাই। এখন একটা ট্রেন্ড হয়েছে, যিনি এখানে খুব ভালো কাজ করছেন, তা তিনি অভিনেতা, ডিরেক্টর, ডিওপি, মিউজিক ডিরেক্টর–যেটাই হন না কেন, মুম্বাই চলে যাচ্ছেন। মুম্বাই নিঃসন্দেহে কাজের ফিল্ড হিসেবে অনেক বড়। ন্যাচারালি স্কোপও অনেক বেশি। প্রচারও বেশি। সুতরাং সবাই সেখানে কাজ করতে ইচ্ছুক হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে সব ভালোরাই যদি মুম্বাই চলে যান তবে টলিউডের কি হবে ?!