বোহেমিয়ান শিল্পী পাপিয়ার বোহেমিয়ান দুর্গা ২০২২
তিনি বাউল। তিনি আদ্যন্ত একজন বোহেমিয়ান শিল্পী। শিল্পী পাপিয়া ঘোষালকে এভাবেই চেনেন তাঁর পরিচিত বা ঘনিষ্ঠজন। সারা পৃথিবী পাপিয়ার কাজের ক্ষেত্র। খোলা আকাশ তাঁর মনের আশ্রয়। আপাতত তিনি চেক রিপাবলিকের প্রাগ শহরের বাসিন্দা। সেখানেই সম্পূর্ণ একার উদ্যোগে স্থাপনা করেছেন প্রথম সার্বজনীন পুজো। শুরুয়াত আট বছর আগে। এদেশে তার আগে মায়ের মূর্তি কখনও স্থাপিত হয়নি। বাউলসম্রাট পূর্নদাস বাউল পাপিয়ার প্রথম দুর্গাপুজোয় প্রাগে আসেন (২০১৪ সালে)। তিনি তাঁর সুযোগ্য শিষ্যা পাপিয়াকে আশীর্বাদ করেন মূর্তি স্থাপনা করে পুজো করার জন্য।
ঐতিহাসিক চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ শহরে তিথি ও বিধি মেনেই ষষ্ঠীর বোধন থেকে শুরু করে দশমীর সিঁদুর খেলাও চলে। ২০২২-এর পুজোতেও এর অন্যথা হয়নি। পূজার পৌরহিত্য করেন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ যশ ভগৎ। উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক ভারতের রাষ্ট্রদূত হেমন্ত ও সীমা কোটাওয়াল, চেক মেয়র যুজানা বেইবাদভা ও মিখেলা বর্ণদোভা। পাপিয়ার পুজোর বিশেষত্ব, মায়ের পুজোয় মায়েরাই সব কাজ করেন ! এই মহিলাদের কেউ বিদেশী, কেউ বা ভারতীয় চেক বাসিন্দা। পুজোর আয়োজন ছিল পাপিয়ার আখড়া পাড়া ঐতিহাসিক জব্রালাভে। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল অঙ্গশক্তির ওপর প্রদর্শনী, সিনেমা, ঢাক-ঢোল,
নাচ-গান-বাজনা ও মায়ের সাত্ত্বিক খিচুড়ি ভোগ। প্রদর্শনী রাঙিয়ে তোলেন প্রখ্যাত শিল্পীরা–ভারতের প্রকাশ কর্মকার, বার্লিনের হেলমুট ঠোমা, লন্ডনের মার্টিন ব্র্যাডলি, চেক শিল্পী ইয়ান মায়ের, ইয়ান স্ট্রুপ, মেক্সিকোর এ মারিয়া, ফটোগ্রাফার সৌরভ দত্ত প্রমুখ এবং পাপিয়া ঘোষাল স্বয়ং। প্রসঙ্গত, পাপিয়ার দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ ধর্ম নিরপেক্ষ ও আক্ষরিক অর্থেই আন্তর্জাতিক। এই পুজোয় ইরান, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশি মুসলমানেরাও যোগদান করেন ইওরোপিয়ান খ্রিস্টান ও হিন্দুদের পাশাপাশি।
মা দুর্গার উপাসনার মাধ্যমে ভারতের প্রাচীন সভ্যতায় নারীশক্তির প্রতি প্রেম, পূজা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উপমা এই দেশে তুলে ধরেছেন আমাদের বঙ্গললনা। পাপিয়া চান সারা বিশ্ব জানুক যে এই চিরাচরিত প্রথায় কি ভাবে আজও ভারতীয় পুরুষ ও দেবগণ দেবীশক্তির আরাধনা করে চলেছেন। পাপিয়ার দুর্গা আড়ম্বরহীন, অনার্য, সহজিয়া। এক সাধারণ নারী, যিনি নারীশক্তির প্রতীক। তাঁর সর্বদেহে অলংকার, তাঁর ভালোবাসার সাপ। তাঁর হাতে অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। তাঁর হাতে শুধুই আশীর্বাদ। পাপিয়া মারণঅস্ত্রে বিশ্বাসী নন। তাই মা দুর্গা ও বাকি দেবদেবীর হাতে শুধুই বাদ্যযন্ত্র। পাপিয়া দাস বাউল মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, বাউলশক্তিতেই অশুভ শক্তির পরাজয় সম্ভব।