অতীব সুস্বাদু সাস-বহুর আচার
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
সচরাচর সৎ ও বিবেচক মানুষ হিসেবেই আমরা পর্দায় দেখি এনএসডি-র এই প্রাক্তনীকে। বিশেষত, ছোট পর্দায়। দীর্ঘ কয়েক বছর সোনি টিভির অত্যন্ত জনপ্রিয় শো ‘ক্রাইম পেট্রোল’ হোস্ট করেছেন তিনি। পাঠক স্মরণ করুন ছোটপর্দার জনপ্রিয়তম ধারাবাহিক ‘বালিকা বধূ’-র ভৈরোঁর কথা। মেগার সবচেয়ে স্তিতধী ও বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। অনুপ সোনি, ভারতীয় টেলিভিশনের খুব চেনা এক মুখ। সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে, টিভিতেই অনুপের সেরা অভিনয় দেখেছে দর্শক। এহেন অনুপ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে, একেবারে বিপরীত এক অবতারে।
দিলীপ শ্রীবাস্তব (অনুপ সোনি) নামের এই মানুষটি তার প্রাক্তন স্ত্রী সুমনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছেলেমেয়েকে (জুহি ও রিশু) নিজের কাছে রেখেছে। স্বভাবের দিক থেকে পুরুষতান্ত্রিক দিলীপ ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছে মনীষাকে (অঞ্জনা সুখানি)। তাদের একটি ছেলেও হয়েছে বিয়ের পর, ছেলের নাম ভিভান। জুহি ও রিশু কেমন থাকতে পারে তাদের সৎ মায়ের কাছে, এটা ভেবে অস্থির হয় সুমন ! ওদের ছেড়ে থাকা প্রচন্ড যন্ত্রনাময় তার কাছে। কিন্তু দিলীপ আইনের বেড়াজালে আটকে রেখেছে তাকে। ছেলেমেয়ে মানুষ করার মতো টাকা নেই সুমনের কাছে।
সম্প্রতি জি ফাইভে শুরু হয়েছে ‘সাস বহু আচার প্রাইভেট লিমিটেড’ শিরোনামের একেবারে ভিন্নস্বাদের এক সিরিজ। ওয়েবসিরিজে ক্রাইম আর সেক্স দেখে যাঁরা ক্লান্ত, তাঁরা অবশ্যই দেখবেন এই সাস-বহুর লড়াইয়ের দুরন্ত কাহিনি। ভাবার বিষয়, সাস বনাম বহু নয়, সাস-বহুর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই এখানে। সুমনকে সমর্থন জানাতে গিয়ে নিজের ছেলের বিরদ্ধে যেতে পিছপা হন না তার সাসুমা। দুই নারীর সমাজ-সংসারের এই লড়াইয়ের উল্টোদিকে একজনের ছেলে, আর একজনের প্রাক্তন স্বামী। এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন, গল্পের মূল কেন্দ্রে দিলীপের প্রথম স্ত্রী সুমন শ্রীবাস্তব (অম্রুতা সুভাষ) ও সুমনের সাসুমা (যামিনী দাস)। এছাড়াও আছে সুমনের ব্যবসার পার্টনার শুক্লাজি (আনন্দেশ্বর দ্বিবেদী)।
এবার তাহলে সুমনের ব্যবসার কথা জানা যাক। নামেই মালুম আচারের ব্যবসা করছে সুমন। কিন্তু আজকের ব্র্যান্ড জমানায় কে নেবে সুমনের ঘরে তৈরি আচার ? অতএব অসম যুদ্ধ ! তার মধ্যে দিবারাত্রি দিলীপের তাড়না। দিল্লীর চাঁদনী চক এলাকাকে ঘিরে পল্লবিত এই সিরিজের গল্প। আপাতত ব্যবসা দাঁড় করিয়ে পর্যাপ্ত টাকা রোজগার করতে চায় সুমন। কেন দিলীপ সুমনের সঙ্গে সংসার করতে পারলো না, সেটাও এক প্রশ্ন। অন্যদিকে মনীষা দুই সন্তানের বাবা এক পুরুষকে বিয়ে করে কতটা সুখী ? জুহি, রিশু বা ভিভানের মধ্যেই কোন রসায়ন চলছে ? এসব নানা টক-ঝাল-মিষ্টি ঘটনা প্রবাহে সুস্বাদু হয়ে উঠেছে সাস-বহুর আচার। রিয়েল লাইফ লোকেশনে রিয়েল লাইফ স্টোরি–লিখেছেন অভিষেক শ্রীবাস্তব ও স্বর্ণদীপ বিশ্বাস। পরিচালনা অপূর্ব সিং কারকি। অভিনয়ে আরও আছেন মনু বিস্ত (জুহি), নিখিল চাওলা (রিশু), স্রেয়াংশ কৌরব (ভিভান), নিশা জিন্দাল, প্রিয়া গুপ্তা প্রমুখ।
বিনোদনপ্রেমী দর্শকের কাছে এক নারীর জীবন সংগ্রাম শুনলেই কেমন যেন কাঠখোট্টা মনে হয় বিষয়টাকে। এ সিরিজ কিন্তু মোটেই তেমন নয়। কমেডির ছোঁয়ায় প্রতিটি পর্বকেই উপভোগ্য করে তুলেছেন পরিচালক। নীলোৎপল বোরার মিউজিক রসগ্রাহী। অর্জুন কুক্রেতির সিনেমাটোগ্রাফি কাহিনির সঙ্গে মানানসই। আপাতত ৬ পর্বের প্রথম সিজন দেখানো হয়েছে। পর্বগুলোর সময়সীমা ২০-৪৫ মিনিট।