এদেশে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আইন কঠোর হোক
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। আজ বিশেষ সাক্ষাৎকারে শ্রুতি দাস। কথা বলেছেন সোমনাথ লাহা।
‘ত্রিনয়নী’-র পরে একটা দীর্ঘ বিরতি নিয়ে জি বাংলার ‘রাঙা বউ’-তে ফিরলে। এই ধারাবাহিকের কোন বিষয়টা তোমাকে বেশি আকর্ষণ করেছিল, যে কারণে এই কাজটি করতে আগ্রহী হলে তুমি ?
প্রথম কথা হচ্ছে জি বাংলা। দ্বিতীয় কথা হলো, স্বর্ণস্যারের (পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার) পরিচালনা। আর তৃতীয় বিষয় হলো, আমার প্রথম হিরোর (গৌরব রায়চৌধুরী) সঙ্গে কামব্যাক। এইটা ভেবেই আমি এককথায় এই ধারাবাহিকে কাজ করতে রাজি হয়ে গিয়েছি।
সেটা কি একটু চাপের কারণ নয় ? তোমাদের জুটি তো ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দর্শকের প্রত্যাশা তো অনেকটাই বাড়বে!
চাপই তো। অনেক বড় দায়িত্ব। গুরুদায়িত্ব যাকে বলে (হাসি)। চ্যানেলের মানুষজন এতটা ভরসা করে একটা জুটিকে রিপিট করেছেন। একটা জুটি রিপিট করা মানে ভীষণ বড় একটা দায়িত্ব। পুরোনো হিরোর সঙ্গে আবার কাজ করছি। তার মানে নিশ্চয়ই আমাদের আগের সেই কাজটা কোথাও না কোথাও গিয়ে কোনও একটা জায়গায় ছাপ রেখেছিল। তবেই তাঁরা কিন্তু সেই ভরসার জায়গাটা দিয়েছেন।
শ্রুতির সঙ্গে ‘রাঙা বউ’-এর ‘পাখি’ চরিত্রটির কতখানি মিল রয়েছে? অমিলই বা কোথায়?
শ্রুতির সঙ্গে পাখির মিল হচ্ছে শ্রুতি খুব মুফট ! মানে মুখের উপর যা বলার, বলে দেয়। পাখিও তেমনই। কিন্তু দু’জনের কথা বলার ধরণটা আলাদা। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি–শ্রুতিকে যদি কেউ বলে, ‘তুই ওটা চুরি করলি কেন ? আমি তো দেখলাম তুই ওটা চুরি করলি’ ! শ্রুতি হলে বলবে, ‘না। ওটা আমি চুরি করিনি। তুই ওটা চুরি করে আমার উপর দোষটা চাপাচ্ছিস। স্বীকার করে নে’। পাখি হলে বলবে, ‘আমি দেখলাম দূর থেকে, ব্যাগটা কে খুলল, হ্যাঁ, আমি সব দেখেছি। দেখবে ?’–বলেই পাড়ার দু-তিনটে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে চলে এলো। তাদের বলবে, অ্যাই বল বল–হ্যাঁ আমি দেখেছি দিদি ওখান থেকে ওটা চুরি করল। পাখি false position-এ অন্যকে ফেলে দেয় ঠিকই, কিন্তু in a very innocent way-তে। সেটা শ্রুতি করে না। শ্রুতি hot tempered. এটা মুশকিল। কিন্তু শ্রুতিও একসময় পাখি ছিল। তাই বললাম প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে একটা করে পাখি আছে।
‘ত্রিনয়নী’-তেও তুমি গ্রাম্য মেয়ে। ‘রাঙা বউ’-তেও তাই। নয়নের (‘ত্রিনয়নী’-র চরিত্র) থেকে পাখি কোন জায়গায় আলাদা?
নয়নের দুঃখ হলে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ত। নয়নের জীবন ছিল পুরোপুরি অভিশপ্ত। সে ভবিষ্যত দেখতে পেত। লোককে বলে দিত, তোমার ছেলে কাল সাপে কাটা পড়ে মারা যাবে। সে তো একজন অভিশপ্ত মানুষ। তাঁর কাছে বেঁচে থাকাটাই একটা অসহনীয় ব্যাপার ছিল। পাখিকে কেউ যদি বলে তোর তো মা নেই, তুই আর কী করে বুঝবি ! তোকে তো দেখতে খারাপ, তুই আর কী বিয়ে করবি! ও জবাবে বলে–তুইও ওরকম ভাবিস বল, আমাকে দেখতে খারাপ, আমার বিয়ে হবে না ! না রে, আমি সাজাই তো–আমিও দেখবি খুব সুন্দর করে সাজব। এই যে আত্মবিশ্বাস, সেটাই কোথাও নয়নের ছিল না।
এখানে পাখি চরিত্রটিকে কুশের বাড়ির লোকজন তার গায়ের রঙের জন্য মেনে নিতে পারে না। একসময় তো নেটিজেনদের একাংশও তোমাকে তোমার গায়ের রং নিয়ে বিব্রত করেছে। তুমি সেই কটুক্তির প্রতিবাদ করে ট্রোলডও হয়েছ। এই বিষয়টা নিয়ে তুমি কি বলবে?
আমাদের দেশে যতদিন না বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে কঠোর আইন হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে। ওসব আমাকে আর ভাবায় না। আমাকে যে যা পারে বলুক, আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমি সোশ্যাল মিডিয়া দেখাই ছেড়ে দিয়েছি। আমি চাই এদেশে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আইন আরও কঠোর হোক।
‘রাঙা বউ’-তে কাজ করার আগে তুমি অনেকটা বিরতি নিয়েছিলে। এর ফলে কাজটা করতে তোমার কি অনেকটাই সুবিধা হয়েছে?
ভীষণ সুবিধা হয়েছে। প্রচুর গ্রুম করেছি নিজেকে। চরিত্র নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি। ডায়েট থেকে শুরু করে, এক্সারসাইজ করা। ছবি দেখা, বই পড়া। স্বর্ণস্যারের কাছে ওয়ার্কশপ করা। গৌরবের সঙ্গে বসে ওয়ার্কশপ করা। বলতে পারো, অনেক কিছুই করেছি।
দর্শকের উদ্দেশ্যে কি বলবে?
দর্শকদের একটা কথাই বলব, আমি জানি সবাই সমানভাবে সবাইকে দেখেন না। আমাকে ভালোবাসার মানুষ যেমন আছেন, আমাকে পছন্দ করেন না–এমন মানুষও আছেন। তবে ভালোবাসার মানুষের সংখ্যা একটু বেশি। তাদের জন্যই ফিরে আসা ! আপনারা চেয়েছিলেন বলেই তো ফিরেছি। তাই আপনারা এইভাবেই পাশে থাকুন। ‘রাঙা বউ’ দেখুন। আর এটুকু কথা দিচ্ছি ‘রাঙা বউ’ অবশ্যই হিট করবে।