কামিয়ার কামব্যাক ‘নীরজা-এক নয়ি পেহচান’-এ
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। ভিন্নস্বাদের ধারাবাহিক ‘নীরজা-এক নয়ি পেহচান’ চলছে কালার্স চ্যানেলে। লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
হিন্দি ধারাবাহিকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী কামিয়া পাঞ্জাবি। একদা ‘বনু ম্যায় তেরি দুলহন’, ‘মর্যাদা : লেকিন কব তক?’, ‘অস্তিত্ব…এক প্রেম কাহানি’-র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে প্রশংসিত হয়েছে কামিয়ার সাবলীল অভিনয়। ছোটপর্দা থেকে বেশ কিছুদিন বিরতি নেওয়ার পর আবার টিভির পর্দায় স্বমহিমায় কামিয়া। এবার তিনি নিষিদ্ধপল্লির সর্বেসর্বা ‘দিদুন’ রূপে। সৌজন্যে কালার্স-এর নতুন ধারাবাহিক ‘নীরজা-এক নয়ি পেহচান’। সানসাইন প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এই ধারাবাহিকের পরিচালক সীমা শর্মা ও সুধীর শর্মা।
সন্ধ্যা নামলেই সুসজ্জিত হয়ে পথের ধারে এসে দাঁড়ায় ওরা। এটাই ওদের উপার্জনের পথ। ওরা যৌনকর্মী। সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ ওদের হীন দৃষ্টিতে দেখে। পারলে ছায়াও এড়িয়ে চলে। অথচ, রাতের অন্ধকারে, লোকচক্ষু এড়িয়ে এরাই আবার কামবাসনা পরিতৃপ্ত করতে ছুটে যায় ওখানেই। যদিও, এই নারীদের কেউই ইচ্ছে করে এই পেশায় আসেনি। কাউকে লোভ দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কেউ পেটের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে, এই পথে নেমে পড়েছেন। আর কে না জানে, এখানে একবার এলে ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। ওদের সন্তানরাও বিভিন্ন রকমভাবে সামাজিক হীনমন্যতার শিকার হয়।
মূলত সামাজিক কাহিনির এই ধারাবাহিকের প্রেক্ষাপট এশিয়ার বৃহত্তম রেড লাইট এরিয়া সোনাগাছি। কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত এই নিষিদ্ধপল্লির বাসিন্দা মা-মেয়ে, প্রতিমা ও নীরজাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে ধারাবাহিকের কাহিনি। নিষিদ্ধপল্লির বাসিন্দা হওয়া সত্বেও যাবতীয় নিয়মের বেড়াজাল এবং সামাজিক কুসংস্কারের উর্ধ্বে উঠে দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে এই দুই নারী নিজেদের নতুন পরিচয় তৈরি করার জন্য লড়াই করে চলেছে। নিজের ভাগ্যে এমনটা ঘটলেও, প্রতিমা চায় না, তার মেয়ে নীরজা এই পেশায় আসুক। সে মেয়েকে দিতে চায় এক নতুন পরিচয়। বলা বাহুল্য, প্রতিমা ও নীরজার এই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দিদুন। নিষিদ্ধপল্লিতে তার কথাই শেষ কথা। এমতাবস্থায় হঠাৎ করেই সম্ভ্রান্ত বাগচী পরিবারের ছেলে আবীর প্রেমে পড়ে নীরজার। নীরজারও ভালো লেগে যায় তাকে। কিন্তু এক পতিতার মেয়ে কী হতে পারবে ভদ্রঘরের বৌ! প্রতিমা কী নীরজাকে দিতে পারবে নতুন পরিচয়? তাদের এহেন লড়াইয়ের ফলাফল কি হবে? উত্তর রয়েছে টিভির পর্দায়।
ধারাবাহিকে নীরজার চরিত্রে রয়েছেন আস্থা শর্মা। আবীরের ভূমিকায় রাজবীর সিং। প্রতিমার চরিত্রে রয়েছেন স্নেহা ওয়াঘ। অন্যান্য চরিত্রে বিভা ছিব্বার, আয়ুব খান, অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক রাওয়াত, পল্লবী মুখোপাধ্যায়, হিতেশ ত্যাগি প্রমুখ। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে, নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে কামিয়া বলেছেন, “আমি এখানে সোনাগাছির মহারানী দিদুনের চরিত্রে অভিনয় করছি। নীরজা ও তার মা প্রতিমার সঙ্গে দিদুনের সম্পর্কটা বেশ জটিল। চরিত্রটিতে একাধিক শেড রয়েছে। সেটাই আমাকে খুব আকর্ষণ করেছে।”
পাশাপাশি কামিয়া এটাও জানান, “ধারাবাহিকের নির্মাতারা এই চরিত্রটির জন্য আমার উপরে বিশ্বাস রাখায় আমি সন্মানিত বোধ করছি। এটা যেমন আমাকে ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে, তেমনই আমিও আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” হিন্দি টিভির এই প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী মনে করেন, যৌনকর্মীদেরও সম্মানের চোখে দেখা উচিত। তাঁর কথায়, আমরা আজও তাঁদের যেভাবে দেখি, সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া দরকার। এই ধারাবাহিকের হাত ধরেই সেটা ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে ‘দিদুন’ চরিত্রে অভিনয়ে ক্ষেত্রে তথাকথিত ধ্যানধারণা ভেঙেছেন কামিয়া। তিনি জানিয়েছেন, “নিষিদ্ধপল্লির মহিলা মাত্রই ধূমপান করেন, বিশেষ এক পশ্চারে বসেন, টাপোরির মতো কথা বলেন–এই ধারণাগুলো ভাঙতে চেয়েছি আমি। চরিত্রটিতে ক্ষমতা ও সূক্ষ্মতার মিশ্রণ থাকুক, এটাই ছিল আমার চাওয়া। তাই দিদুনের কথা বলা, হাঁটা-চলা, ওঠা-বসা–সবকিছুই নিজের মতো করে অনুশীলন করেছি।” কামিয়া আক্ষেপের সঙ্গে এও বলেছেন, “আমি ওঁদের ঘরে ঘরে গিয়ে দেখেছি, সেখানে টিমটিম করে একটা বাল্ব জ্বলছে। ঘরে উন্নয়ন ও প্রগতির ছায়ামাত্র নেই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি এমন সমস্যা যেন কারও জীবনে না আসে, যাতে বাধ্য হয়ে তাঁকে এই পথ বেছে নিতে হয়।”
প্রসঙ্গত, আস্থা বলেছেন, ” এই ধারাবাহিকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত। নীরজা এমনিতে আর পাঁচজন মেয়েদের মতোই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে এমন একটি জায়গার বাসিন্দা, যেটি তার আকাঙ্খার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হাল না ছাড়া মানসিকতাই তার একমাত্র অস্ত্র।” রাজবীরের কথায়, “আমার চরিত্র আবীর তার পরিবারের গর্ব। নিজের বাবার ব্যবসাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের অতীত থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে সে।” কালার্স চ্যানেলে ‘নীরজা-এক নয়ি পেহচান’ দেখান হচ্ছে প্রতি সোম থেকে রবি রাত ৮টা ৩০ মিনিটে।