‘কারাগার’এ দুরন্ত চঞ্চল
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। আজ ‘কারাগার’ নিয়ে লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
যদি বলি একটু ভিন্নস্বাদের ওয়েব সিরিজ প্রদর্শনে হইচই বাংলাদেশ আমাদের থেকে এগিয়ে, তাতে কারও আপত্তি করার কারণ নেই। এর আগে এই বিভাগেই লিখেছিলাম ‘সবরিনা’ নিয়ে, সেখানেও কাহিনি, প্রয়োগ, অভিনয়–সবক্ষেত্রেই এক চমকে যাওয়ার মতো কাজ দেখেছি। এবারে ‘কারাগার’ ! গত মাসেই হইচই অরিজিনালস-এর এই নিবেদন দেখানো শুরু হয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গেই বিপুল সাড়া ফেলে দিয়েছে। সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে মুখ্য ভূমিকায় চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়। যদিও, বাংলাদেশের অত্যন্ত শক্তিশালী এই অভিনেতার কাছে এটাই প্রত্যাশিত। পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শওকির সঙ্গে জুটিতে এর আগে আমরা হইচই বাংলাদেশেরই প্রযোজনা ‘তকদির’-এ ওঁর অভিনয় দেখেছি। ‘কারাগার’-এ ওঁদের চমৎকার বোঝাবুঝি আরও একবার দেখছেন হইচই দর্শক।
সংক্ষেপে কাহিনি এই, আকাশনগর জেলের একটি সেলে একজন বন্দিকে আবিষ্কার করে সেখানকার এক কর্মী। অথচ, সেলটি গত ৫০ বছর ধরে বন্ধ। এই আবিষ্কারের ফলে স্বাভাবিকভাবেই গণনায় সেলের অন্তর্ভুক্ত কয়েদির সংখ্যা একজন বেড়ে যায়। প্রথমে সেই কর্মীটিকে, এটা তার গণনার ভুল–একথা বলে সহকর্মীরা বুলি করে। তারপর মজার ছলেই তারা ওই সেলটির সামনে যায় এবং লোকটিকে দেখতে পায়। খবর পেয়ে জেলার ছুটে আসেন। গুনতির বাইরে বন্দিটি এলো কোথা থেকে ? ছেঁড়া ও অত্যন্ত ময়লা কাপড়চোপড় পরা একেবারে বিধ্বস্ত এই লোকটি আসলে কে? এই কয়েদির আচরণ ও কথাবার্তাও খুব রহস্যজনক। তার দাবি, সে মীরজাফরকে খুন করেছিল, সেই ট্রায়ালের জন্যই এই জেলে বন্দি হয়ে আছে সে। সে যা বলছে, তার সত্যতা মেনে নেওয়া অসম্ভব ! তাহলে কি সে একজন প্রতারক ?
এদিকে এই ঘটনার আগেই জেলের ভিতর কিছু অনৈতিক ও নিয়মবিরুদ্ধ ঘটনা ঘটে যাওয়া ও সে খবর ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়েন জেলার মহাশয়। পাশাপাশি জেলারের পরিবারেও রয়েছে বেশ কিছু জটিলতা। তাঁর ছেলে সম্ভবত কোনও অপরাধ করে জেলবন্দি। জেলারের স্ত্রী ছেলের জন্মদিনে কেক নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে, জেলার তীব্রভাবে বারণ করে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এমনিতেই তাঁর পক্ষে প্রতিকূল। মহিলাদের জেলে প্রবেশ আপাতত নিষিদ্ধ। কিন্তু জেলারের স্ত্রী অবুঝ ও নাছোড়বান্দা। এরই মধ্যে সেই রহস্যময় কয়েদির আবিষ্কার !
বাংলাদেশের পটভূমিতে তৈরি ‘কারাগার’ শুরু থেকেই এক রহস্যে-রোমাঞ্চে ভরা পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়। পর্বে পর্বে যা আরও দানা বাঁধে। আপাতত ৭টি পর্বে প্রথম সিজন দেখতে পাবেন, হইচইয়ের পর্দায়। চঞ্চল চৌধুরী ছাড়াও আছেন তাসনিয়া ফারিন, আফজল হোসেন, ইন্তেখাব দিনার, এফ এস নঈম, মহব্বত আলী, বিজরি বরখাতুল্লা, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, এ কে আজাদ সেতু প্রমুখ। গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নিয়ামতউল্লাহ মাসুম। টানটান কাহিনি ও তার চিত্রায়ন এতটাই রোমাঞ্চে ঠাসা, যে, দর্শক অন্যমনস্ক হওয়ার সুযোগ পান না। সিনেমাটোগ্রাফার বরকত হুসেন পলাশের ক্যামেরা চিত্রনাট্যকে নিপুণভাবে অনুসরণ করে। পরিবেশ সৃষ্টিতে এক অদ্ভুত আলো-আঁধারি মায়াজাল, যেখানে প্রতি পদক্ষেপে ক্যামেরা বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। আলোর ব্যবহারের মতোই শব্দের প্রয়োগে বিষয়ানুগ থাকেন পরিচালক। একই কথা বলতে হয় লোকেশনের ক্ষেত্রেও। নিঃসন্দেহে বড়ই যত্নে পর্দায় সৃষ্টি করা হয়েছে এই ‘কারাগার’। অসাধারণ এক টিম স্পিরিট চোখে পড়ে এই সিরিজের প্রতি পর্বে–পর্দার সামনে ও পিছনে, দুই ক্ষেত্রেই। যাঁরা এখনও পর্যন্ত দেখে উঠতে পারেননি, তাঁরা সত্বর দেখে ফেলুন ‘কারাগার’।