Monday, February 3, 2025
বিনোদনের ছোট বাক্স

ঝড় তুলতে প্রস্তুত ‘বালিঝড়’

আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। স্টার জলসায় শুরু হয়েছে ‘বালিঝড়’। লিখেছেন সোমনাথ লাহা

ছোটপর্দার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। এবার তিনি নিয়ে এসেছেন নতুন মেগা ‘বালিঝড়’। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবর্তিত এই মেগার কাহিনিতে রয়েছে ত্রিকোণ প্রেমের ছোঁয়া। সম্পর্কের সমীকরণগুলো বরাবরই গুছিয়ে বলেন লীনা। এক্ষেত্রেও যে তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি, তা ‘বালিঝড়’-এর প্রোমোতেই স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছিল। রীতিমতো মাল্টিস্টারার এই মেগার মূল চরিত্রে রয়েছেন তৃণা সাহা, ইন্দ্রাশিস রায় ও কৌশিক রায়। ম্যাজিক মোমেন্টস মোশন পিকচার্সের ব্যানারে নির্মিত এই ধারাবাহিকের কাহিনিকার, সৃজনশীল পরিচালক ও প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেন লীনা স্বয়ং। মেগার অপর প্রযোজক ও পরিচালক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়।

নামকরা রাজনৈতিক নেতা সমুদ্র সেন (ভরত কল)। সমুদ্র সেন পুনরায় নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হ‌ওয়ার পর পার্টিকর্মী ও জনসাধারণের সামনে ধন্যবাদ ‌জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছে। আর সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী, মেয়ে ঝোরার নাম। একই সঙ্গে সমুদ্র ভোটে জয়ী হ‌ওয়ার জন্য কৃতিত্ব দেয় দলের তরুণ তুর্কি মহার্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই মঞ্চ থেকেই ঝোরার সঙ্গে মহার্ঘ্যর বিয়ে দেওয়ার কথাও বলে সমুদ্র।

কিন্তু ঝোরা ভালোবাসে স্রোতকে। সমুদ্র সেনের এহেন বক্তব্য শোনার পর জনসাধারণের মধ্যে থাকা স্রোত চলে গেলে তার পিছনে দৌড়ে যায় ঝোরা। স্রোত তাকে বলে, “এই মুহূর্ত থেকে তোমার আর আমার জীবনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেল ঝোরা। এখন থেকে তুমি দূর আকাশের তারা। মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চোখ মেলে তোমায় দেখব।” ঝোরাও বলে, স্রোতকে ছাড়া অন্য কার‌ও কাছে কখনওই যাবে না সে। এদিকে মহার্ঘ্য‌ও ভালোবাসে ঝোরাকে। সমুদ্রর রাজনৈতিক ছকের আবহে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ঝোরা-স্রোত ও মহার্ঘ্যর সম্পর্কের সমীকরণ! সেই উত্তর মিলবে ধারাবাহিকের বিভিন্ন পর্বে।

মেগায় ঝোরা, স্রোত এবং মহার্ঘ্যর চরিত্রে রয়েছেন যথাক্রমে তৃণা সাহা, ইন্দ্রাশিস রায় ও কৌশিক রায়। প্রসঙ্গত, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের গত বছর শেষ হ‌ওয়া ধারাবাহিক ‘খড়কুটো’-তেও জুটি হিসেবে ছিলেন তৃণা ও কৌশিক। অন্যদিকে লীনার আরেক ধারাবাহিক ‘ধুলোকণা’-তে লালন চরিত্রে দেখা গিয়েছিল ইন্দ্রাশিসকে। এবার ‘বালিঝড়’-এ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে এই তিনজনকে। মেগায় অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন দুলাল লাহিড়ী, তথাগত মুখোপাধ্যায়, ময়না মুখোপাধ্যায়, প্রীতি বিশ্বাস, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও রয়েছে চমক। এই ধারাবাহিকের সৌজন্যে তিনবছর পর মেগায় ফিরছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। প্রোমোতে এক ঝলক দেখাও গিয়েছে তাঁকে। মাধবী ছাড়াও এই ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়‌ও। ধারাবাহিকটির পর্ব পরিচালক সুজিত পাইন।

সম্প্রতি মুভিটোন স্টুডিওতে পৌঁছে রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতোই অবস্থা হলো। গ্রিল লাগানো বিরাট ফটক পেরিয়ে এক নিমেষেই পৌঁছে গিয়েছিলাম সমুদ্র সেনের প্রকান্ড প্রাসাদসম বাড়ির সামনে। একঝলক দেখলে সেট বলে বোঝার উপায় নেই। বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে তৈরি পার্কে‌ই আয়োজন করা হয়েছিল ‘বালিঝড়’-এর সাংবাদিক সন্মেলনের। উপস্থিত ছিলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ধারাবাহিকের তিন কুশীলব–তৃণা সাহা, ইন্দ্রাশিস রায় ও কৌশিক রায়।

রাজনৈতিক পটভূমিতে আবর্তিত এই ধারাবাহিকটি প্রসঙ্গে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই প্রথম  রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোন‌ও গল্প লিখলাম। আমার ধারণা এই মুহূর্তে প্যান ইন্ডিয়াতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ঘিরে কোন‌ও ধারাবাহিক হচ্ছে না। হয়তো আগে হতে পারে বা ভবিষ্যতে কেউ ভাবতে পারেন। সেই হিসেবে এটা খুব চ্যালেঞ্জিং এবং বিতর্কিত হতে পারে। আমি কাউকেই আঘাত করতে চাই না। তাই বিষয়টিকে সংবেদনশীল ভাবেই পরিচালনা করছি। সেই কথা মাথায় রেখেই কাজটা করছি।”

মেগার গল্প নিয়ে লীনার অভিমত, “রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একজন ব্যক্তি মানুষের জীবনের যে সংকটগুলো উঠে আসে, তার সঙ্গে কিভাবে সে যুদ্ধ করে, নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যায় বা আদৌ যুদ্ধ করে জিততে পারে কিনা–এটা সেইরকমই একটা গল্প।” এই মেগার সুবাদে বহুদিন পর একসঙ্গে কাজ করছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়‌ ও মাধবী মুখোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে লীনার অভিমত, “ওঁরা সবসময় চান কাজ করতে। ওঁরা কাজ করার অপেক্ষায় ছিলেন। ওঁদের বেঁচে থাকার প্রধান লক্ষ্যটাই কাজ, সেটা আমরা বুঝে গেছি। আমার মনে হয় কাজের মধ্যে রাখতে পারলেই আমরা ওঁদের বাঁচিয়ে রাখতে পারব।”

ধারাবাহিকে নিজের চরিত্র সম্পর্কে তৃণা বলেন, “আমি শুটিং শুরু করে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, আমার চরিত্রের নাম ঝোরা। সেটা খুব ইন্টারেস্টিং। ঝোরা মানে ঝর্ণা। আমি নিজে কোন‌ওদিন শুনিনি এই নামটা। ঝোরা খুব প্র্যাক্টিক্যাল মেয়ে। খুব পরিণত ও বিচক্ষণ। ওর একটা লক্ষ্য আছে। ঝোরার দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। বাবার খুব প্রিয়, মাকে ভীষণ ভালোবাসে। কোন‌ও ভুলকে সমর্থন করে না। খুব বাস্তবমুখী একটা চরিত্র। আমার সঙ্গে মিল রয়েছে। স্রোতের সঙ্গে ঝোরা নিজের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে খুব সিরিয়াস। এরপর ওর জীবনে কি হবে সেটা জানতে গেলে ধারাবাহিকটা দেখতে হবে।” কৌশিক ও ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তৃণার জবাব, “কৌশিকদার সঙ্গে ‘খড়কুটো’-তে কাজ করার সময় দর্শক ভালোবেসে ‘সৌগুণ’ নাম দিয়েছিল। এবারেও কিছু একটা নাম দেবে। এখানে আমার সহ অভিনেতা আপাতত ইন্দ্রাশিস। আমি যখন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতাম, ইন্দ্রাশিস তখন হিরো ছিল। এখন আমি ওর বিপরীতে নায়িকা। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে ভালো অনুভূতি জাগায়।”

নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে কৌশিক জানান, “আমার আগের করা চরিত্র সৌজন্য-র থেকে মহার্ঘ্যকে আমার সার্বিকভাবে আলাদাই মনে হয়েছে। খুব স্মার্ট একটা চরিত্র। এই ধারাবাহিকে চরিত্রগুলোর আলাদা আলাদা dynamics রয়েছে। আমার ধারণা মহার্ঘ্য চরিত্রটিও এই গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। চরিত্রটা একটা পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্টের। সমুদ্র সেনের সঙ্গে সে রাজনৈতিক ও ইমোশনাল স্টেটাসগতভাবে  জড়িত।” বোঝাই যাচ্ছে, বাংলা মেগার দর্শক বেশ ভিন্নস্বাদের এক অভিজ্ঞতা পাবে কৌশিকের পর্বে পর্বে মহার্ঘ্য হয়ে ওঠার পথ ধরে।

ইন্দ্রাশিসের কথায়, “স্রোতের চরিত্রটা একদম আলাদা। এমনকী আমার নিজের থেকেও আলাদা। বয়সে-গুণে সবদিক থেকেই। আমি কলেজ জীবনে এরকম ছিলাম না। আমার কোন‌ও ভিশন ছিল না। কিন্তু স্রোত জানে কি করতে হবে। বাকিদের মতামত দেওয়ার জায়গায় সে থাকে। এখন সবে গল্পের শুরু। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ টেলিভিশন এমন একটা মাধ্যম যেখানে আমরা রোজ দর্শকদের সামনে আসতে পারি। সেটাই একটা আলাদা থ্রিল। সেই থ্রিলটা বজায় থাকাটাই ভালো।” ঠিকই। আগাম বলে দিলে সেই থ্রিল নষ্ট। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বাকি মেগার মতোই কতটা ঝড় তোলে এই ধারাবাহিক, সেটাই এখন দেখার। ‘বালিঝড়’ দেখান হচ্ছে স্টার জলসায়, সোম থেকে রবি প্রতিদিন সন্ধে ৬টায়।