থ্রিডি ভার্সানে আরও নান্দনিক ‘শকুন্তলম’
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। আজই মুক্তি পাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত ‘শকুন্তলম’। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
ছবির ফাইনাল প্রিন্ট দেখে নিজের উচ্ছ্বাস ঢেকে রাখতে পারেননি নায়িকা সামান্থা রুথ প্রভু। প্রসঙ্গ বহুচর্চিত ‘শকুন্তলম’ ! ইনস্টাগ্রামে এক লম্বা পোস্ট শেয়ার করে শকুন্তলা সামান্থা তাঁর ভক্তদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, “আপনারা দারুণ পছন্দ করবেন আমাদের এই অপূর্ব সুন্দর জগৎ!” বোঝাই যাচ্ছে, পর্দায় ‘শকুন্তলম’-এর অপরূপ কাব্যকথার যে নান্দনিক ক্যানভাস তৈরি করেছেন পরিচালক গুণশেখর, সামান্থা তার কথাই বলেছেন এখানে। আদতে মহাকবি কালীদাসের অনন্য সৃষ্টি ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ অবলম্বনে নির্মিত এই ছবি শুরু থেকেই ভারতের তামাম সিনেমাপ্রিয় দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। ক্রমশ কৌতূহলের পারদ হয়েছে উর্দ্ধমুখী।
গুণশেখরের কাজের তুমুল প্রশংসা করে, সামান্থা জানিয়েছেন ভারতের মহা কাব্যনাট্যগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’। তাকে পর্দায় কী সুন্দরভাবেই না উপস্থিত করেছেন আমাদের ছবির পরিচালক ! একদিকে তার দৃষ্টিনন্দন প্রকাশ, অন্যদিকে অভিনেতাদের চূড়ান্ত আবেগপূর্ণ নাটকীয় অভিব্যক্তি। সব মিলিয়ে দর্শককে এক অন্য ভুবনে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত এই ছবি। সামান্থার কথার রেশ ধরেই বলা যায়, প্রস্তুত দর্শকও। ‘শকুন্তলম’ শুরু থেকেই মিডিয়ার চর্চায়। মহান রাজা দুষ্মন্ত্য আর বনচারিনী শকুন্তলার এই অমর প্রেমকথা যুগ যুগ ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ নানা ভাষায়, নানা ব্যঞ্জনায় পড়ে আসছেন। এবার তা রঙে-রসে পর্দায় দৃশ্যমান। উৎসাহ তীব্র থেকে তীব্রতর তো হবেই।
তেলুগু ভাষায় নির্মিত এই ছবি তামিল, মালয়ালম, কন্নড় এবং হিন্দিতেও ডাবড ভার্সানে দেখতে পাবেন ভারতীয় দর্শক। আমরা যদি সম্পূর্ণভাবে হিন্দি ছবির দর্শকদের বিষয়েই কথা বলি, তাহলে বলতে হয় দক্ষিণী ছবির ডাবড ভার্সান দেখায় বহুদিন ধরেই অভ্যস্ত তাঁরা। গত কয়েক বছরে এই প্রবণতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ‘আর আর আর’ ঝড় তামাম ভারতীয় ছবির পটভূমি ঘিরেই যে আলোড়ন সৃষ্টি করে, তারপর এই জাতীয় ছবির বাজার যে আর একটু বিস্তৃত হবে, তাতে আর সন্দেহ কী ! ‘শকুন্তলম’ নিয়ে আলোচনা করতে গেলেও এই সমস্ত প্রেক্ষিতগুলিকেই সামনে রাখতে হবে। যেটা বলার, শুধু দক্ষিণী ছবির দর্শক নন, তামাম হিন্দি ছবির দর্শকও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ‘শকুন্তলম’ মুক্তির।
পরিচালক গুণশেখর নিজেই লিখেছেন এর চিত্রনাট্য। গুনা টিম ওয়ার্কস-এর ব্যানারে ‘শকুন্তলম’ প্রযোজনা করেছেন নীলিমা গুনা। কাহিনির কালোপযোগী কস্টিউম ও মেকআপে দারুণভাবে নজর কেড়ে নেবেন সামান্থা, তা আগাম বলে দেওয়া যায়। তাঁর কুসুমিত সৌন্দর্যকে চমৎকার ব্যবহার করেছেন গুণশেখর। অভিনয়েও নিশ্চয়ই কামাল করা হবে সামান্থার পারফরম্যান্স। তেলুগু ছবির এই সুপারস্টার ইতিমধ্যেই নানান ছবিতে নিজের বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। পাশাপাশি দুষ্মন্ত্যর চরিত্রে হ্যান্ডসাম দেব মোহনকেও চূড়ান্ত মানিয়েছে। তাঁরও ঝুলিতে গুণ ও প্রতিভার অভাব নেই। কস্টিউম-মেকআপে এবং অবশ্যই দাপুটে অভিনয়ে তিনিও রাজা দুষ্মন্ত্য রূপে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবেন, প্রত্যাশা সকলেরই।
ওঁরা ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন শচীন খেরেকর (মহর্ষি কন্ব), মোহন বাবু (মহর্ষি দুর্বাসা), অদিতি বালান (প্রিয়ংবদা), অনন্যা নগল্লা (অনসূয়া), প্রকাশ রাজ (সারং), গৌতমী (গৌতমী), মধু (মেনকা), কবীর বেদি (মহর্ষি কাশ্যপ), যীশু সেনগুপ্ত (দেবরাজ ইন্দ্র), কবীর দুহান সিং (অসুর রাজ), আল্লু আরহা (রাজপুত্র ভরত) এবং আরও অনেকে। এঁরা প্রত্যেকেই সর্ব ভারতীয় স্তরে খ্যাতিমান। এঁদের মাঝে বাংলার যিশু সেনগুপ্তের স্থান করে নেওয়ার ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে আমাদের গর্বিত করে। ‘শকুন্তলম’-এর সিনেমাটোগ্রাফার শেখর ভি জোসেফ। সম্পাদনা প্রবীণ পুদি। মিউজিক মণি শর্মা। ২০২২-এর নভেম্বরে মুক্তির জন্য প্রস্তুত ছিল ‘শকুন্তলম’। কিন্তু পরে এর মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যায়। কারণ, নির্মাতারা ছবিটিকে থ্রিডি ভার্সানে পরিবর্তিত করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে সেই থ্রিডি ভার্সান সহ আজই মুক্তি পাচ্ছে ‘শকুন্তলম’। নান্দনিকতায় অপরূপ ‘শকুন্তলম’ থ্রিডি ভার্সানে দেখা দর্শকদের জন্য কেমন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে, তা জানতে আর কয়েক ঘন্টা !!