Thursday, March 13, 2025
টলিউডলাইম-Light

দেবের রুক্মিণী এবার দ্রৌপদী

নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। ‘বিনোদিনী একটি নটির উপাখ্যান’-এর পর আবার দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্স-এর ব্যানারে রামকমল মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনা। এবার মহাভারতের ‘দ্রৌপদী’। লিখেছেন অজন্তা সিনহা

যুগে যুগেই বিনোদন ক্ষেত্রের সৃজনশীল মানুষজনকে আকর্ষিত করেছে মহাকাব্য ‘মহাভারত’ ! পর্বে পর্বে বিন্যস্ত এই পুরাণকথায় অসংখ্য চরিত্র, অজস্র ঘটনাবলী। সব মিলিয়ে ফিকশন নির্মাতাদের কাছে বিষয়টা যেন সাজিয়ে দেওয়া কনটেন্ট। একদিকে রাজনীতির কূটকচালি। অন্যদিকে নির্যাতিত, আপন অধিকার হতে বঞ্চিত, বিতাড়িত মানুষের জীবনের লড়াই। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অধিকারের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে এই মহাকাব্যে। উঠে এসেছে প্রচলিত রীতি আর মানুষের মনের চাওয়ার মধ্যে যে বৈষম্য, তার কথাও। বিশ্বের অসংখ্য ভাষায় অনূদিত, নতুন ব্যঞ্জনায় লিখিত হয়েছে ‘মহাভারত’। সারা বিশ্বের সিনেমা থেকে টিভি ধারাবাহিক–বিভিন্ন আঙ্গিকে ‘মহাভারত’ উঠে এসেছে পর্দায়। বলা বাহুল্য, এই বিস্তৃত সময়গাথাকে সেলুলয়েডের সীমারেখায় বেঁধে পর্দায় আনা খুব সহজ কাজ নয়। প্রচুর গবেষণা ও তত্বতালাশের প্রয়োজন ! সবাই সেটা করেন না বা পারেন না। তার থেকেই নানা বিতর্ক জন্ম নেয়। এটা ‘মহাভারত’-এর সম্পূর্ণ কাহিনি হোক বা কোনও এক বিশেষ চরিত্রকে কেন্দ্র করে নির্মাণ !

বাংলা সিনেমার মানচিত্রে সাম্প্রতিক ঘোষিত দেব প্রযোজিত ‘দ্রৌপদী’ কতটা সফল বা কতটা বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে, তা সময়ই বলতে পারবে। এই নিয়ে কোনও আগাম মন্তব্য এখনই করা উচিত নয়। টলিউড সুপারস্টার দেব প্রযোজক হিসেবে শুরু থেকেই সফল। আম বাঙালির নার্ভ কী চায়, সেটা ভালোই বোঝেন তিনি। এরই পাশাপাশি দেখা গিয়েছে, নিজের বিশ্বাসে স্থিরপ্রতিজ্ঞ দেব নিজের ছবিতে পরিচালক, অভিনেতা বা অন্যান্য বিষয় নির্বাচনে স্বীয় অনুভবকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বারবার। বিপক্ষ রাজনৈতিক বিশ্বাসের মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে ‘প্রজাপতি’ নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি কোনও নিন্দা-বিতর্ককে পাত্তা না দিয়ে, কতটা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, ছবির চূড়ান্ত সাফল্য বলে দেয় সে কথা। একইভাবে আশা করা যায়, ‘দ্রৌপদী’ নির্মাণের ক্ষেত্রেও সেই একই বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি, নির্দেশক রূপে পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়কে বেছে নিয়ে।

Images 4
দেবের রুক্মিণী এবার দ্রৌপদী 8

প্রসঙ্গত, ‘দ্রৌপদী’ এখানে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে নির্মিত হতে চলেছে। ‘মহাভারত’-এর ঘটনা প্রবাহে বর্ণিত দ্রৌপদীর যাপন বা অবস্থান নয়, এই ছবিতে আমরা দেখব, দ্রৌপদীর চোখে ‘মহাভারত’ ! কাশীরাম দাস লিখিত মহাকাব্য নয়, প্রখ্যাত লেখক প্রতিভা রায়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত ওড়িয়া উপন্যাস ‘যাজ্ঞসেনী’ অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে রুক্মিণী অভিনীত ‘দ্রৌপদী’। হ্যাঁ, ‘বিনোদিনী একটি নটির উপাখ্যান’-এর পর আরও একবার নাম ভূমিকায় দেবের প্রেয়সী রুক্মিণী। সংবাদ মাধ্যমকে দেব জানিয়েছেন ‘বিনোদিনী একটি নটির উপাখ্যান’-এর কাজ চলাকালীনই তিনি দ্রৌপদীকে বড় পর্দায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই ছবিতে পরিচালক রূপে রামকমলের কাজ তাঁর খুবই পছন্দ হওয়ার কারণেই ‘দ্রৌপদী’ পরিচালনার জন্যও তিনি রামকমলকেই ভেবেছেন। বিশেষ করে দেব রামকমলের ভিস্যুয়াল রিপ্রেজেনটেশন স্কিলের উল্লেখ করেন, যেটা এইরকম বড় ক্যানভাসের ছবির ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজন।

এছাড়াও দেবের কথায়, বিনোদিনীর চরিত্রে রুক্মিণীর পারফরম্যান্স দেখে তিনি অনুভব করেছেন, যথার্থ কারণেই রামকমল রুক্মিণীকে দ্রৌপদীর চরিত্রে কাস্ট করেছেন ! দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্স এবং প্রমোদ ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হবে বিশাল বাজেটের ‘দ্রৌপদী’। ইতিমধ্যেই কিঞ্চিৎ গুঞ্জন ও বিরুদ্ধ মতামতের মধ্যে ‘বিনোদিনী একটি নটির উপাখ্যান’-এ রুক্মিণীর নির্বাচন। টলিউড ও বাংলা বিনোদন মাধ্যম এখনও তাঁকে দেবের বান্ধবী রূপেই চিহ্নিত করে ! অভিনেত্রী হিসেবে তিনি পর্দায় যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল হলেও, স্বপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি যে কোনও কারণেই হোক। তাই রুক্মিণীর পক্ষে বিনোদিনীর পর দ্রৌপদী–আবারও একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ নিঃসন্দেহে!

উপন্যাসে বিষয়টি এভাবে আসে–মহাপ্রস্থানে যাওয়ার পথে দ্রৌপদী পড়ে গেলে, তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ভীম। যুধিষ্ঠির সেই সময় ভীমকে বলেন,  দ্রৌপদীর পতন তাঁর নিজের কর্মফল। আরও সঠিকভাবে বললে, যথেষ্ট অভিযোগের সুরও ছিল তখন যুধিষ্ঠিরের কণ্ঠে–পাঞ্চালি আমাদের পাঁচভাইকে সমানভাবে ভালোবাসেনি, শুধুমাত্র অর্জুনকেই ভালোবেসেছে। শেষে এই অপরাধে তাঁরা দ্রৌপদীকে ফেলে মহাপ্রস্থানের পথে এগিয়ে যান। এই অবস্থায় দাঁড়িয়েই দ্রৌপদী নিজের জীবনের বিষয়ে ভাবতে শুরু করেন। পুরো কাহিনি এরপর ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায়। জন্ম মুহূর্ত থেকে পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী হয়ে আসা, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে পাশাখেলার পণ্য হয়ে ওঠা–এইসবই দ্রৌপদীকে স্মৃতির এক চরম লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণার পর্যায়ে নিয়ে যায়। এই উপন্যাস আসলে কৃষ্ণকে ভেবে দ্রৌপদীর লেখা চিঠি, যেখানে নারী হিসেবে যে অপমান তাঁর আপনজন, অর্থাৎ স্বামীরাই করেছেন, তাঁকে পাশাখেলায় পণ্য করে তুলেছেন, তারই বিরুদ্ধে এক জ্বলন্ত প্রতিবাদ !

Images 72
দেবের রুক্মিণী এবার দ্রৌপদী 9

নিছক পুরাণকথা বা মহাকাব্য নয় এই ছবির বিষয়। এখানে, দ্রৌপদীর অন্তরকথা যেভাবেই বলা হোক, সে যে এক জ্বালামুখীর উন্মোচন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। নানা শেড থাকবে এই দ্রৌপদীর চরিত্রে ! অসামান্য ব্যক্তিত্বময়ী রূপে তো কবি ও সাহিত্যিকরা আগেই এঁকেছেন তাঁকে। প্রতিভা রায়ের ‘যাজ্ঞসেনী’ তারও অতিরিক্ত কিছু। এই দ্রৌপদী অনুভবের অজস্র রঙে বর্ণময়। অভিনয়ে একশ শতাংশ তাকে পর্দায় অভিব্যক্ত করা, যে কোনও অভিনেত্রীর পক্ষেই বড় চ্যালেঞ্জ। আবার এমন এক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটাও কেরিয়ারের ক্ষেত্রে বিরাট প্রাপ্তি। এইসব কিছুকে ভাবনায় রেখেই রুক্মিণী নিশ্চয়ই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন। আমরা তাঁকে শুভেচ্ছা নিশ্চয়ই জানাব। বাকি তাঁর নিজের প্রতিভা, মেধা, বোধ, ক্ষমতা ও নিরলস পরিশ্রম। পরিচালক হিসেবে রামকমল তাঁকে কতটা কাজে লাগিয়েছেন, সেটা দেখার অপেক্ষাও থাকবে অবশ্যই !