Thursday, March 13, 2025
ওয়েব-Wave

‘পিঁজরাপোল’-এ ব্যোমকেশ

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। ‘হ‌ইচ‌ই’-তে আবার হাজির ব্যোমকেশ। ওয়েব মাধ্যমে তার সত্য অন্বেষণের ৮ম পর্ব এবার। লিখেছেন সোমনাথ লাহা

একটি বাগানবাড়ি, নাম যার গোলাপ কলোনি। সেখানে বসবাসকারী চরিত্রগুলির প্রত্যেকেই বেশ রহস্যময়।  তাদের লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, তাদের কেউই খুব একটা সহজ সরল প্রকৃতির নয়। বরং প্রত্যেকেই অতীত জীবনে কোন‌ও না কোন‌ও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ তাদের ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। এহেন কলোনির যিনি মালিক, তিনি প্রাক্তন বিচারক নিশানাথ সেন। কাহিনি এইভাবে শুরু–কেউ নিশানাথকে ব্ল্যাকমেল করছে, এই অনুমান করে তিনি স্মরণাপন্ন হন সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর। যদিও সেই রহস্য উন্মোচনের আগেই বিচারক এবং কলোনির আর‌ও একজন খুন হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় এক রহস্যময় জটিল আবর্তের।

Chiriyakhana 1280
'পিঁজরাপোল'-এ ব্যোমকেশ 6

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা জনপ্রিয় ব্যোমকেশ কাহিনি ‘চিড়িয়াখানা’ অবলম্বনে এসভিএফের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হ‌ইচ‌ই’-তে হাজির ব্যোমকেশ, সিজন ৮। শিরোনাম ‘ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোল’। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে এই সিরিজের স্ট্রিমিং। নতুন এই সিজনে  জোড়া দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মাঠে নেমেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এবার ব্যোমকেশ সিরিজে সত্যান্বেষীর চরিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্বভার‌ও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। ‘সত্যান্বেষী’, ‘পথের কাঁটা’, ‘মাকড়সার রস’, ‘অর্থমনর্থম্‌’, ‘রক্তমুখী নীলা’, ‘রক্তের দাগ’, ‘মগ্নমৈনাক’ ও ‘চোরাবালি’–আগের সাতটি সিজনে চূড়ান্ত সফল অনির্বাণ। এক অর্থে শক্ত মাটির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁর অভিনীত ব্যোমকেশ সিরিজ। ফলে, এবারেও ব্যোমকেশ রূপী অনির্বাণকে ঘিরে দর্শকমহলে প্রত্যাশার পারদ যথেষ্ট উর্দ্ধমুখী।  

এই সিজনে রয়েছে আরও কিছু চমক। এবারে ব্যোমকেশের ছায়াসঙ্গী অজিতের চরিত্রে অভিনেতার পরিবর্তন ঘটেছে। পুরোনো সূত্র ধরে বলা যায়–হ‌ইচ‌ই-এর ব্যোমকেশ সিরিজে প্রথম তিনটি সিজনে অজিতের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুব্রত দত্ত। চতুর্থ সিজনে এসে সেই জায়গাটি নেন সুপ্রভাত দাস। সপ্তম সিজন পর্যন্ত অজিতের চরিত্রে তিনিই অভিনয় করেছিলেন। এবার অষ্টম সিজনে সেই চরিত্রে দেখা যাবে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়কে। তবে সত্যবতীর চরিত্রে রয়েছেন ঋদ্ধিমা ঘোষই। ‘ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোল’-এর পরিচালনায় রয়েছেন সুদীপ্ত রায়। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন প্রতীক দত্ত। আবহসংগীত পরিচালনায় শুভদীপ গুহ। সিনেমাটোগ্রাফার অয়ন শীল। সম্পাদনায় শুভ প্রামাণিক। সিরিজে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন বাবু দত্তরায়, মৈত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্বার শর্মা, অনুষ্কা চক্রবর্তী, সম্পূর্ণা মন্ডল, কৌশিক হাফিজি, দীপান্বিতা সরকার, সৌমিক মিত্র, বুদ্ধদেব দাস, মানস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

প্রসঙ্গত ছয়ের দশকে শরদিন্দুর এই ‘চিড়িয়াখানা’   নিয়ে এক‌ই নামে বড়পর্দায় ছবি তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই ছবিতে ব্যোমকেশের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। অজিতের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়। সেই ছবি আজও অনেকের মতে ব্যোমকেশ কাহিনির সেরা পর্দা-নিবেদন। পরবর্তীতে ২০১৬-তে এসে এই এক‌ই গল্প নিয়ে ‘ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা’ নামে ছবি নির্মাণ করেন অঞ্জন দত্ত। সেই ছবিতে সত্যান্বেষীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যিশু সেনগুপ্ত। অজিতের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়‌কে। এবার চমকপ্রদভাবে ‘চিড়িয়াখানা’ নামটির পরিবর্তে ‘পিঁজরাপোল’ কথাটিকে ব্যবহার করেছেন নির্মাতারা। পরম্পরায় ব্যোমকেশ হয়েছেন অনির্বাণ। 

‘পিঁজরাপোল’ শব্দের অর্থ দুর্বল গবাদি পশুদের এক জায়গায় রাখা এবং এদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা। ট্রেলারে শার্ট-প্যান্ট পরিহিত ব্যোমকেশ রূপী অনির্বাণের লুক দেখে তাঁর সঙ্গে উত্তমকুমারের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন নেটিজেনদের একাংশ। প্রতিবারের মতোই বেশ যত্ন সহকারে এই সিজনটিও নির্মাণ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট। ট্রেলারের শুরু থেকেই কাট-শট, নানা সিকোয়েন্স, মাঝে সাউন্ড এফেক্ট সন্মিলিত–যেটিকে মেট্রোনাম বলা হয়, সেই ডিজাইন করা হয়েছে। সংলাপের মাধ্যমে একটি চরিত্রের দিকের পাশাপাশি তদন্ত প্রক্রিয়ার বিষয়টিকেও সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে। সারা ট্রেলারে একটা নীলাভ আলোর আভা, ডার্ক অ্যাম্বিয়েন্সটিকে যথার্থ ভাবে তুলে ধরে। পিঁজরাপোল থেকে হাতছানি দেওয়া হাড়হিম করা রহস্যের সত্যান্বেষণ করতে কি সফল হবেন সত্যান্বেষী? সেই উত্তর মিলবে এই সিজনের পর্বগুলিতে। দেখার বিষয় এটাই যে ‘ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোল’-এর হাত ধরে নিজের পূর্ববর্তী সিজনের থেকে বেরিয়ে এসে আর‌ও কতখানি ব্যোমকেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটে অনির্বাণের। কারণ, এবার যে তাঁকে উত্তম প্রতিপন্ন হতেই হবে। দর্শক চান বা না চান, প্রচ্ছন্নভাবে মহানায়কের সঙ্গে অনির্বাণের তুলনা আসাটা এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কিছু নয়।