সুপার হিরো হতে গিয়ে…
স্কুলের দোতলা থেকে নিচে ঝাঁপ দিয়েছে এক আট বছরের বালক। অনুপ্রেরণা হৃত্বিক রোশনের ‘কৃষ’। সিনেমার পর্দায় অনেক উঁচু থেকে কৃষের লাফ দেওয়া ও সফল অবতরণ দেখে বালকটি মনে করেছিল, সেও এটা পারবে। যেটা হলো, নাক ও হাত-পায়ে প্রচুর আঘাত নিয়ে এখন সে হাসপাতালে। খবরে প্রকাশ, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। পর্দায় সুপার হিরোর কর্মকাণ্ডে উজ্জীবিত হয়ে শিশু-কিশোররা বাস্তবে ঠিক তেমনটাই করতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, এটা নতুন নয়।
ছবিতে কৃষ পৃথিবীর মন্দ লোকেদের বিনাশের লক্ষ্যে যাবতীয় স্টান্ট করে। হৃত্বিকের নিবিড় অনুশীলন, কঠিন ওয়ার্কআউট রুটিনের ফসল-স্বরূপ তাঁর করা স্টান্টগুলি হয়ে ওঠে চরম বিশ্বাসযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে ক্যামেরা বা গ্রাফিক্সের চমক। শিশু-কিশোররা এইসব ট্রিক বোঝে না। থ্রিলিং অ্যাক্রোবেটিক্স দেখে চনমনে উত্তেজনায় মেতে ওঠে অবোধ শিশুর দল। তারা পর্দার গল্পকে সত্যি বলে মনে করে। সিনেমা আর বাস্তবের মধ্যে গুলিয়ে যায় সব। ছোটরা তাদের হিরোকে অনুসরণ করে, যা করেছে কানপুরের এই ক্লাস থ্রি-তে পড়া বালক। জানা গেছে, ১৫ ফুট ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছে সে।
সিনেমা মানেই প্রমোদ, এটা মোটামুটি সমাজের প্রচলিত ধারণা। এই ধারণাকে হাতিয়ার করেই প্রযোজকরাও ছবি বানান। রাকেশ রোশন নিজের ছেলের কেরিয়ারে চার চাঁদ লাগাতে ‘সুপার হিরো’ সিরিজ তৈরি করেছেন, যার সবগুলিই হিট ! মানুষ বিনোদন চায়। সেই বিনোদনের কী প্রভাব পড়তে পারে, সেকথা তারা তখনই ভাবে, যখন এই জাতীয় দুর্ঘটনা ঘটে ! কিন্তু সেই ভাবনাও ক্ষণস্থায়ী। মিডিয়াও কিছুদিন এই নিয়ে চর্চা করে। তারপর তাদের নজর ঘুরে যায়, অন্য কোনও চমকপ্রদ খবরে। সিনেমার নির্মাতারা দুর্ঘটনা এড়াবার (পড়ুন আইনি সমস্যা) জন্য পর্দার এক কোণে নিছক স্ট্যাটুটারি ওয়ার্নিং দিয়েই ক্ষান্ত !
তাহলে কী এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে ? সমাজবিদরা বলছেন স্কুল ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে লাগাতার কাউন্সেলিং করতে হবে। ওদের খুব ভালো করে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে এই জাতীয় কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি প্রসঙ্গে। বিনোদন ব্যবসায়ীরা তাঁদের অর্থকরী দিকটিকে প্রাধান্য দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাঁদের নির্মিত কোনও সৃষ্টির দ্বারা উৎসাহিত হয়ে কোথায় কোন শিশুর জীবন বিপন্ন হবে, সেসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দায়িত্ব নেবেন না তাঁরা। কানপুরের শিশুটি গুরুতর আহত হয়েছে। কিন্তু এহেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে, অতীতে এটাও ঘটেছে। তাই বিষয়টা তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছেড়ে রাখলে চলবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের নিবিষ্ট ভাবনায় রেখে এই বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে হবে।