Monday, February 3, 2025
টলিউডলাইম-Light

অতিপ্রাকৃত আলো-আঁধারি ছায়ায় জমজমাট ‘শ্বেতকালী’

নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। বড়পর্দা ও ছোটপর্দার পাশাপাশি এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যও তৈরি হচ্ছে ছবি। মাঝে মাঝে এই বিভাগে সেইসব ছবির বিষয়েও থাকছে। আজ তেমনই এক ছবি। জি ফাইভে স্ট্রিমিং শুরু রহস্যে টানটান ‘শ্বেতকালী’। লিখেছেন অজন্তা সিনহা

শৈশবের বন্ধু, অধুনা প্রেমিক পলাশের সঙ্গে ঊর্বি এসেছে এক প্রত্যন্ত গ্রামে। এখানেই এক প্রাচীন ও পরিত্যক্ত প্রাসাদোপম বাড়িতে তাদের এনগেজমেন্ট পরবর্তী সেলিব্রেশনে। এখানে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেই তারা তাদের ব্যক্তিগত আনন্দ উদযাপনে মেতে উঠবে, এটাই উদ্দেশ্য দুজনের। এই বাড়িটি সম্প্রতি কিনেছে পলাশের দাদা অরুণাভ। সে এই বাড়িটিকে একটি বুটিক হোটেলে পরিণত করতে চায়। তাদের এই বাড়িতে আসার প্রথম দিনেই একটি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। বাড়ির কাজের লোকজন একটি শ্বেতবর্ণা কালী মূর্তি আবিষ্কার করে। মা কালীর মূর্তি কেমন করে শ্বেতবর্ণা হতে পারে ? চিরাচরিত ধারণায় ধাক্কা লাগে পরিবারের সকলেরই। এমনই এক রহস্যঘন পরিবেশে শুরু হয় পরিচালক সানি ঘোষ রায়ের ছবি ‘শ্বেতকালী’, প্রযোজনা এক্রোপলিস।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌলতে আমরা এখন মুঠোফোনের অন্দরেই নানা নতুন নতুন ভাবনার ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছি। জি ফাইভে প্রদর্শিত ‘শ্বেতকালী’ তেমনই এক ভিন্ন ধরনের ছবি। এখানে রহস্য আছে, আছে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচল, সংস্কার-কুসংস্কার, সঙ্গে অতিপ্রাকৃত আলো-আঁধারি ছায়া। কুসংস্কারের হাত ধরে যেটা সাধারণত ছায়া বিস্তার করে, সেই অপরাধও ঘটছে এই ছবিতে। আর আছে সম্পর্কের অনুরণন !

‘শ্বেতকালী’র মূর্তি পাওয়ার পর এলাকার পুরোহিত জানায়, পরপর তিন রাত্তির ধরে এই দেবীর পূজা করতে হবে। শুধু তাই নয়, পুজোয় পশুবলি অত্যাবশ্যক। ঊর্বি ঘোরতর পশুহত্যা বিরোধী। আদতে সে একজন পশুপ্রেমী। তার নিজের পোষা কুকুর গোগোলকে প্রবল ভালোবাসে সে। পুরোহিতের তীব্র অনুশাসন ঘোষণার পরেও ঊর্বির আপত্তিতে প্রথম রাতে বলি ছাড়াই পুজো হয়। পুজো অনুষ্ঠিত হয় সকাল পর্যন্ত। তারপরই আবিষ্কৃত হয় জিভ কাটা অবস্থায় গোগোলের মৃতদেহ। খুনি কে ? দেবীর রোষেই ঘটেছে এই ঘটনা ? নাকি এই দোহাই দিয়ে কোনও মানুষ তার স্বার্থ চরিতার্থ করে?

গ্রামবাসী বিশ্বাস করে, ‘শ্বেতকালী’ দেবীই গোগোলের প্রাণ নিয়েছেন। তাঁর উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হয়নি, তাই, এই কোপ ! তাদের এই বিশ্বাসের পিছনে যে পুরোহিতের উস্কানি আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঊর্বি মনে করে, খুনি আশপাশেই লুকিয়ে। এরপর তারা স্থির করে, গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় গ্রামবাসী। তারা প্রাসাদ ঘিরে রাখে ও শাসায়, পূজা অসমাপ্ত রেখে গেলে, এই পরিবারদুটিকে খুন করে ফেলবে তারা। তাদের বিশ্বাস তিনরাত্তির ধরে পুজো না করলে দেবীর অভিশাপে শয়তানের ছায়া নেমে আসবে গ্রামের ওপর। এরপর একের পর এক অঘটন ঘটতে থাকে। রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হয়। রহস্যের সমাধান কী করে হয় বা কত দুর হয় সেটা আপনারা জি ফাইভের পর্দাতেই দেখবেন। এটুকু বলা যায়, গল্পের সঙ্গে মানানসই লোকেশন, টানটান, গতিময় চিত্রনাট্য ও আবহ রচনায় এবং শিল্পীদের যথাযথ অভিনয়ে উপভোগ্য হয়ে ওঠে ‘শ্বেতকালী’।

অভিনয়ে ঐন্দ্রিলা, সাহেব ভট্টাচার্য, ঋষি কৌশিক, সৌরভ চক্রবর্তী, অরিন্দম গাঙ্গুলি, দেবদূত ঘোষ, রানা বসু ঠাকুর, দেব রায়, দেবলীনা কুমার, প্রান্তিক, সমদর্শী দত্ত, মল্লিকা সিংহ রায় প্রমুখ। এঁরা প্রত্যেকেই বাংলা বিনোদনের চেনা নাম। শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। কাহিনির গতি-প্রকৃতির সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের সেরাটি দিয়েছেন সকলেই। আর পর্দার পিছনেও রয়েছেন কয়েকজন গুণী মানুষ, যাঁদের বাদ দিয়ে বিনোদন দুনিয়ার কোনও কাজ পূর্ণ হয় না। সবশেষে তাঁদেরই কথা। গল্প লিখেছেন সৌভিক চক্রবর্তী ও দীপাঞ্জন চন্দ। চিত্রনাট্য কোয়েল শ্রীজীব। সিনেমাটোগ্রাফি ইন্দ্রনীল মুখার্জি। আর্ট ডিরেক্টর সুব্রত বারিক। মিউজিক শুভদীপ গুহ।