অপরাজিতা শ্বেতা
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর পড়বেন প্রতি সপ্তাহে। আজ জি টিভির ‘ম্যায় হুঁ অপরাজিতা’। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
‘কসৌটি জিন্দেগি কে’-র প্রেমাকে নিশ্চয়ই ভোলেননি আপনারা। প্রেমা শর্মা, দারুণ ব্যক্তিত্বপূর্ণ এক চরিত্র আর সেই চরিত্রের অভিনয়ে যিনি তাক লাগিয়ে দেন কেরিয়ারের প্রায় শুরুর দিকেই, তিনি শ্বেতা তেওয়ারি। আজ তো ছোটপর্দার এক অপরিহার্য নাম তিনি। টিভিতে শ্বেতার প্রথম কাজ দূরদর্শনের ‘আনেওয়ালা পল’ ধারাবাহিকে। তারপরেও আরও দু একটি কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু প্রথম বিপুলভাবে নজর কাড়েন ২০০১-এ একতা কাপুরের সোপ অপেরা কসৌটি জিন্দেগি কে-তে। সেই সময় একতা একের পর এক ‘ক’ কেন্দ্রিক মেগা বানাচ্ছেন আর সবই প্রায় হিট ! এই সূত্রেই আমরা পাই আজকের সাংসদ সেদিনের চাহিতা টিভি তারকা স্মৃতি ইরানিকে। পাই সাক্ষী তানোয়ার এবং শ্বেতা তেওয়ারিকে।
শ্বেতা এরপর ‘পরভারিশ’, ‘বেগুসরাই’ ইত্যাদি ধারাবাহিকে নিজের ক্ষমতার স্বাক্ষর রাখেন। সহজাত অভিনয় ক্ষমতার অধিকারী শ্বেতা মেগায় সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি ‘নাচ বলিয়ে’, ‘ঝলক দিখলা যা’ এবং ‘খতরোঁ কে খিলাড়ি’-র মতো টিভি রিয়ালিটি শোয়ের মঞ্চও আলো করেন। তবে, এক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ‘বিগ বস’-এর হাত ধরে। শ্বেতা এই শোয়ের প্রথম মহিলা বিজয়ী রূপে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। যাঁরা ‘বিগ বস’ নিয়মিত দেখেন এবং প্রতি সিজনেই প্রতিযোগীদের নানা কাণ্ডকারখানা দেখে তিতিবিরক্ত, তাঁরাও শ্বেতার বসের ঘরে থাকাকালীন তাঁর ব্যবহারে নিন্দাযোগ্য কিছু খুঁজে পাননি। আর এই ভাবেই ছোট পর্দায় নিজের এক সম্মানযোগ্য অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্বেতা।
একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, শ্বেতা যে সিরিয়ালগুলিতে এ যাবৎ কাজ করেছেন, সেখানে চরিত্রগুলি মূলত দারুণ ব্যক্তিত্বপূর্ণ এবং কাহিনির একেবারে কেন্দ্রেই তাদের অবস্থান। সাম্প্রতিক ‘ম্যায় হুঁ অপরাজিতা’-ও তার ব্যতিক্রম নয়। জি টিভির এই ধারাবাহিকে শ্বেতা অভিনয় করছেন নাম ভূমিকায়। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করছেন মানব গোহিল। মানবও একজন অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। বহু বছর হিন্দি টিভিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে আসছেন। তবে, এখানে তিনি প্রায় এন্টাগনিস্ট। সেসব প্রসঙ্গে পরে আসছি। যেটা বলার, এখানেও অপরাজিতাকে ঘিরেই গল্প এবং তথ্য বলছে নিজের ভূমিকায় এতটাই নিখুঁত শ্বেতা যে, দেখতে দেখতে মনে হবে, এই চরিত্রটি যেন তাঁকে ভেবেই লেখা।
তেলুগু হিট ধারাবাহিক ‘রাধাম্মা কুথুরু’-র হিন্দিকরণ ‘ম্যায় হুঁ অপরাজিতা’। গত সেপ্টেম্বরে জি টিভিতে ধারাবাহিকটি শুরু হয়। গল্পের শুরুতে আমরা দেখি, অপরাজিতার স্বামী অক্ষয় (মানব) তাকে তিন মেয়ে ও নিজের মা সহ ফেলে চলে গেছে। কারণ, অন্য এক মহিলা। এই মহিলার প্রেমে ডুবে সব ভুলে যায় অক্ষয়। উল্টোদিকে বৃদ্ধা, চলৎশক্তিহীন শ্বাশুড়ি ও তিন মেয়ের পালন পোষণ করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার বিপর্যস্ত অপরাজিতা। বিপর্যস্ত, কিন্তু, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ–হাল না ছাড়া এক নারী। অপরাজিতা একটি লন্ড্রি চালায়। অতি কষ্টে সংসার এবং মেয়েদের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে সে। সঙ্গে শ্বাশুড়িকেও যত্ন করে। তিনিও ছেলের কারণে লজ্জা-গ্লানিতে কাতর। অপরাজিতার পাশে তিনি ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে। সামাজিক ক্ষেত্রে খুব স্বাভবিকভাবেই তিন মেয়ে নিয়ে অপরাজিতার যে লড়াই, তা সেভাবে স্বীকৃত নয়। প্রতিবেশী মহিলারা অপরাজিতার জীবনের সঙ্কটকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে। অক্ষয়ের ব্যবহারের জন্য অক্ষয় নয়, বারবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় অপরাজিতাকেই। ঠিক এমনই এক সময়ে নিজের পারিবারিক সম্পত্তির জন্য বাড়ি ফেরে অক্ষয়। শ্বাশুড়ি অনেক চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন না। অপরাজিতা তিন মেয়ে নিয়ে গৃহহীন হয়।
অভিনয়ে শ্বেতা-মানব ছাড়াও আছেন শ্বেতা গুলাটি (মোহিনী, অক্ষয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী), অমিতা খোপকর (অক্ষয়ের মা/শ্বেতার শ্বাশুড়ি) এবং অনুষ্কা মার্চান্দে, ধ্বানি গোরি, শ্রুতি চৌধুরী যথাক্রমে অপরাজিতার তিন মেয়ে, গর্বিতা সাধওয়ানি (নিয়া/অপরাজিতার সৎ মেয়ে), শুভকরণ (বীর), পুনিত তেজওয়ানি (মোহিনীর ভাই মণীশ) প্রমুখ। কাহিনি গীতাংশু দে ও অঞ্জু কাপুর। পরিচালনা বিক্রম ঘাই। প্রযোজনা সুকেশ মোতওয়ানি ও মৌতিক তলিয়া। প্রযোজনা সংস্থা বোধি ট্রি মাল্টিমিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। সংবাদ মাধ্যমে ‘ম্যায় হুঁ অপরাজিতা’ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে। যদিও প্রতিটি মিডিয়াই একবাক্যে শ্বেতা তেওয়ারিকে একশোয় একশো দিয়েছে। মায়ের চরিত্রে তাঁর অভিনয় এতটাই স্বাভাবিক, মনে হচ্ছে ছবি, দিশা ও আশার স্ক্রিন মা নন তিনি, আসল মা। চরিত্রটিকে এতটাই বিশ্বাসের জায়গা থেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শ্বেতা ! আর কিছু না হোক, শ্বেতার অপরাজেয় অভিনয়ের জন্য দেখা যায় ‘ম্যায় হুঁ অপরাজিতা’। চলছে জি টিভিতে সোম থেকে শনি সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে।