Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

আউটডোর শুটিং কম হওয়ায় আর এক অর্থনৈতিক ধাক্কা

মনে পড়ছে গৌতম ঘোষের ‘আবার অরণ্যে’ ছবির দৃশ্যপটে মূর্তি নদী ও তাকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের চলমান ছবি দেখে খুব রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। এর অনেকদিন পর কৌশিক গাঙ্গুলির ‘কেয়ার অফ স্যর’ ছবিতে দেখলাম মুনসংয়ের জলসা বাংলো। পরবর্তীকালে আর হিসেব রাখা হয় ওঠেনি। বাংলা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি শুধু নয়, মুম্বইয়েরও অনেক পরিচালকের ফেভারিট শুটিং ডেস্টিনেশন উত্তরবঙ্গ। এখানকার প্রকৃতি কাউকে ফেরায় না–পর্যটক হোক বা কর্মসূত্রে আসা মানুষ।

এই সূত্রেই বলার, নতুন করে অতিমারীর প্রভাব উত্তরবঙ্গে পর্যটন শিল্পে কালো থাবা তো বসিয়েছেই–তার সঙ্গে শুটিংয়ের প্রেক্ষিতেও এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক জায়গাটায় একটা বড় ধাক্কা লেগেছে। সাধারণভাবেই এখন শুটিংয়ের বিষয়টা যথাসম্ভব কোভিড বিধি মেনে, ইনডোরে করার চেষ্টা হচ্ছে। আউটডোর তুলনায় কম। সামগ্রিকভাবে পুরো ইন্ডাস্ট্রিই এই মুহূর্তে একটা বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন। তবু অভিনেতা, টেকনিশিয়ান থেকে ইউনিটের বাকি সদস্যদের সুরক্ষার স্বার্থেই শুটিংকে কেন্দ্র করে এই নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে ফ্লাইট, ট্রেন বা বাসে চড়ে উত্তরবঙ্গে এসে শুটিং করাটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।

ফলত, শুটিং উপলক্ষে যে একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ হতো এখানে, সেটা এখন হওয়া সম্ভব নয়। শুটিং হচ্ছে না, তা নয়। তবে, ছোট ছোট স্তরে। এতে, এই যে উত্তরবঙ্গে শুটিং হলে ইউনিটে কাজের সুযোগ পেতেন এলাকার লোকজন, সেটাও হচ্ছে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। উত্তরবঙ্গের অভিনেতা বা টেকনিশিয়ানরা চাইলেই কলকাতা বা মুম্বইতে কাজের সুযোগ পান না। কিন্তু কলকাতা বা মুম্বই থেকে আসা পরিচালকদের অনেকেই প্রয়োজনমতো এখানকার শুটিংয়ে সেই ছেলেমেয়েদের সুযোগ দেন, এই দৃষ্টান্ত আছে। এখন সেই প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও ব্যাহত। মানুষের রুটিরুজিতে ধাক্কা লাগছে নানাভাবেই। বলা বাহুল্য, বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত উত্তরবঙ্গের এক শ্রেণীর মানুষও এর শিকার।

আদতে সারা বিশ্বেই বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি একটা বিরাট সংখ্যক মানুষের রুটিরুজির যোগানদার। অতিমারী নানাভাবেই সেখানে কালোছায়া বিস্তার করেছে। আমি নিজে কলকাতা ও মুম্বইয়ের শুটিং কভার করতে গিয়ে দেখেছি আউটডোরে কত মানুষ একসঙ্গে কাজ করেন। লোকেশন বা শট কী নেওয়া হবে, সেই হিসেবে লোকজনের প্রয়োজন হয়। ডান্স হলে একরকম, অ্যাকশন সিকোয়েন্স থাকলে আর এক। নিছক নাটকীয় দৃশ্যের শুটিং হলে আবার পৃথক। এই সব ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক মানুষদের একটা গুরুত্ব থাকে। অনেক পরিচালকই আছেন যাঁরা মূল প্রোডাকশন ম্যানেজার ছাড়াও অঞ্চল ভিত্তিতে একজনকে রাখেন সামাল দেবার জন্য। অঞ্চলের মানুষের কাজের গুরুত্ব এখানেই অনুমেয়। পরিস্থিতি না বদলানো পর্যন্ত এই মানুষগুলো যে প্রতি মুহূর্তে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।