ওয়েবে এবার বীমা কেলেঙ্কারি
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। বাংলা ওয়েব সিরিজে বিমা কেলেঙ্কারি। লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
বিমাকান্ডের জটিল আবর্তে কিঞ্জল-সোনমণি। মাস্টারমাইন্ড রজতাভ ! নাহ, ওঁরা ঠিক নন, ওঁদের অভিনীত চরিত্রগুলি। পটভূমি অভিরূপ ঘোষের ‘দ্য বেঙ্গল স্ক্যাম : বিমা কান্ড’। ওয়েব সিরিজে নানা জাতীয় অপরাধ ইতিমধ্যেই প্রদর্শিত। আর্থিক কেলেঙ্কারিও দেখেছি আমরা। এবার বিমার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক এক বিষয়। সমাজে অবক্ষয় ক্রমশই বাড়ছে। এর ফলস্বরূপ প্রতিনিয়ত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারির মতো বিষয়গুলো। আর সকলেই জানেন, এই সমস্ত ঘটনাগুলোর পিছনে যারা রয়েছে, তাদের প্রধান শক্তি রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও আশ্রয়। সেই কারণেই দিনের পর দিন ধরে দুর্নীতির এই কারবার চালাতে তাদের বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না।
তবে, দুর্নীতি যখন কোনও বৃহত্তর ক্ষেত্রে সংগঠিত হয়, তখন তার আঁচ এসে পড়ে সাধারণ মানুষের গায়ে। চরম ভুক্তভোগী হন তারাই। ওয়েব আঙিনায় সেই বিষয়ভাবনাকেই তুলে ধরেছেন পরিচালক অভিরূপ ঘোষ তাঁর পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘দ্য বেঙ্গল স্ক্যাম : বিমা কান্ড’-এর মধ্যে দিয়ে। বাংলার গ্রামীণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঘটে চলা বিমা কেলেঙ্কারির মতো জ্বলন্ত বিষয়কে ওয়েব সিরিজে এনে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, বরাবরই ব্যাতিক্রমী পরিচালক হিসেবে পরিচিত অভিরূপ। টলিপাড়ার ছকে বাঁধা পথের একেবারে বিপরীতে হাঁটার সাহসটা বরাবরই দেখিয়ে এসেছেন তিনি। শুরুটাই করেছিলেন ‘কে : সিক্রেট আই’-র মতো সায়েন্স ফিকশন ছবির হাত ধরে। পরবর্তী সময় তাঁর হাত থেকেই দর্শক পেয়েছে ‘জম্বিস্থান’, ‘রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ’, ‘ব্রহ্মদৈত্য’, ‘ব্যাধ’-এর মতো ভিন্নধারার কাজ।
আট পর্বের এই ওয়েব সিরিজে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিঞ্জল নন্দ, সোনামণি সাহা ও রজতাভ দত্ত। প্রসঙ্গত অভিরূপের ‘দ্য বেঙ্গল স্ক্যাম : বিমা কান্ড’-এর হাত ধরেই প্রথমবার ওয়েব আঙিনায় পা রাখলেন ছোটপর্দার অন্যতম পরিচিত ও জনপ্রিয় অভিনেতা সোনামণি সাহা। সোনামণিকে ইতিমধ্যেই দর্শক দেখেছেন ছোটপর্দার দুই হিট মেগা ‘দেবী চৌধুরাণী’ ও ‘মোহর’-এ। এই মুহূর্তে বাঙালি দর্শকের ড্রইংরুমে তাঁর নিত্য আনাগোনা স্টার জলসার মেগা ‘এক্কা দোক্কা’-র হাত ধরে। এই ওয়েব সিরিজে বিমা কোম্পানির এজেন্ট মোহনার চরিত্রে রয়েছেন সোনামণি। অপরদিকে নিজ অভিনয়গুণে দর্শকমনে জায়গা করে নেওয়া কিঞ্জলকে সিরিজে দেখা যাবে প্রোটাগনিস্টের চরিত্রে। তাঁর চরিত্রের নাম সমুদ্র। সমুদ্রও মোহনার মতোই বিমা কোম্পানির এজেন্ট।
তবে, সিরিজের মুখ্য আকর্ষণ নিঃসন্দেহে রজতাভ দত্ত। অ্যান্টাগনিস্ট বিদ্যুতের চরিত্রে রয়েছেন তিনি। জ্যোতিষে বিশ্বাসী বিদ্যুৎ এই বীমা কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড। তার নেটওয়ার্ক যথেষ্টই বিস্তৃত। অসাধু, জটিল, ক্ষমতালোভী এই চরিত্রটির পিছনে একটা অসংলগ্নতা ও হাস্যরসের ছোঁয়াও রয়েছে। আর এতকিছু একসঙ্গে রজতাভ ছাড়া আর কে হাজির করবেন পর্দায় ! অভিরূপের প্রথম ছবি ‘কে : সিক্রেট আই’ থেকেই তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন রজতাভ। পরিচালকের ‘জম্বিস্থান’, ‘ব্যাধ’-এ প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন তিনি। এক অর্থে অভিরূপ নিজের ছবি তথা সিরিজে যেভাবে রজতাভকে ব্যবহার করেছেন, সেভাবে অন্য কেউ তাঁকে ব্যবহার করেননি। বিদ্যুৎ হয়ে ওঠায় তাঁর মতো একজন পাওয়ার প্যাকড অভিনেতারই দরকার ছিল।
সিরিজের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে সদ্য বিমা কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া সমুদ্রকে কেন্দ্র করে। বিমা কোম্পানিতে কাজ করতে এসেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় মোহনার। ইতিমধ্যেই একটি বড় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ইনসিওরেন্স কোম্পানির এক গ্রাহক রামকৃষ্ণ মুর্মুর। চিলাপোতা গ্রামের এহেন ঘটনার যাবতীয় বিষয় বিশদভাবে জানার জন্য বিমা কোম্পানির পক্ষ থেকে সমুদ্র ও মোহনাকে পাঠানো হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পায় তারা। ধীরে ধীরে তাদের সন্দেহ বাড়ে এবং তদন্তের জন্য এই ঘটনার আরও গভীরে ঢুকে যায় দুজনে। সমুদ্র ও মোহনার বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয় না যে দুর্ঘটনা নয়, ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে রামকৃষ্ণ মুর্মুকে।
গ্রাম জুড়ে চলতে থাকা এক বিশাল বিমা কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হয় তারা। জানতে পারে, এই কেলেঙ্কারির মূলচক্রী বিদ্যুৎ। সমুদ্র ও মোহনা কি পারবে যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে বিদ্যুৎ ও তার গ্যাংয়ের মুখোশ খুলে ফেলতে ? নাকি ঝুঁকি নিয়ে রহস্যের জট খুলতে গিয়ে তারা নিজেরাও জড়িয়ে পড়বে আরও বড় বিপদের আবর্তে ! এই যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মিলবে সিরিজটিতে। ‘দ্য বেঙ্গল স্ক্যাম : বিমা কান্ড-এ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন জন ভট্টাচার্য, দেবরাজ মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা। জনকে সিরিজে দেখা যাবে একজন সিআইডি অফিসারের ভূমিকায়।
গত ১১ নভেম্বর হইচই-তে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে এই সিরিজটির। ‘দ্য বেঙ্গল স্ক্যাম : বিমা কান্ড প্রসঙ্গে পরিচালক অভিরূপ ঘোষের বক্তব্য, “বাংলার গ্রামীণ এলাকার প্রেক্ষাপটে বোনা এই সিরিজটি মিথ্যার এক জটিল জালের গল্প। দারিদ্র এবং শিক্ষার অভাবে আসা দুর্বলতার উপর আলোকপাত করেছে এই সিরিজ। সিরিজের নেতিবাচক চরিত্রদের ঘৃণ্য কাজগুলি দর্শকদের বিস্মিত করবে। ভরপুর বিনোদনে ঠাসা এই সিরিজে অপরাধ, রোমাঞ্চ, অ্যাকশন, ড্রামা–এই সব ক’টি উপাদান ভরপুর মাত্রায় রয়েছে।”
নিজের অভিনীত চরিত্রটি প্রসঙ্গে রজতাভ জানান, “আমার অভিনীত চরিত্রটি গ্রামের গোটা বিমা কেলেঙ্কারির নেটওয়ার্ক সাজায়। বিদ্যুৎ কৌতুকপূর্ণ একটি চরিত্র। তার নির্মমতার পিছনে একটি নির্দিষ্ট অসংলগ্নতা এবং হাস্যরস রয়েছে। সে জ্যোতিষশাস্ত্র ও ভাগ্যে দৃঢ় বিশ্বাসী। তবে নিজের স্বার্থে কাউকে হত্যা করার আগে একবারও চিন্তা করে না। এই চরিত্রের সঙ্গে দর্শকদের প্রেম-ঘৃণা দুই সম্পর্ক গড়ে উঠবে।” বাংলা বিনোদনের অপরিহার্য নাম তিনি। তাঁকে নতুন এই অবতারে দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন দর্শকবৃন্দ, শোনা যাচ্ছে এমনটাই।