খেলা শেষ ‘মেয়েবেলা’-র !
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। টিআরপি নয়, ‘মেয়েবেলা’ বন্ধের কারণ অন্যকিছু। লিখেছেন শ্যামলী বন্দোপাধ্যায়।
ধারাবাহিক ‘মেয়েবেলা’ কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্ন দর্শকের মনে বেশ কিছুদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। এর কারণ রূপা গাঙ্গুলির ধারাবাহিক ছেড়ে দেওয়া, তারপর স্লট পরিবর্তিত হয়ে সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে একেবারে বিকেল ৫টায় নেমে আসা। তা সত্ত্বেও টিআরপি বাড়ছিল। কিন্তু এরপরেও মাত্র পাঁচ মাসেই এ কী সিদ্ধান্ত নিল চ্যানেল ও প্রযোজনা সংস্থা? শেষ পর্যন্ত কী আর দেখা যাবে না এই ধারাবাহিক?
সাম্প্রতিক কালে কোনও বাংলা ধারাবাহিক শুরুর থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত এত আলোচনা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। আর এর অনেকটা অংশ জুড়েই ছিলেন রূপা গাঙ্গুলি। তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের ঘেরাটোপ ছেড়ে বহুদিন পড়ে তিনি ‘মেয়েবেলা’ ধারাবাহিককে ঘিরে বিনোদন দুনিয়ায় ফিরছেন, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। শুরুর পরে গল্প ও রূপার অভিনয় দর্শক মনে ভালই প্রভাব ফেলে। যদিও রূপার অভিনয় যেমন প্রশংসা পেয়েছে, তেমন সমালোচনাও যে একেবারে হয়নি তা নয়। ট্রোল হয়েছেন অভিনয়ের জন্য। যদিও তারপরেও ‘মেয়েবেলা’র টিআরপি ভালই বাড়ছিল।
কিন্তু, আচমকা ছন্দপতন ! রূপা গাঙ্গুলি ছেড়ে দিলেন ধারাবাহিক। তাঁর অভিযোগ ছিল, যে গল্প বলে তাঁকে ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, শুরুর পরে তা বদলে যায়। তা ছাড়াও কথামতো স্ক্রিপ্ট, ওয়ান লাইনার না পাওয়ার সমস্যা চলছিল। তা নিয়ে প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে বারবার কথা বলেও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নেন রূপা। তারপরে ধারাবাহিকের বীথি মিত্রের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় অনুশ্রী দাসকে। দীর্ঘদিন অভিনয় করে দর্শক মনে তিনিও বেশ ভালই জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু রূপা গাঙ্গুলির ছেড়ে যাওয়া চরিত্রে অনেক দর্শকই তাঁকে সেভাবে মানতে পারছিলেন না।
এক সময়ে দর্শক তাও মেনে নেয়। দিব্যি চলছিল ধারাবাহিক। অন্য কয়েকটা ধারাবাহিকের থেকে জনপ্রিয়তায় এগিয়েও যাচ্ছিল। এরপরেই আবার শুরু হয় স্লট পরিবর্তনের জল্পনা। বিকেল ৫টায় ধারাবাহিক সম্প্রচারিত হবে শুনে অফিসযাত্রী দর্শকগণ সব থেকে হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ, বাড়ি ফিরে টেলিভিশনের সামনে চা নিয়ে বসে মৌ-ডোডোর গল্প তাঁরা মিস করবেন। এত বড় বাজেটের ধারাবাহিক প্রাইম টাইম থেকে সরিয়ে দেওয়াটা মানতে পারে না প্রযোজনা সংস্থাও। যদিও আলোচনায় কোনও রফা না হওয়ায় ৫টাতেই চলছিল ‘মেয়েবেলা’।
এদিকে, ধারাবাহিক বন্ধ হওয়ার খবর সোশ্যাল মিডিয়াতেও পল্লবিত হচ্ছিল। অবশেষে জল্পনায় ইতি টানলেন ধারাবাহিকের পরিচালক সুমন দাস স্বয়ং। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানালেন, “অনেক দিন পরে একটা মনের মতো শো পরিচালনা করতে পেরে খুব ভালো লাগছিল। কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি। যাই হোক, ভালো জিনিস কম হলেই ভালো। সেটা মনে থেকে যায়। আর মানুষও একঘেয়েমি অনুভব করে বিরক্ত হয় না।” বলা বাহুল্য, এই পোস্ট দেখার পরেই আপামর দর্শকের মন খারাপ হয়ে যায়।
অনেকে এর জন্য রূপা গাঙ্গুলির ধারাবাহিক ছেড়ে দেওয়াকেই দায়ী করছেন। যদিও এই দায় নিতে একেবারেই রাজি নন রূপা। বরং তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তাকেই বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে দুঃখ দেওয়া হয়েছিল। এমনকী ফ্লোরে অপমানিতও হতে হয়েছে। তিনি কিছু নিয়ম মেনে কাজ করতে ভালোবাসেন। সেই নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবেন না বলেও সাফ জানান তিনি। কারণ যাই হোক, পরিচালকের কথায় পরিস্কার বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে ‘মেয়েবেলা’র। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।