‘গুলমোহর’-কে ঘিরে ১৩ বছর পরে সিনেমায় শর্মিলা ঠাকুর
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ‘গুলমোহর’। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
ইদানীং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌলতে আমরা বেশ কিছু মৌলিক ভাবনার ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছি। রাহুল ভি চিটেলার ‘গুলমোহর’ এমনই এক সাড়া জাগানো ছবি হিসেবে জায়গা করে নেবে দর্শক দরবারে, একথা আগাম বলে দেওয়া যায়। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্মিত হিন্দি ছবিগুলির ক্ষেত্রে যেটা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, বেশ কিছু বড় মাপের বলিউড অভিনেতাকে নতুন অবতারে পাওয়া। এভাবেই ‘গুলমোহর’-এ আমরা পাচ্ছি শর্মিলা ঠাকুরকে। প্রসঙ্গত, এই ছবির সূত্র ধরেই ১৩ বছর পর সিনেমায় তিনি, হোক না সেটা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ! শর্মিলাকে শেষ দেখা গেছে ২০১০ সালে দানিশ আসলামের ‘ব্রেক কে বাদ’ ছবিতে। ফলে, ‘গুলমোহর’-এ তাঁর অভিনয় দেখার অপেক্ষায় আমরা সকলেই। এই ছবিতে আছেন মনোজ বাজপেয়ীর মতো শক্তিশালী তারকাও। আছেন অমল পালেকরের মতো প্রবীণ ও ক্ষমতাশালী অভিনেতা। সব মিলিয়ে এই ছবি ঘিরে প্রত্যাশার মাত্রা তুঙ্গে।
তিন প্রজন্মের এই কাহিনিতে পরিবারের প্রধান কুসুম বাত্রা, তাঁরই ভূমিকায় অভিনয় করছেন শর্মিলা। মূলত মাতৃতান্ত্রিক এই বাত্রা পরিবারের যাবতীয় কর্মকান্ড চলে কুসুমের অঙ্গুলিহেলনেই। প্রসঙ্গত, ছবির গল্প শুরু হচ্ছে এমন এক অবস্থানে, যেখানে তিন প্রজন্মের এই পরিবার এক ছাদের নিচে বসবাস করলেও মনের দিক থেকে একে অপরের সঙ্গে অনেকটাই দূরত্ব রচিত হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে কুসুম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের দিল্লি-স্থিত পারিবারিক বসতবাড়ি গুলমোহরকে বিক্রি করে দেবেন। এরপর পন্ডিচেরি গিয়ে নতুনভাবে বাড়ি নির্মাণ এবং পরিবার প্রতিস্থাপন করা হবে। তাঁর এই ঘোষণায় বেশ বড়সড় ঝড় ওঠে পরিবারে। বাত্রা পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম অর্থাৎ কুসুমের ছেলে অরুণ (মনোজ বাজপেয়ী) এখনও সেই অর্থে প্রতিষ্ঠিত নয়। নাতিও (সূরজ শর্মা) চায় আরও স্বাধীনতা ! অন্যান্য চরিত্রে আছেন সিমরন (অরুণের স্ত্রী), কাবেরী শেঠ, উৎসবী ঝা প্রমুখ। ট্রেলর দেখে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, ছবিতে বাবা-ছেলের সম্পর্কের জটিলতা ছাড়াও রয়েছে মৃত সিনিয়র বাত্রা অর্থাৎ অরুণের বাবাকে ঘিরে ঘনিয়ে ওঠা পরিবারের গোপন কোনও রহস্য !
এই রহস্যেকে কেন্দ্র করেই কী পরিবারের সদস্যদের মধ্যেকার দূরত্ব আরও প্রকট হবে ? এতটাই, যা, দিল্লি ও পন্ডিচেরির ভৌগলিক দূরত্বের থেকেও বেশি ! কুসুম বাত্রার সিদ্ধান্ত মতে পন্ডিচেরি যাওয়া স্থির। ৩৪ বছরের পুরোনো দিল্লির গুলমোহর ভিলায় শেষ চারদিনের যাপন এই পরিবারের। কী ঘটবে সামনে ? সকলেই অনুভব করছে, যে কোনও মুহূর্তেই অদ্ভুত কিছু ঘটে যেতে পারে! আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এদেশের একদা ধনী, এখন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পড়ন্ত অবস্থায় পর্যবসিত পরিবারগুলির মধ্যে যে টানাপোড়েন চলে, তারই এক জীবন্ত রূপরেখা দেখা যাবে এই ছবিতে।
চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক রাহুল ভি চিটেলার ও অর্পিতা মুখার্জি যৌথভাবে। মিউজিক কম্পোজ করেছেন এমি নমিনেটেড কম্পোজার সিদ্ধার্থ খোসলা। নিজের ডেবিউ ছবি ‘গুলমোহর’ প্রসঙ্গে যথার্থই আবেগাপ্লুত রাহুল জানিয়েছেন, “সময় বদলাচ্ছে। চারপাশের পৃথিবী শুধু নয়, নিজের পরিবার সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিও এখন সতত পরিবর্তনশীল। আমি এবং এ ছবির আর এক চিত্রনাট্যকার অর্পিতা এই সত্যকে গল্পের আকারে পর্দায় নিয়ে আসতে চেয়েছি। এ ছবি সব বয়সের মানুষের জন্য। তাঁরা সহজেই বাত্রা পরিবারের পর্দার ছবির সঙ্গে নিজেদের জীবনকে মেলাতে পারবেন।” রাহুলের কথায়, ‘গুলমোহর’ একরাশ ভালোবাসা ও প্রত্যাশা নিয়ে তৈরি করেছি আমরা, যেখানে এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষ রয়েছেন আন্তরিক তাগিদে। স্টার স্টুডিও, চকবোর্ড এন্টারটেনমেন্ট ও অটোনমাস ওয়ার্কস একত্রে প্রযোজনা করেছে ‘গুলমোহর’।
একদা দিল্লির এক পরিচিত বাড়িতে গিয়ে পরিচালক রাহুল ভি চিটেলার দেখেন, পরিবারটি বাড়ি ছাড়ার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ! তাঁরা প্যাকিং করছেন। দেওয়াল থেকে পেন্টিং, ফটোগ্রাফ নামানো হচ্ছে। দৃশ্যটি স্পর্শকাতর করে তুলেছিল তাঁকে। সেখান থেকেই এই ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন তিনি। অর্পিতার সঙ্গে আলোচনা করে চিত্রনাট্য লেখায় অগ্রসর হন। রহস্য থাকলেও, ছবিতে কোনও ধূসর শেড নেই। সরলভাবেই পর্দায় কাহিনি বর্ণনা করেছেন রাহুল এই ছবিতে। ‘গুলমোহর’-এর অভিনেতা টিমের কাজ নিয়ে প্রবল আশাবাদী পরিচালক। ওঁর কথায়, প্রত্যেকে এমন এক নিবিষ্ট পারিবারিক বাতাবরণে শুটিং করেছেন, যে, মনে হচ্ছিল ওঁরা প্রকৃতই বাত্রা পরিবারের অন্তর্ভূক্ত। স্বভাবতই, পরিচালকের এই বক্তব্য ছবি সম্পর্কে আগ্রহ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামী ৩ মার্চ ডিজনি হটস্টার-এ মুক্তি পাচ্ছে ‘গুলমোহর’।