জঙ্গল ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার অঙ্গীকার ‘ব্যাঘ্র দিবস’-এ
জঙ্গল ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ঠিক রাখতেই প্রয়োজন বাঘের। কারণ, বাঘ থাকলেই বাঁচবে জঙ্গল, রক্ষা পাবে প্রকৃতির বুক জুড়ে থাকা নানাবিধ গাছপালা–এমনকী অন্যান্য বন্যপ্রাণও। ১৯৭২-এ বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই ভারত সরকার গ্রহণ করেন ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প’।’ বাঘ এক বিপন্ন বন্যপ্রাণ। তাই তাকে রক্ষা করা একান্তই প্রয়োজন। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ১৯৭৩-এ শুরু হয় ‘প্রোজেক্ট টাইগার’। পরবর্তী সময়ে এটিই সর্বাপেক্ষা সফল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ হিসেবে পরিণত হয়।
একটা সময় বন্দুক হাতে জঙ্গল সাফারি ছিল একদল মানুষের তথাকথিত রাজকীয় প্রমোদ। সাধারণ শিকার প্রেমীরাও এই দলে ছিল। এর বাইরে বাঘ-শিকার, বাঘের চামড়া বিক্রিকে ঘিরে বিদেশি মুদ্রা নিয়ে চলত লোভের খেলা। এখন অবশ্য অনেকটাই বদলেছে সেই পরিস্থিতি। নিষিদ্ধ হয়েছে বন্যপ্রাণী শিকার। বাঘের সংরক্ষণ সহ টাইগার রিজার্ভের প্রয়াস–এই সবকিছুই এখন বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কার্যকর করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ‘প্রোজেক্ট টাইগার’ প্রকল্প শুরুর সময় দেশে বাঘের সংখ্যা ছিল ২৯৯। ভারতে এবং সুন্দরবনে ব্যাঘ্র সংরক্ষণের এই প্রকল্পটি এবার ৫০ বছরে পা দিয়েছে। এখন আমাদের দেশে বাঘের সংখ্যা ৩,১৬৭। বিশ্বের ৭৫ শতাংশ বন্যবাঘের ঠিকানা এখন এ দেশের বিভিন্ন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক্তিয়ারভূক্ত জঙ্গল। এখন প্রয়োজন বাঘের বাসভূমি সংরক্ষণ। পাশাপাশি জঙ্গলের পাশে থাকা মানুষদের সঙ্গে নিয়ে প্রোজেক্ট টাইগারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই ভাবনা থেকেই গত ২৫ জুলাই কলকাতার লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস স্কুল হল-এ একত্রে ‘বাঘ দিবস’ পালন করল ‘শের’ ও প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ এবং বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার সঙ্গে অক্লান্তভাবে জড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ ও বনকর্মীদের নাগরিক সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠানে কলকাতা ও সুন্দরবনের ফিল্ড স্টাফদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রখ্যাত বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক রতনলাল ব্রহ্মচারীর নামাঙ্কিত সম্মান। এদিন পদ্মশ্রী পি কে সেন মেমোরিয়াল সিটিজেন সন্মান প্রদান করা হয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কর্মরত সংস্থা ও সেই কাজে দায়বদ্ধতা প্রমাণকারী ব্যক্তিদের। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বন্যপ্রাণ তথ্যচিত্র পরিচালক নাল্লা মুথু। সমগ্র প্রচেষ্টার মূল বক্তব্য ছিল, মানুষের হৃদয়েই যেন গড়ে ওঠে বাঘের আবাসস্থল। তবেই বাঁচবে জঙ্গল। বেঁচে থাকবে বন্যপ্রাণ। সোমনাথ লাহা