জমজমাট আড্ডাগলি
১৯ শে জুন ২০১৯ । শহর শিলিগুড়ির বুকে একটি পেনডেন্ট জ্বলজ্বল করে উঠলো। মালাটি ছিলই, তাতে জুড়ল একটি লকেট। শিলিগুড়ি ম্যাগ, শহরের কবি-লেখকদের আড্ডার জায়গা। সেই আড্ডাকে আর একটু ছড়িয়ে দিতে, আর একটু আন্তরিক করতে, আরও উষ্ণতা যোগ করতে সংবেদন-এর তিনতলায় শুরু হলো আড্ডাগলি।
১৯শে জুন ২০২২। তিনটি বছর অতিক্রান্ত। এর মধ্যে আড্ডাগলিতে হয়ে গেছে প্রচুর অনুষ্ঠান। শুধু গল্প-কবিতার আসর নয়। হয়েছে চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা, নতুন বইয়ের উন্মোচন, অনুবাদ চর্চা এবং আরও অনেক কিছু। দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে গত ১১ ও ১২ জুন আড্ডাগলিতে অনুষ্ঠিত হলো নতুন বইয়ের মলাট উন্মোচন এবং অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে এক মনোজ্ঞ আলোচনা।
প্রথম দিন কবি মানসী কবিরাজের ‘অনন্ত সাঁতারের ক্লাস’ নিয়ে আলোচনা করলেন ডঃ সঞ্জীবন দত্তরায় এবং ডঃ মঞ্জুলা বেরা। দুই আলোচকের আলোচনায় উল্লেখিত ছিল বইয়ের কবিতাগুলির ভিন্ন ভিন্ন দিক। অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই আলোচনায় শ্রোতা-কবিগণ ও অংশগ্রহণ করলেন বেশ উৎসাহের সঙ্গে। ওইদিন প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সময় মহারাজের (স্মার্তসোহম সাহা) বাঁশির ধুন অনুরণিত হল কক্ষ জুড়ে।
স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থসারথী লাহিড়ী। শিলিগুড়ির কবিদের মধ্যে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনালেন চম্পা ভট্টাচার্য, অনুশ্রী তরফদার, কাকলী মুখার্জী, মিলি ভট্টাচার্য, কান্তা দাস, মনামি মিত্র সান্যাল, সুদীপ চৌধুরী, রিমি দে, আশিস চক্রবর্তী, পাঞ্চালী সিনহা, সুজাতা পাল, বীরু বর্মণ, বিদ্যুৎ রাজগুরু ও শ্যামলী সেনগুপ্ত। মানসী কবিরাজ তাঁর ‘অনন্ত সাঁতারের ক্লাস’ থেকে কয়েকটি কবিতা পাঠে মুগ্ধ করলেন আমাদের। এই মনোরম সাহিত্যসন্ধ্যাকে সঙ্গীতমুখর করেছিলেন মিলি ভট্টাচার্য, মনোনীতা চক্রবর্তী আর বাসুদেব ভট্টাচার্য। ওইদিন সমগ্র অনুষ্ঠান সুচারুরূপে সঞ্চালনা করেন সুদীপ চৌধুরী।
পরের দিন অর্থাৎ ১২ জুন সকাল থেকেই মেঘলা ছিল আকাশ। দুপূর থেকে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আড্ডাগলি হয়ে উঠলো জমজমাট। কোচবিহার থেকে এলেন সুবীর, শৌভিক, সঙ্গে তন্ময় ও অঙ্কুশ বর্মণ। সেদিন ছিল অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। জয়া চৌধুরীর ‘দশ দেশ তের নারী’ বইটি নিয়ে জয়ার সাথে কথোপকথনে ছিলেন শ্যামলী সেনগুপ্ত। স্প্যানিশভাষী তের জন নারী, লেখক–তাঁদের কলমে নারীদের নিয়েই গল্প। তারই অনুবাদ করেছেন কবি-অনুবাদক জয়া চৌধুরী। জয়ার বক্তব্যে উঠে এল সেখানকার সংস্কার, সংস্কৃতি, লৌকিক আচার সম্পর্কে অনেক কথা। অনুবাদ করতে গিয়ে কী কী অসুবিধা বা বাধার মধ্য দিয়ে যেতে হয় একজন অনুবাদককে, সে বিষয়েও বললেন জয়া। এরপর ওড়িয়া ভাষার কাব্যগ্রন্থ ডঃ অসীমা সাহুর ‘ফাজিল ইচ্ছে’র বাংলায় অনূদিত বইটি নিয়ে আলোচনায় মুগ্ধ করলেন সুবীর সরকার। এই বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন মিলি ভট্টাচার্য।
এরপর কবিতা, গান এবং অনুবাদ নিয়ে আলোচনা। প্রথমবার আড্ডাগলিতে এসেছিলেন রত্না ব্যানার্জি, দেবস্মিতা সরকার, মঞ্জু সরকার, দুলাল গোবিন্দ সরকার। রত্নার অনুবাদে শোনা হল গুলজারের শায়রী। রবীন্দ্রসংগীত ও স্প্যানিশ গানে মাতিয়ে দিলেন দেবস্মিতা। অনুবাদ নিয়ে বক্তব্য রাখলেন শাশ্বতী চন্দ। কবিতায় পরিবেশকে স্নিগ্ধ ও প্রাণময় করে তুললেন সুবীর, শৌভিক, অঙ্কুশ, সন্দীপন হ্যাপি, চম্পা, কাকলী, অনুশ্রী, মানসী, মহুয়া, বাসুদেব ভট্টাচার্য, রিমি দে। ‘ফাজিল ইচ্ছে’র অনুবাদক শ্যামলী সেনগুপ্ত ওই বই থেকে পাঠ করলেন কবিতা। বাসুদেব ভট্টাচার্যের উদাত্ত গলায় গান আলাদা মাত্রা দেয়। আর সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুন্দর করে সঞ্চালনা করেন মানসী কবিরাজ।
এই সন্ধ্যায় আরও একটি সংযোজন–তন্ময় বসাকের প্রকাশনা ‘শহরতলী’ থেকে প্রকাশিত শৌভিক বণিকের কবিতার বই ‘আড়াল ভাঙছে ম্যাজিশিয়ান’-এর মোড়ক উন্মোচন এবং আলোচনা। দু’দিনের দু’টি অন্যরকম অনুষ্ঠান আড্ডাগলির ঘর ভরে রেখেছিল, যার আমেজ থেকে যাবে বহুদিন।