জমজমাট ‘রসময়ীর রসিকতা’
সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ মঞ্চস্থ হলো দৃশ্যপট নাট্যসংস্থার প্রযোজনা ‘রসময়ীর রসিকতা’ Anirban Bhattacharya । প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সুপরিচিত এই কাহিনির নাট্যরূপ দিয়েছেন উজ্জ্বল মন্ডল। উকিল ক্ষেত্রমোহন এবং তাঁর ধর্মপত্নী রসময়ীর আঠারো বছরের দাম্পত্য জীবন টক-ঝাল-মিষ্টিতে পূর্ণ হলেও রুদ্ররসের যে কিঞ্চিৎ আধিক্য ছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য! কারণ রসময়ী ছিল অত্যন্ত মুখরা স্বভাবা। তার ক্ষিপ্ত মেজাজ প্রায়ই ক্ষেত্রমোহনকে তিতিবিরক্ত করে তুলত। তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতির আরও কারণ হয়তো ছিল সন্তানহীনতাও।
স্ত্রীর উপর বিরক্ত ক্ষেত্রমোহনের দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, রসময়ী জীবিত থাকার কারণে তার সে বাসনা কিছুতেই পূর্ণ হচ্ছিল না। অবশেষে একদিন চূড়ান্ত সাংসারিক অশান্তির পর বাপের বাড়িতে দিদির কাছে চলে যায় রসময়ী। ক্ষেত্রমোহন এবং তার পরিবার নিশ্চিন্ত হয়ে পাত্রী দেখা শুরু করে। শুরু হয় দ্বিতীয় বিবাহের উদ্যোগ-আয়োজন। রসময়ীর কানে সে খবর পৌঁছাতে দেরি হয় না। সে সোজা চলে যায় পাত্রীর বাড়িতে। তার রণংদেহী মূর্তি দেখে ভয় পেয়ে পাত্রীপক্ষ বিয়ে ভেঙে দেয়। মুষড়ে পড়লেও ক্ষেত্রমোহন বোঝে রসময়ীর ভালোবাসায় খাদ নেই।
এই সময় হঠাৎই রসময়ীর মৃত্যু সংবাদ আসে, অর্থাৎ, ক্ষেত্রমোহনের বিবাহের পথে আর কোনও বাধা থাকে না। জোরকদমে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। আর তখনই ঘটতে থাকে চমকপ্রদ এক ঘটনা। একের পর এক রসময়ীর স্বহস্তে লেখা চিঠি আসতে থাকে ক্ষেত্রমোহনের কাছে। প্রতিটি চিঠির বিষয়বস্তু মোটামুটি এক–ক্ষেত্রমোহন যাতে দ্বিতীয় বিবাহ না করে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ক্ষেত্রমোহন ভাবতে থাকে রসময়ী কি আদৌ মৃত, নাকি, এগুলো ভৌতিক কার্যকলাপ! বিয়ের প্রস্তুতির মধ্যেই উন্মোচিত হয় আসল রহস্য। মৃত্যুর আগে রসময়ীর লেখা পত্রগুলি তার বিধবা দিদি বিনোদিনী একের পর এক পাঠিয়ে চলেছে ক্ষেত্রমোহনের কাছে। এতদিনে রসময়ীর ভালোবাসার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করে ক্ষেত্রমোহন। বিয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করে চিঠিগুলি হাতে কান্নায় ভেঙে পরে সে।
অনির্বান ভট্টাচার্যের Anirban Bhattacharya নিপুণ পরিচালনা-গুণে নাটকটি আগাগোড়া ছিল টানটান। অভিনয়ে একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন শুরু থেকে শেষ অবধি। ক্ষেত্রমোহনের চরিত্রাভিনেতা গম্ভীরা ভট্টাচার্য প্রতিটি দৃশ্যেই অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশেষ করে শেষ দৃশ্যে তাঁর অভিনয় মনে রাখার মতো। রসময়ীর চরিত্রে কোয়েল ভট্টাচার্য বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখেন। পিসীমার চরিত্রাভিনেত্রী পৃথা বন্দোপাধ্যায় অনবদ্য। খুড়ো মশাইয়ের চরিত্রে তারাশঙ্কর ভট্টাচার্য এবং মনোহর চরিত্রে উদ্ভাস রায় যথাযথ। স্বল্প সময়ের জন্য মঞ্চে এলেও পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য (দারোগা) দর্শকমন জয় করে নিয়েছেন। পার্থ মজুমদারের মঞ্চসজ্জা প্রশংসনীয়। কল্যাণ ঘোষের আলোর ব্যবহারও যথাযথ।