দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওঁরা
কেরিয়ারের শীর্ষে তিনি তখন। হঠাৎই চার সন্তানের বাবা, একজন বিবাহিত পুরুষকে তাঁর বিয়ে করার খবরে চমকে ওঠে তামাম দেশের মানুষ। আদতে ড্রিমগার্ল হেমা মালিনীর সঙ্গে হি-ম্যান ধর্মেন্দ্রর বিয়েটা ছিল বিনামেঘে বজ্রপাতের মতোই! দুজনের প্রেম নিয়ে চর্চা ছিল সংবাদপত্রের সিনেমা বিভাগে। কিন্তু, একেবারে বিয়ে ? শোনা যায়, ওঁরা বিষয়টাকে আইনী করেন ধর্মান্তরিত হয়ে। সেসব অবশ্য এখন দূর অতীত। ধর্মেন্দ্রর দুই স্ত্রীর ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক। আর এটা ঘটেছে, হেমাজি এবং ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কাউরের সৌজন্যে। সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দিয়েছেন তাঁরা।
প্রশ্ন, উঠতেই পারে, হঠাৎ করে এই প্রসঙ্গটির অবতারণা কেন ? সম্প্রতি, হেমাজির অটোবায়োগ্রাফি থেকে প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর সেই সময়ের কিছু অভিজ্ঞতার কথা, যখন তিনি ধরমজিকে বিয়ে করেন! জানা যায়, ধরমজি বরাবর তাঁর দুটি পরিবারকেই সমান মনোযোগ দিয়ে এসেছেন। এ ব্যাপারে তাঁদের চমৎকার বোঝাবুঝির উৎস নিঃসন্দেহে দুজনের গভীর প্রেম। হেমা মালিনী জানান, তিনি নিজেও কখনও বিরক্ত করেননি ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী ও তাঁর সন্তানদের। নিজের মেয়েদের মূলত একার শক্তিতেই বড় করেছেন। তবে, সমস্যা-সংকটে যথেষ্ট পরিমাণে ধরমজির সাহচর্য, সমর্থন পেয়েছেন তিনি। হেমাজির কথায়, আর পাঁচজন বাবার মতোই সন্তানদের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন ধর্মেন্দ্র।
হেমাজি জানিয়েছেন, ধর্মেন্দ্রর বাবা-মা কিষান সিং দেওল ও সতোয়ান্ত কাউরের সঙ্গে বরাবর তাঁর বড় সুন্দর এক সম্পর্ক বজায় ছিল। হেমাজির প্রথম সন্তান এষার জন্মের আগে সতোয়ান্ত আসেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, পরিবারের কাউকে না জানিয়ে। হেমাজির কথায়, “উনি অত্যন্ত আন্তরিক আর দয়ালু মনের মানুষ ছিলেন। জুহুর এক ডাবিং স্টুডিওতে কাজ করছি আমি সেদিন। আমি সন্তানসম্ভবা জানতে পেরে উনি গোপনে এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমি পা ছুঁয়ে প্রণাম করার পর, আমায় জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করে বললেন, বেটা খুশ রহো হামেশা।
ধর্মেন্দ্রর বাবা কিষান সিং দেওল ছিলেন দারুণ মজার এক মানুষ। হেমাজি ও তাঁর পরিবারকে বেশ পছন্দ করতেন তিনি। কিষান সিং দেওলকে নিয়ে একটি মজার স্মৃতি শেয়ার করেছেন হেমা মালিনী তাঁর লেখায়। বলেছেন, আমার বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলেই উনি পাঞ্জা লড়তেন ওদের সঙ্গে। বাবা ও ভাই হেরে গেলে বলতেন, তুম লোগ ঘি-মাখন-লস্যি খাও ! ইডলি আউর সম্বর সে তাকত নেহি আতি ! আমার বাবাও দারুণ মজা পেতেন ওঁর কথায়।
ধরমজির বাবা-মায়ের প্রসঙ্গে হেমাজি আর পাঁচটি গৃহবধূর মতোই আবেগের সঙ্গে জানান, আমি খুশি, ওঁরা আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। যে সময় হেমা-ধর্মেন্দ্র বিয়ে করেন, তখন বিষয়টা সামাজিক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ছিল না, সে তাঁরা যত বড় তারকাই হোন। নিজেদের জীবনদর্শন গুণে এই দুই তারকা একান্তের প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যেও সমান যত্নশীল থেকেছেন। আর এভাবেই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁরা।