দেব-মিঠুনের ‘প্রজাপতি’র উড়ান আজই
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। বাবা ছেলের সম্পর্কের মরমি কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘প্রজাপতি’। এই ছবিতেই দীর্ঘ ৪৬ বছর পর আবার বড়পর্দায় স্ক্রিন শেয়ার করছেন মিঠুন চক্রবর্তী ও মমতাশঙ্কর। লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
বিয়ে নামক বিষয়টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে ‘প্রজাপতি’-র অনুষঙ্গ। কিন্তু বিয়ে মানেই কি শুধু দুটি মানুষের মিলিত হওয়ার আনন্দ ? তাহলে সানাইয়ের সুরে কেন তৈরি হয় চিরন্তন বিষন্নতার এক আবহ ! বিয়ের রাত পোহালেই চিরকালের মতো মেয়ে চলে যায় শ্বশুরঘরে। তখন আড়ম্বর, আয়োজনের মাঝেও মন ঠিক ডুকরে কেঁদে ওঠে। হৃদয় ভারাক্রান্ত হয় করুণ সুরে। আসলে জীবনে একবার না একবার একটা সত্যের মুখোমুখি আমাদের হতেই হয়। মন নাকি প্রয়োজন! কোনটা আগে? এহেন বিষয়ভাবনাকে নিয়েই বাবা-ছেলের সম্পর্কের আবর্তে পরিচালক অভিজিৎ সেন তৈরি করেছেন ‘প্রজাপতি’।
সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে আলোচিত এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী ও দেব। ২০১৪-তে টিপিক্যাল মশালা ছবি ‘হিরোগিরি’-র পর আবার বড় পর্দায় একসঙ্গে কাজ করেছেন মিঠুন ও দেব। দীর্ঘ আট বছর পর বড়পর্দায় আবার এই জুটির ম্যাজিক দেখার জন্য দর্শকদের মধ্যে যে চরম উন্মাদনা থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। অপরদিকে ছবির পরিচালক যিনি, তাঁর হাত থেকেই দর্শক পেয়েছেন ‘টনিক’-এর মতো ব্লকবাস্টার ছবি। সম্প্রতি, গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্ডিয়ান প্যানোরামার অন্তর্গত মেনস্ট্রিম বিভাগে দেখানো হয়েছে ‘টনিক’। তাই ‘প্রজাপতি’ নিয়েও যে প্রত্যাশা থাকবে তা বলাই যায়।
বেঙ্গল টকিজ ও প্রণব কুমার গুহ’র সঙ্গে ছবিটির প্রযোজনার দায়িত্বভার সামলেছে দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারস। নিবেদনে অতনু রায়চৌধুরী। ছবির কাস্টিং রীতিমতো চমকপ্রদ। এই ছবির হাত ধরেই দীর্ঘ ৪৬ বছর পর আবার বড়পর্দায় স্ক্রিন শেয়ার করছেন মিঠুন চক্রবর্তী ও মমতাশঙ্কর। এই ছবির হাত ধরেই প্রথমবার বড়পর্দায় পা রাখছেন ছোটপর্দার অন্যতম জনপ্রিয় তথা পরিচিত অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্য। ছোটপর্দায় ‘যমুনা ঢাকি’-র সুবাদে রীতিমতো জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন কৌশানী মুখোপাধ্যায়।
‘প্রজাপতি’-তে সংগীত পরিচালনা করেছেন অনুপম রায়, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও রথীজিৎ। অনুপম রায়ের সুরে ও নিজের কন্ঠে গাওয়া ‘তুমিই আমার হিরো’ গানটি ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন এক লাখের বেশি মানুষ। আরেকটি গান ‘বম বম ভোলে’ গেয়েছেন ও সুর করেছেন সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রথীজিতের সুরে ছবির টাইটেল ট্র্যাকটি গেয়েছেন স্নিগ্ধজিৎ ও অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার গোপী ভগৎ। সম্পাদনায় সুজয় দত্ত রায়। ডিসেম্বরের শুরুতেই মুক্তি পায় ছবির ট্রেলার, যা রীতিমতো নজর কেড়েছে দর্শকদের। প্রায় সাড়ে সাত লাখেরও বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন এই ছবির ট্রেলার।
কাহিনি আবর্তিত হয়েছে এক বয়স্ক বাবা ও তাঁর ছেলেকে কেন্দ্র করে। বাবা-ছেলের সংসারে একমাত্র সমস্যা ছেলের বিয়ে। ছেলে রাজু (দেব) পেশায় ওয়েডিং প্ল্যানার হলেও, নিজে বিয়ে করতে নারাজ! এদিকে গৌরবাবু ( মিঠুন) নাছোড়বান্দা। কারণ, ইতিমধ্যেই মেয়ের (কনীনিকা) বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ঘটনাচক্রে গৌরের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তাঁর পুরোনো বান্ধবী কুসুমের (মমতাশঙ্কর)। কুসুমের মেয়ে জয়শ্রীকে (কৌশানী) দেখে পছন্দও হয়ে যায় গৌরবাবুর। কিন্তু রাজুর পছন্দ তাঁর অফিসের কর্মী মালাকে (শ্বেতা)। তাহলে মন নাকি প্রয়োজন–কাকে বেছে নেবে রাজু? উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়। কলকাতা ছাড়াও ছবির শুটিং হয়েছে বেনারসে।
ছবির শুটিং চলাকালীন গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিঠুন জানান, “এটা বাবা-ছেলের সম্পর্কের মিষ্টি একটা গল্প। গল্পের মধ্যে রোম্যান্স, মজা সবই রয়েছে। দর্শক খুব আনন্দ পাবে ছবিটা দেখে।” দেব প্রসঙ্গে মিঠুন বলেন, “দেবকে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব পছন্দ করি। খুব ভালো, ভদ্র ছেলে। ওর বাবা যখন মুম্বইয়ে ফিল্ম ইউনিটে ক্যাটারিং করতেন সেই সময় থেকেই চিনি দেবকে। ও এখন সুপারস্টার হয়েছে। ভালো লাগছে। ও যেন আরও বড় হয়।” ছবির পোস্টার লঞ্চের সাংবাদিক সম্মেলনে মমতাশঙ্কর বলেন, “নাচ হোক কিংবা অভিনয়, আমি কখনও নিজের কাজ নিয়ে তৃপ্ত নই। শুধু মনে হয়, ভালো হলো না। আরও ভালো হতে পারত। নাচটা তাও মনে হয়, পরের দিন ঠিক করে নিতে পারব। কিন্তু ছবির কাজ একবার শেষ হয়ে গেলে, সেটা পরিবর্তন করার সুযোগ আসে না।”
মিঠুনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় পর কাজ করা প্রসঙ্গে মমতাশঙ্কর জানান, “মিঠুন যেমন মজার ছিল, সেইরকমই রয়েছে। আমাদের মধ্যে পুরোনো সম্পর্কের সেই মজাটা একইরকম আছে। ও আমাকে খ্যাপাতে ভালোবাসে। আমাকে রাগিয়েই ছাড়বে। তবে, একটা কথা বলতেই হবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ও আরও ভালো অভিনেতা হয়ে গেছে। আমার ওর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বার বার মনে হচ্ছিল, আমার অভিনয় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই ভিতর থেকে ভালো কাজ করার খিদেটাও বেড়ে গিয়েছিল।”
“প্রজাপতি বিয়ের প্রতীক হলেও, এই ছবিতে সেটা রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জীবনে এমন একটা সময় আসে, যখন কোনটা সত্যি–মন না প্রয়োজন, স্থির করা শক্ত হয়ে পড়ে। এটা এই ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক”–জানান দেব। মিঠুন ও মমতাশঙ্করের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে আবেগাপ্লুত দেব বলেছেন,”মিঠুনদা আমার কাছে বাবারই মতো। আমাদের অফস্ক্রিন সম্পর্ক খুবই ভালো। তা নাহলে ছবিতে ওইভাবে শটগুলো দিতে পারতাম না। আমি খোলামেলা ভাবে যে কোনও বিষয় নিয়ে মিঠুনদার সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। মমদির সঙ্গে সোশ্যালি আলাপ ছিল। তবে এই ছবিটা করতে গিয়ে আমাদের সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হয়েছে।”
শ্বেতার কথায়, “নিজেকে বড়পর্দায় দেখাটাই আমার কাছে বড় পাওনা। প্রথম ছবিতেই দেবদা, মিঠুন আঙ্কেল, মমমাসির সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করাটা আমার কাছে সুবর্ণ সুযোগ। আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছি। এই ছবিটা তথাকথিত ছবির থেকে একটু অন্যরকম। খুব মিষ্টি একটা গল্প।” পরিচালক অভিজিৎ সেনের মতে, “এই ছবিতে বাবা-ছেলের সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। এটা দেখে যে কোনও বাবা-মা নিজেদের ছেলে-মেয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের মিল খুঁজে পাবেন। মজার গল্প, পরিবারের গল্প। দেব-মিঠুন চক্রবর্তী, দুজনেই এত ভালো অভিনয় করেছেন। ওঁদের দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াটা চমৎকার ভাবে ছবিতে ফুটে উঠেছে।” ছবির অন্যতম প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী জানান, “এটা পুরোপুরি পারিবারিক ছবি। সবচেয়ে বড় পাওনা, এই ছবির মাধ্যমে আমি মিঠুন চক্রবর্তী ও মমতাশঙ্করের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। বাবার চরিত্রে মিঠুনদা রাজি না হলে ছবিটাই করতাম না।”