নদীর ওপারে ভুটান
দৃষ্টিনন্দন পারেন
দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
বাঙালি পর্যটকদের বরাবরই প্রিয় ডেস্টিনেশন উত্তরবঙ্গ। ইদানীং সেটা প্রিয়তর হয়ে উঠেছে নানা কারণে। সে হোক। হাতের কাছে এমন অনাবিল প্রকৃতি! নাগরিক মানুষকে সে তো টানবেই। আহা, আমি নিজেও তো উত্তরবঙ্গবাসী হয়েছি সেই অমোঘ টানেই। এখানকার পাহাড়, নদী, জঙ্গলের কথা বলতে গেলে কিছুতেই যে ফুরোয় না। কয়েক বছর আগের কথা। তখনও কোভিড আতঙ্ক বা লকডাউন হাঙ্গামা তাড়া করেনি আমাদের চেনা জীবনকে। দোলের ছুটিতে ব্যাগপত্তর নিয়ে এক সকালে রওনা দিলাম শিলিগুড়ি থেকে। গন্তব্য উত্তরবঙ্গ আর ভুটানের সীমানায় অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম পারেন। সে গ্রামের সমস্তটা জুড়ে যে নদী, সেই জলঢাকার নামেই অবশ্য লোকজন বেশি জানে এই অঞ্চলকে।
চলেছি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে। ড্রাইভার ভাই শ্যামলের কাছ থেকে গল্পচ্ছলে জেনে নিচ্ছি এটাসেটা। দু’পাশে প্রাচীন গাছের সারি, চা বাগান, লোকালয়, দোকানপাট, দূরে পাহাড়ের সারি–ঈশ্বর এখানে রঙ-তুলি হাতে অক্লান্ত। ক্যানভাসে এঁকেই চলেছেন ছবি। এ পথে যেতে বেশ কয়েকটি নদী পড়ে। এই যে পরপর নদী–এর ফলে অঞ্চলটায় এক অনির্বচনীয় দৃশ্যপট তৈরি হতে থাকে। অনেকটা খোলা আকাশ যেতে যেতে দৃশ্যগোচর হয়। আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা। জলে তার ছবি। উড়ন্ত বকের সারি মিলিয়ে যায় দূর দিগন্তে। সে যেন কোন রূপকথা ! নদীর জলে স্নান করে, চিকচিকে বালির ওপর যখন ডানার জল ঝাড়ে রাজহংসের দল, সেও এক অপূর্ব দৃশ্য।

শুরুতেই যে নদীর সঙ্গে দেখা, নাম তার তিস্তা। দুপাশে পাহাড়ের সারি রেখে এগিয়ে চলেছে সে। সেবক পার হয়ে করোনেশন ব্রিজ (স্থানীয় নাম বাঘপুল)। নিচে বহতা তিস্তা। ঋতু বদলায়, পাল্টে যায় তার জলের রঙ। এই এখন এই চৈত্রের শুকনো দিনে মেটে রঙে চলমান তিস্তা। আর কদিন পরই বর্ষা এলে বৃষ্টির জলে ভরে উঠবে সে। তখন সবুজের আভা ধরবে তিস্তার জলে। স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি পর্যটকদের একটু বাড়তি নেকনজর ! তিস্তাকে ফেলে কিছুদূর যাওয়ার পর একে একে দেখা হয় লীস, ঘীস, চেল, মাল, নেওরা, কুর্তি ও মূর্তির সঙ্গে। বসন্তে প্রায় সকলেরই শূন্য বুকে বালির চড়া। কোথাও তিরতির করে বইছে জল।
এভাবে যেতে যেতে একসময় খুনিয়া মোড়ে পৌঁছই। এমন নাম কে দিল কে জানে ? জায়গাটি দিব্যি দেখতে। বেশ বড় মোড়। জঙ্গল হাত বাড়ালেই। এখান থেকে বাঁদিকে ঢুকে গেছে স্টেট হাইওয়ে। আমাদের গাড়ি এই পথই ধরে। বেশ খানিকটা চলার পর ঝালং পৌঁছলাম। এরপরই পারেন। ইতিমধ্যে আমাদের পথ চড়াইমুখী হয়েছে। পথে পেয়েছি ছোট ছোট গ্রাম, জনপদ, দোকানপাট, চা বাগান আর প্রচুর গাছপালা। ডুয়ার্সের যাবতীয় সৌন্দর্য গায়ে মেখে নিয়েছে যেন চারপাশ। চোখ টানলো রাবার প্ল্যান্টেশন। পারেনের পর বিন্দু। এখানেই হাইডেল প্রজেক্ট। এখান থেকে ভুটানের পাহাড়গুলি যেন হাঁতছোয়া দূরত্বে। কিন্তু সেসব বিত্তান্ত পরে। আগে মিয়াং হোমস্টে-র কথা। মালিক উত্তম তামাং। বেশ মায়াময় এক দোতলা বাড়ি। বেরিয়ে এলেন উত্তম। দিব্যি বাংলা বলেন ও বোঝেন। আর পাঁচজন পাহাড়ের মানুষের মতোই আন্তরিক।

পরিচ্ছন্নতা সর্বত্র। ব্যাগপত্তর রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে কফি খেলাম। ওঁদের ডাইনিং স্পেসটা চমৎকার। চারপাশ খোলা। বসলেই সামনে গাছপালার সীমানা ছাড়িয়ে উঁচু পাহাড়ের সারি। পথেই দেখেছি ধূসর মেঘের দল আকাশের কোনে জমছে। এবার ঝেপে বৃষ্টি এল। সঙ্গে সঙ্গে নামলো তাপমাত্রা। অতএব গৃহবন্দি। কিছুক্ষণ এখানেই বসে থাকা। গাছপালারা স্নান করতে পেরে বেজায় খুশি। দুলে দুলে সেই খুশিতে নাচছে ডালপালারা। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছিল। ভাত, ডাল, আলুভাজা, বেশ সুস্বাদু একধরনের স্থানীয় শাক, বাঁধাকপির তরকারি, ডিমের কারি আর আচার। রীতিমতো ভুরিভোজ হয়ে গেল। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ঘরে এসে বিছানায়। ঠান্ডা থাবা বাড়িয়েছে। ক্লান্তও ছিলাম। চোখ বুজতে দেরি হলো না।
ঘুম ভাঙতে সন্ধে। বৃষ্টি থেমেছে। চা আর পকোড়া ঘরেই দিয়ে গেছে এখানে কর্মরত মেয়েটি। চা পানের অবকাশে পারেন সম্পর্কে কিছু তথ্য। পুরোটাই জলঢাকা নদী অধ্যুষিত। মুখ্য আকর্ষণ বিন্দু হাইডেল প্রজেক্ট। মিয়াং ছাড়াও আরও ৫/৬টি হোমস্টে আছে এখানে। গ্রামে মোটামুটি ৫০০টি ঘর, লোকসংখ্যা ২৫০০ মতো। লোকজনের পেশা মূলত চাষবাস। ধান ছাড়াও হয় এলাচ, আদা, সুপারি, গোলমরিচ। রয়েছে রাবার প্ল্যান্টেশন। ফুলঝাড়ু তৈরি হয় যে গাছ থেকে, তারও চাষ হয় এখানে। আগে কমলালেবু হতো, দূষণের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে। চাষবাসের বাইরে রয়েছে মুদি ও মনোহারি দোকান, ছোটখাটো কন্ট্রাক্টরি, হোমস্টে ব্যবসা। হাইডেল প্রোজেক্ট ও ইলেকট্রিসিটি বোর্ডেও কাজ করেন কিছু মানুষ। সামান্য কয়েকজন স্কুল এবং পঞ্চায়েতেও চাকরি করেন। এলাকায় রয়েছে তিনটি প্রাইমারি আর একটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। শিক্ষা পরিষেবার ক্ষেত্রে যা মোটেই যথেষ্ট নয়।



জেলা কালিম্পং। ব্লক গরুবাথান। থানা ঝালং। শান্তিপ্রিয় এলাকার মানুষ। এমনিতে কোনও ঝামেলা নেই। যদিও বঞ্চনা প্রকট। রাস্তার অবস্থা তেমন ভালো নয়। সেটা হলে এখানে আসার ব্যাপারে আরও বেশি পর্যটক আগ্রহী হতে পারেন। আরও স্কুলের প্রয়োজন। বিশেষত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেককেই বাধ্য হয়ে দূরে যেতে হয়। একটি উন্নত স্বাস্থ্যকেন্দ্র একান্ত প্রয়োজন। হাজারো অসুবিধার মাঝেও মিলেমিশে সুখদুঃখে কাটান সবাই। মেতে ওঠেন দিওয়ালি, দশেরা, বড়দিন ও লোসার (বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের উৎসব) উদযাপনে।
ডিনারে রুটি ও চিকেন কারি খেয়েছি। এদের রান্নাটা সত্যিই জব্বর। না চাইলেও বেশি খাওয়া হয়ে যায়। চারপাশে এখন কোনও শব্দ নেই। বৃষ্টি থামার পর আকাশ একেবারে পরিষ্কার। শুক্লপক্ষের রীতি মেনে চাঁদ আলোয় ঝলমলে। কাল বাদে পরশু দোল উৎসব। এখানে কি আর ন্যাড়াপোড়া হবে ? সে না হোক, প্রকৃতি জুড়ে বসন্তের আবাহন চলছে। আসার পথে, এদের বাড়ির বারান্দার বসানো ও ঝুলন্ত টবে ফুলের বাহার চোখে পড়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল হলো ফুলের মরসুম। কিছু মেলে অক্টোবরে। গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী আর হরেক অর্কিড। এই ফাঁকে আরও কিছু তথ্য। দেখার জন্য কাছেই রয়েছে বিন্দু ব্যারেজ, জলঢাকা নদীর ওপর। কিছুটা দূরে দলগাঁও ভিউ পয়েন্ট। জলঢাকা নদী এবং উপত্যকার পুরোটা দেখা যায় এখান থেকে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে নাথুলা রেঞ্জ। আর একটু দূরে রকি আইল্যান্ড, সুনতালে খোলা, সামসিং ও লালিগুরাস। যাওয়া যায় জয়ন্তী, বকসা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট, গরুমারা অভয়ারণ্য, চালসা ইত্যাদি।

পরদিন সকাল হতেই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম, ব্রেকফাস্টের পুরি-সবজির অপূর্ব স্বাদ মুখে নিয়ে। রোদ উঠেছে ঝকঝকিয়ে। আজ গাড়ি চালাচ্ছে উত্তমবাবুর ছেলে। সুভাষিত ও হাসিমুখের এই তরুণ পাহাড়ী পথের চড়াই উৎরাই পার করে আমাদের সুন্দরভাবে ঘুরিয়ে দেখায় সব। রকি আইল্যান্ড আদতে মূর্তি নদীর উৎস। বিশাল বড় বড় বোল্ডারের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে নদী। জায়গাটা ইদানীং সেলফি প্রেমীদের স্বর্গ। তাই তরুণদের ভিড় কিছু বেশি। তবে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলনাহীন। এখান থেকে সামসিং চা বাগানের মধ্যে দিয়ে পথ গেছে লালিগুরাস। অনেকটা ওপরের ভিউ পয়েন্ট থেকে নিচে বহতা মূর্তি আবার দৃশ্যমান এখানে। সামসিং-এর সবুজ আভা চোখ জুড়িয়ে দেয়। সুনতালে হলো কমলালেবু। খোলা মানে নদী। সুনতালে খোলার কমলাবাগান দূষণের পোকায় কেটে শেষ করে দিয়েছে। সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে শুকনো গাছের দল। নদীটা অবশ্য আছে। বয়ে চলেছে তিরতির বেগে। এখানেও প্রচুর বোল্ডার। নদীর ওপরে ঝুলন্ত সেতু। ওপারে রাজ্য পর্যটন বিভাগের অতিথিশালা। একদিনে সবগুলি স্পটই ঘুরে দেখে নেওয়া যায়।
ফেরার পর লাঞ্চ। তারপর ক্ষণিক বিশ্রাম ও এদিক ওদিক হেঁটে ঘুরে বেড়ানো। সন্ধে নামতেই জ্যোৎস্নায় চরাচর ভেসে যায়। বাইরে বেশ ঠান্ডা। অগত্যা ঘরে ফিরি। আজ লেট লাঞ্চ হয়েছে বলে শুধু কফি আর বিস্কুট, নো স্ন্যাকস। এই সুযোগে কিছু জরুরি তথ্য। মিয়াং-এ থাকা-খাওয়ার খরচ দিনপ্রতি জনপ্রতি ১৩০০ টাকা। সুস্বাদু রান্না। পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা। চিকেন, ডিম, সব ধরনের সবজি, চা-কফি, পুরি-সবজি, ব্রেড-অমলেট পাবেন। স্ন্যাকসে নানা ধরনের পকোড়া। এছাড়া বিশেষ স্বাদের জন্য পাবেন মোমো, থুকপা, চাওমিন। লাঞ্চ ও ডিনারের সঙ্গে থাকে স্যালাড, পাঁপর ও আচার। উত্তমবাবু জানান, বার-বি-কিউ ও বন ফায়ারের আয়োজনও করেন ওঁরা।

একটু আগে দলগাঁও ভিউ পয়েন্ট থেকে বহতা জলঢাকাকে দেখেছি। দু’পাশে ছড়ানো উপত্যকার পুরোটাই সবুজে ঢাকা। আজ বের হতে একটু বেলা হয়ে যায়। এখন ঝকঝকে আকাশে তপ্ত সূর্যদেব আগুন ঝরাচ্ছেন। স্পষ্ট দেখা যায় ভুটানের পাহাড়গুলি। বেশ ক’টি ট্যুরিস্ট গ্রুপ এদিক ওদিক বিচরণ করছে। কাছেই সেনা ব্যারাক। কিছুক্ষণ থেকে ফেরার পথ ধরি। এবার যাব বিন্দু ব্যারেজ দেখতে। মিয়াং ছেড়ে আর একটু এগিয়ে যায় আমাদের গাড়ি। ক্রমশ নিচে নামছি। কাছে পৌঁছতেই জলের গর্জন কানে আসে। প্রচুর পরিমানে বিশাল বিশাল বোল্ডারের ফাঁকফোকড় দিয়ে বয়ে চলেছে জলঢাকা। উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান নদী। ভুটানের পাহাড়গুলি সম্পূর্ণ দৃশ্যমান এখন। পুরোদমে জনতার ফটোসেশন চলছে। স্বাভাবিক। পটভূমি বড়ই দৃষ্টিনন্দন।
আগামিকাল ফেরার পালা। পাহাড় থেকে সমতলে। যেতে মন চায় না। তবু যেতে হবে। তার আগে বাকি তথ্য। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়িভাড়া ৩৫০০ টাকা। নিউ মাল জংশন থেকে ভাড়া ১৮০০/২০০০ টাকা। উচ্চতা মোটামুটি ৪০০০ ফুট। শীতে পর্যাপ্ত গরম পোশাক সঙ্গে রাখা ভালো। এমনিতে সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল যেতে পারেন। সেরা সময় অক্টোবর। জুন-জুলাই-আগস্ট অফ সিজন ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। গাড়িভাড়ার বিষয়েও যাওয়ার আগে জেনে নিলে ভালো।
যোগাযোগ 7003252526/7980681264.
★★ যখনই বেড়াতে যাবেন (নিয়মিত বিভাগ)
🌈 প্যাকিং ফান্ডা
🔺কি কি নিয়ে যাবেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন চটপট। এটা বেশ কয়েকদিন আগেই করুন। এতে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
🔺ব্যক্তিগত জরুরি জিনিস, টাকাপয়সা, ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের বুকিং স্লিপ ইত্যাদি এমন জায়গায় রাখুন যা হাতের কাছে থাকবে অথচ বিশেষ যত্ন-খেয়ালও রাখা যাবে। ক্যামেরা, ল্যাপটপ ব্যাগের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।
🔺 ফার্স্ট এড বক্স, সাধারণ জরুরি ওষুধ এবং আপনি নিয়মিত যে ওষুধ খান তা যথাযথ পরিমানে সঙ্গে রাখুন।
🔺 টর্চ-মোম-দেশলাই অবশ্যই রাখতে হবে।
🔺সানগ্লাস, ছাতা ও বর্ষাতি রাখতে পারলে ভালো।
🔺ভাঁজ নয় জামাকাপড় ফোল্ড করে প্যাক করলে কম জায়গায় বেশি পোশাক আঁটবে। আর জামাকাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হবে না।
🔺জামাকাপড়-জুতো ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিন কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুসারে। যেমন, পাহাড়-জঙ্গল-সি বিচ যেখানে, সেখানে হিলতোলা জুতো নয়, স্পোর্টস শু জাতীয় হলে ভালো। আর পোশাকও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রসাধনী ও রূপচর্চার উপকরণও যেটা না হলে নয়, ততটুকুই। মনে রাখুন, বোঝা বাড়ালে পথে চলাফেরায় কষ্ট। শীতের জায়গায় যথেষ্ট শীতপোশাক রাখুন সঙ্গে।
🔺গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সঙ্গে রাখুন কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ, কফি পাউডার, গরমজল করার ইলেকট্রিক কেটলি, কাগজের কাপ ও প্লেট, টিস্যু পেপার।


🌈 যাওয়ার আগে কি কি করবেন
◾যথাসম্ভব জায়গাটা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর নিয়ে নিন। স্পটে গিয়ে কি কি দেখবেন, কিভাবে সময় কাটাবেন, তার একটা ধারণা থাকলে সুবিধা হবে আপনার। বাজেট করা ও প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি।
◾জেনে নিন, কাছাকাছি এটিএম, প্রয়োজনে ডাক্তারের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলে সেই অনুসারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
◾চেষ্টা করবেন থাকা-খাওয়া-যাতায়াত-সাইট সিয়িং-শপিং ইত্যাদি খরচাপাতির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নেওয়ার।
◾বেড়াতে গিয়ে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য আগে থাকতেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
🌈 আগাম বুকিং এবং
এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত দিক। যাঁরা হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন, দল বেঁধে বা একা এবং বুকিংয়ের তোয়াক্কা করেন না, তাঁদের জন্য এই বিভাগ নয়। যাঁরা কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাট বেড়ানো পছন্দ করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সচরাচর এডভান্স বুকিং না করে যান না। আমি নিজেও সেভাবেই সারা জীবন ঘুরেছি। এই বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই এজেন্ট, পাহাড়ের ক্ষেত্রে হোমস্টে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে পর্যটকদের নানা বিষয়ে অশান্তির কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে যে সাবধানতা গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে—
■ এজেন্ট সম্পর্কে ভালো করে আগে খোঁজ নিন
■পাহাড়ের হোমস্টে মালিকরা এমনিতে সৎ। কিন্তু ততটা পেশাদার এখনও নয়। কথাবার্তা, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও ওদের কিছুটা সমস্যা আছে। ওদের ক্ষেত্রে বার বার জিজ্ঞেস করে, ভাষার কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কাটিয়ে উঠে, নিজের চাহিদা পূরণের ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝে নিন।
■ কোনও কারণে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হলে এডভান্স বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না, এটাই নিয়ম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার টাকা গচ্ছিত থাকবে ওই এজেন্ট, হোমস্টে মালিকের কাছে এডভান্স হিসেবেই। সেই সময়ের মধ্যে আপনি যেতে পারবেন সেখানে। এই বিষয়টিও বুকিংয়ের সময় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
🌈 কি করবেন
◾মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেখানে গেছেন, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি মানিয়ে চলবেন, তত মজা-খুশি-আনন্দ অনন্য প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেবে আপনার অভিজ্ঞতায়।
◾যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঘুরুন। এতে জায়গাটির সত্যিকারের এসেন্সটা পাবেন।
◾জেনে নিন এলাকার মানুষের জীবন, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাস।
🌈 কি করবেন না
◾যত্রতত্র প্লাস্টিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
◾লক্ষ্য রাখুন আপনার আনন্দ-উল্লাস যেন অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।