নির্জন রূপকথার চুইখিম
দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
শিলিগুড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে যে এমন প্রাণের আরাম মনের শান্তিযুক্ত একটি গ্রাম রয়েছে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আমি প্রথম চুইখিম যাই ২০১৬-র ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ প্রায় এমনই এক পাতা ঝরার কালে। সে এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। পথের দু’পাশে অপরূপ আলপনা এঁকেছে পাতারা। গাছ থেকে খসে পড়ছে তারা। তারপর উড়ে উড়ে চলেছে হেথাহোথা। পথের দু’ধারে, চড়াই-উৎরাইয়ের বাঁকে বাঁকে আঁকা হয়ে যাচ্ছে আলপনা। তারপর তো সব ঋতুতেই ঘুরেফিরে দেখা হলো চুইখিমের সঙ্গে, নানা রং ও রূপের বৈচিত্রে।
শিলিগুড়ি থেকে সেবক রোড ধরে কিছুদূর এগোলেই মহানন্দা ফরেস্ট রেঞ্জ। দু’পাশে বিশাল বিশাল প্রাচীন ও নবীন গাছ রেখে এগিয়ে গেছে ৩১ নং জাতীয় সড়ক। সেই পথ ধরে আর একটু যেতেই দেখা হবে তিস্তার সঙ্গে। ঋতুতে ঋতুতে তারও কত রূপ ! প্রতিবারই সমান মোহময়। করোনেশন ব্রিজ হয়ে তিস্তা পার করে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক সোজা চলে গেছে আসাম। যেতে যেতে দেখা হবে অনেকগুলি নদীর সঙ্গে। তারই দু’টি লীস আর ঘিসের মাঝখানে ছড়ানো বিস্তৃত উপত্যকা। সেই উপত্যকায় সবুজের অবুঝ সমারোহ। আর তারই মাঝে ছোট্ট গ্রাম চুইখিম।
তিস্তা পার হওয়ার পর থেকেই রাস্তা বিশাল চওড়া। দু’পাশে চা বাগান আর জঙ্গল। চুইখিম কালিম্পং জেলার অন্তর্গত। আর অঞ্চলটি ডুয়ার্সের অংশবিশেষ। ফলে, কিছুদূর পরেই আবার একটি জঙ্গল–নাম মংপং। খুব ঘন না হলেও নানা ধরণের গাছপালার সমারোহে সবুজের উৎসব যেন লেগেই রয়েছে। একটি গেস্ট হাউসও রয়েছে লাগোয়া। মংপং ছেড়ে কিছুটা গেলে পরপর বেশ কয়েকটি টি এস্টেট। চোখ জুড়ানো সবুজ এখানেও পাবেন। ফাঁকে ফাঁকে লোকালয়। সেসব ফেলে পৌঁছবেন বাগরাকোট মীনা মোড়। জাতীয় সড়কের ধারে ছোট ছোট মিনি ধাবা। চালায় মূলত আশপাশের নেপালি পরিবারগুলি। মোটামুটি বিকেল পর্যন্ত খোলা থাকে। আসা-যাওয়ার পথে পর্যটকরা এখানে চটজলদি খাওয়ার পর্ব সেরে নেন।
প্রথমবার যখন আসি চুইখিম, তখন এখানেই ব্রেকফাস্ট করি পরোটা আর কিমা চচ্চড়ি দিয়ে। সে স্বাদ আজও ভুলিনি। সৌজন্যে রাজ বসু। চুইখিম নিয়ে কিছু লিখতে গেলে এই মানুষটার কথা না বললে, অনেককিছুই বলা বাকি থেকে যাবে। উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের অনেকটা জুড়ে পর্যটন নিয়ে ওঁর কর্মকাণ্ড। উত্তরবঙ্গে ভিলেজ ট্যুরিজমের প্রসারে দীর্ঘদিন কাজ করছেন তিনি। চুইখিমও ওঁরই আবিষ্কার। কলকাতা থেকে স্থায়ীভাবে পাহাড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমি একটি চেনা সূত্রে রাজের কাছে পৌঁছই এবং একটা ছোট আস্তানার ব্যবস্থা হয় ওঁর সাহায্যেই। যাই হোক, আজ উত্তরবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে চুইখিমের গুরুত্ব তৈরি হয়েছে রাজের হাত ধরেই। ফিরে আসি ধাবার কথায়। সেই যে প্রথমদিন এখানে ব্রেকফাস্টের রুটিন শুরু হয়, তা আজও চলছে। যতবার যাই, এখানকার যে কোনও একটি ধাবায় ক্ষণিক বিরতি নির্ধারিত থাকে ব্রেকফাস্টের জন্য। পেটাই পরোটা, ডিম কষা বা অমলেট, চিকেন কারি, সবজি, আচার, মোমো, চা মেলে ধাবায়। সবই গরম এবং ফ্রেশ। ফলে, লোকজন খুব তৃপ্তি করে খায়। বলা বাহুল্য, এই জনতার দলে আমিও পড়ি।
এখান থেকে বাঁ দিকে যে রাস্তা, সেটা কিছুদূর গিয়ে প্রথমে সেনা হেড কোয়ার্টার। তারপর জঙ্গল হয়ে চড়াইগামী পথ। বাঁক ঘুরে ঘুরে ওঠা। এ পথ দিয়ে অনেকগুলি গ্রামে যাওয়া যায়। তারই একটি চুইখিম। প্রসঙ্গত, মীনা মোড় থেকে যে পথের শুরু সেটা হলো একদা প্রাচীন সিল্ক রুট যাওয়ার যোগাযোগ পথ। সেই হিসেবে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অসীম। জঙ্গল ও পাহাড়ী পথে যেতে যেতে বেশ কয়েকবার লীসের দেখা পাওয়া যাবে। তবে, বর্ষাকাল ছাড়া তার চেহারা বড়ই করুণ। জল নেই, শুধুই বালি। সে হোক। তবু, সে আছে। আর সূর্যাস্তে ক্ষীণ জলধারাতেও যখন গোধূলি রং ছড়ায়, সেই রূপ এককথায় অতুলনীয়। চুইখিম থেকেও এই রূপ দেখতে পাবেন আপনি। একটি সুন্দর বাঁধানো ভিউ পয়েন্ট আছে। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, দুইই বেশ মায়াময়।
গাছগাছালির ফাঁকফোকরে, পাহাড়ের ধাপে ধাপে ঘরবাড়ি, চাষের ক্ষেত। ঘুম ভাঙবে পাখির ডাকে। নানাজাতের পাখি দেখতে পাওয়া যায়। বর্ণিল প্রজাপতিরা নির্ভয়ে বসবে এসে বারান্দায়। শুক্লপক্ষে এলে ভেসে যাবেন জোৎস্নার মায়ায়। শান্ত জনজীবন। এখানে এলে, আর কিছু না হোক, প্রচুর অক্সিজেন পাবেন। জঙ্গলে লেপার্ড আছে। তবে, আমার সঙ্গে তাদের এখনও পর্যন্ত দেখা হয়নি। ছাগল, বাছুর টেনে নিয়ে যাওয়ার গল্প শুনেছি গ্রামবাসীদের কাছে। লোকজনের জীবিকা মূলত চাষবাস। স্বল্প সংখ্যক আর্মি, পুলিশ ও বন বিভাগে কাজ করেন। আর জনমজুরের কাজ, যার যখন যেমন জোটে। সৎ,শান্তিপ্রিয়, বন্ধুবৎসল ও হাসিখুশি স্বভাবের মানুষগুলি বেঁচে আছে লড়াই করে।
চুইখিমে এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি হোমস্টে আছে। তৈরিও হচ্ছে নতুন নতুন। আমার নিজের আস্তানা না হওয়া পর্যন্ত এবং হওয়ার পরও একবার কার্যকারণে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে যে হোমস্টে-টি আমার খুব চেনা হয়ে গেছে, তার কথাই বলবো পাঠককে। আমার রেফারেন্সেও বহু পর্যটক থেকেছেন এখানে। বাড়িটা বেশ খোলামেলা। প্রচুর ফুলের গাছ। সামনেই সেই ভিউ পয়েন্ট যার কথা আগেই বলেছি। সিমেন্টে বাঁধানো বসার ব্যবস্থা। ওপরে টিনের শেড। এখান থেকে অনেকটা নিচে বহতা লীস। দুর্দান্ত এক ল্যান্ডস্কেপ যেন স্বয়ং ঈশ্বর এঁকেছেন। একটি বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন স্থানীয়রা সম্প্রতি। সেই মন্দিরের আশপাশও খুবই দৃষ্টিনন্দন। সামান্য ট্রেক করে পৌঁছতে হয় সেখানে। এছাড়া চারপাশেই পাহাড়।
হোমস্টে চালায় এক নেপালি পরিবার। কর্তা-গিন্নি দু’জনেই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সঙ্গে এই হোমস্টে চালাচ্ছেন। পরিচ্ছন্ন থাকার আয়োজন। ওপরে ছাদ থেকেও দারুন ভিউ মেলে। চুইখিমের উচ্চতা ৩৫০০ ফুট। তিনটি প্রাইমারি ও একটি জুনিয়র হাইস্কুল আছে গ্রামে। একটি হেল্থ সেন্টারের বড্ড প্রয়োজন বলছিল গ্রামের তরুণ ড্রাইভার কিরণ। রোগব্যাধির ক্ষেত্রে বড়ই অসহায় চুইখিমের মানুষ। গ্রামের পরিবহন ব্যবস্থা তেমন ভালো নয়। কয়েকটি সার্ভিস গাড়ি আছে। তাতেই লোকজন এদিকওদিক কাজের প্রয়োজনে যাতায়াত করে।
বিকেলটা এখানে বেশ অন্যরকম সুন্দর। সূর্য তখন অস্তাচলে। বিস্তীর্ণ উপত্যকা জুড়ে ঝলমলে কমলা রোদ্দুর। বাতাসে ঠান্ডার মিঠে আমেজ। যেদিকে চোখ যায় গাছগাছালি, ঝোপঝাড়। ব্যস্ত পথ চলা গ্রামের মানুষ উঁকি মেরে দেখে যায়, গ্রামে কে এল অতিথি। একমুখ অমল হাসিতে আপ্যায়নের মধুর ছন্দ। সব মিলিয়ে বড় মনোরম এক প্রহর। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত এখানকার জীবনের গতিপ্রকৃতি। সেই হিসেবেই অস্তগামী সূর্যের কিরণরেখা ধরে ঘরে ফেরে মাঠচড়া গরুর পাল। কুলায় ফেরা পাখির দলের কলকাকলি মুখরিত করে তোলে আশপাশের গাছগাছালি।
মন চাইলে গ্রামেই ঘুরে বেড়াতে পারেন উদ্দেশ্যহীন ভাবে। দেখবেন গ্রামের বাচ্চারাই আপনার গাইড হয়ে গেছে। একটু হেঁটে কিছুটা চড়াইমুখী পথ ধরে যেখানে পৌঁছলেন, সেটা হয়তো কারও বাড়ির উঠোন। এখানে একটা মজার ব্যাপার হলো, কারওর বাড়িতে কোনও বাউন্ডারি নেই। পায়ে চলা পথ কোথায় কখন যে বাড়ির উঠোন হয়ে আবার পথে পরিণত হবে কেউ জানে না। সামনে উন্মুক্ত উপত্যকা। তার ওপারে বিস্তীর্ণ পর্বতশ্রেণী। চরাচর শান্ত এখন। বাচ্চার দল আপনাকে হোমস্টে-র দরজায় পৌঁছে দিয়ে চলে যাবে। দ্রুত সন্ধ্যা নামে এখানে। দূরে দূরে গ্রাম ও ঘরবাড়ি। সেখানে মিটিমিটি আলো জ্বলে ওঠে। জোনাকিরা ওড়ে। বাকি সব অন্ধকার।
চুইখিমের খাওয়াদাওয়া একেবারেই সরল। ভাত, রুটি, ডাল, ভাজি, সবজি, ডিম, চিকেন। এখানকার রাই শাক, স্কোয়াশের তরকারি অবশ্যই চেখে দেখবেন এলে। ঘরে তৈরি আচারও দেন কেউ কেউ। দারুন স্বাদ। মাছ পাওয়া যায় না। মাছ খেতে চাইলে ওদলাবাড়ির বাজার থেকে আনতে হয়, যেটা খুবই কষ্টসাধ্য একটা বিষয় ওঁদের পক্ষে। বেশিরভাগ শাকসবজি গ্রামেই উৎপন্ন হয়। কিছু বাগরাকোট বা ওদলাবাড়ি থেকে আসে। হোমস্টে-তে সকালে চা, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ,ডিনার ছাড়াও সন্ধ্যায় স্ন্যাকস সহযোগে চা পাবেন। ব্রেকফাস্ট-এ রুটি বা পুরি, তরকারি সহযোগে। স্ন্যাক্স-এ নানা ধরনের পকোড়া মেলে। এদের রান্নায় মসলাপাতি কম। অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে শাকসবজির স্বাদ অপূর্ব। গিজার নেই বেশিরভাগ হোমস্টে-তেই। তবে, প্রয়োজনমতো গরমজল নিশ্চয়ই পাবেন।
থাকা-খাওয়ার খরচ দিনপ্রতি জনপ্রতি ১২০০ টাকা। একটু প্রত্যন্ত অঞ্চল। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ, ফার্স্ট এড, বিস্কুট ও কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ ও কফি পাউডার, টর্চ, মোম-দেশলাই, গরম জলের ইলেকট্রিক কেটলি সঙ্গে রাখুন অবশ্যই। শীতে যথেষ্ট শীত পোশাক, বর্ষায় ছাতা ও রেনকোট চাই। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, শিলিগুড়ি তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড, বাগডোগড়া এয়ারপোর্ট–যে কোনও একটি থেকে চুইখিম যাওয়ার গাড়িভাড়া মোটামুটি ২৫০০ টাকা। সময় লাগে ঘন্টা দুয়েক। এয়ারপোর্ট থেকে খরচ ও সময়–দুইই সামান্য বেশি। টাটা সুমো, টাটা গোল্ড, মাহিন্দ্রা ইত্যাদি বড় গাড়ি নিতে হবে। রাস্তা কিছু জায়গায় এখনও পাথুরে। টিম করে গেলে সুবিধা হবে। বড় গাড়িতে হেসেখেলে ছোটবড় মিলে ৯/১০ জন যাওয়া যায়। দুটো দিন নির্ভেজাল শান্তি, আরাম ও বিশ্রামে কাটানোর জন্য চুইখিম এককথায় অতুলনীয়।
আগাম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন হেল্প ট্যুরিজম। টোল ফ্রি নম্বর 18001230156
ফোন (0353) 2433683/2535896
★★ যখনই বেড়াতে যাবেন (নিয়মিত বিভাগ)
🌈 প্যাকিং ফান্ডা
🔺কি কি নিয়ে যাবেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন চটপট। এটা বেশ কয়েকদিন আগেই করুন। এতে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
🔺ব্যক্তিগত জরুরি জিনিস, টাকাপয়সা, ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের বুকিং স্লিপ ইত্যাদি এমন জায়গায় রাখুন যা হাতের কাছে থাকবে অথচ বিশেষ যত্ন-খেয়ালও রাখা যাবে। ক্যামেরা, ল্যাপটপ ব্যাগের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।
🔺 ফার্স্ট এড বক্স, সাধারণ জরুরি ওষুধ এবং আপনি নিয়মিত যে ওষুধ খান তা যথাযথ পরিমানে সঙ্গে রাখুন।
🔺 টর্চ-মোম-দেশলাই অবশ্যই রাখতে হবে।
🔺সানগ্লাস, ছাতা ও বর্ষাতি রাখতে পারলে ভালো।
🔺ভাঁজ নয় জামাকাপড় ফোল্ড করে প্যাক করলে কম জায়গায় বেশি পোশাক আঁটবে। আর জামাকাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হবে না।
🔺জামাকাপড়-জুতো ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিন কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুসারে। যেমন, পাহাড়-জঙ্গল-সি বিচ যেখানে, সেখানে হিলতোলা জুতো নয়, স্পোর্টস শু জাতীয় হলে ভালো। আর পোশাকও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রসাধনী ও রূপচর্চার উপকরণও যেটা না হলে নয়, ততটুকুই। মনে রাখুন, বোঝা বাড়ালে পথে চলাফেরায় কষ্ট। শীতের জায়গায় যথেষ্ট শীতপোশাক রাখুন সঙ্গে।
🔺গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সঙ্গে রাখুন কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ, কফি পাউডার, গরমজল করার ইলেকট্রিক কেটলি, কাগজের কাপ ও প্লেট, টিস্যু পেপার।
🌈 যাওয়ার আগে কি কি করবেন
◾যথাসম্ভব জায়গাটা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর নিয়ে নিন। স্পটে গিয়ে কি কি দেখবেন, কিভাবে সময় কাটাবেন, তার একটা ধারণা থাকলে সুবিধা হবে আপনার। বাজেট করা ও প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি।
◾জেনে নিন, কাছাকাছি এটিএম, প্রয়োজনে ডাক্তারের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলে সেই অনুসারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
◾চেষ্টা করবেন থাকা-খাওয়া-যাতায়াত-সাইট সিয়িং-শপিং ইত্যাদি খরচাপাতির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নেওয়ার।
◾বেড়াতে গিয়ে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য আগে থাকতেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
🌈 আগাম বুকিং এবং
এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত দিক। যাঁরা হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন, দল বেঁধে বা একা এবং বুকিংয়ের তোয়াক্কা করেন না, তাঁদের জন্য এই বিভাগ নয়। যাঁরা কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাট বেড়ানো পছন্দ করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সচরাচর এডভান্স বুকিং না করে যান না। আমি নিজেও সেভাবেই সারা জীবন ঘুরেছি। এই বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই এজেন্ট, পাহাড়ের ক্ষেত্রে হোমস্টে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে পর্যটকদের নানা বিষয়ে অশান্তির কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে যে সাবধানতা গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে—
■ এজেন্ট সম্পর্কে ভালো করে আগে খোঁজ নিন
■পাহাড়ের হোমস্টে মালিকরা এমনিতে সৎ। কিন্তু ততটা পেশাদার এখনও নয়। কথাবার্তা, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও ওদের কিছুটা সমস্যা আছে। ওদের ক্ষেত্রে বার বার জিজ্ঞেস করে, ভাষার কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কাটিয়ে উঠে, নিজের চাহিদা পূরণের ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝে নিন।
■ কোনও কারণে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হলে এডভান্স বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না, এটাই নিয়ম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার টাকা গচ্ছিত থাকবে ওই এজেন্ট, হোমস্টে মালিকের কাছে এডভান্স হিসেবেই। সেই সময়ের মধ্যে আপনি যেতে পারবেন সেখানে। এই বিষয়টিও বুকিংয়ের সময় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
🌈 কি করবেন
◾মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেখানে গেছেন, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি মানিয়ে চলবেন, তত মজা-খুশি-আনন্দ অনন্য প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেবে আপনার অভিজ্ঞতায়।
◾যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঘুরুন। এতে জায়গাটির সত্যিকারের এসেন্সটা পাবেন।
◾জেনে নিন এলাকার মানুষের জীবন, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাস।
🌈 কি করবেন না
◾যত্রতত্র প্লাস্টিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
◾লক্ষ্য রাখুন আপনার আনন্দ-উল্লাস যেন অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।