Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

পরিস্থিতির শিকার মন্টু পাইলট

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।

শৈশবে পাইলট হবার স্বপ্ন দেখতো সে। হয়ে গেল দেহ ব্যবসার দালাল। স্বপ্নের উড়ান নয়, নীলকুঠিতে অসহায়, সম্বলহীন মেয়েদের পাচার করে আনাই হলো মন্টুর পেশা। নীলকুঠির অন্ধকার জগৎ থেকে হাজার চেষ্টা করেও ছেলেকে সরাতে পারে না মন্টুর মা। এদিকে পাইলট হতে না পারলেও মন্টু এখন পাইলট নামেই নীলকুঠি কাঁপায়। হইচই-এ প্রদর্শিত ওয়েব সিরিজ ‘মন্টু পাইলট’-এর কাহিনি পল্লবিত নীলকুঠিকে ঘিরে, যার পরতে পরতে অন্ধকার ডানা মেলে। এমন এক পরিবেশে থেকে মন্টু হারিয়ে ফেলে তার যাবতীয় আবেগ। ভালোবাসা কী জানে না সে। এহেন মন্টুও বদলায় ভ্রমরের সংস্পর্শে এসে।

Images 19 2
পরিস্থিতির শিকার মন্টু পাইলট 7

এক মোটেলে ভ্রমরের সঙ্গে দেখা মন্টুর। ঘোর বিপদে পড়েছে ভ্রমর। মন্টু কী তাকে বাঁচাতে পারবে ? ভ্রমরের ঠিকানাও হয় নীলকুঠি। এখানে এসে কী ঘটবে ভ্রমরের জীবনে ? নীলকুঠির প্রত্যেক অধিবাসীর নিজের মতো করে চলছে জীবনের লড়াই। মেয়েরা অপেক্ষা করে খদ্দেরের জন্য। খদ্দের না এলে তাদের খাওয়া-পরার উপায় নেই। বিবিজান এখন নীলকুঠির সিংহাসনে। তার আগে ছিল তৌফিক। এই ক্ষমতা দখলের খেলায় মন্টুর অবস্থান কী? দুঃসাহসী মন্টু পারবে কী ভ্রমরের বেদনা দুর করতে ? মন্টু জানে, ভ্রমর বাদলকে ভালোবাসে। কিন্তু বাদল কি ভ্রমরকে ভালোবেসেছিল ? তাহলে, তার ঠিকানা কী করে নীলকুঠি হয় ?

Images 18 2
পরিস্থিতির শিকার মন্টু পাইলট 8

আদতে পরিস্থিতির শিকার মন্টু। সে নীলকুঠির দেহব্যবসা চক্রে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। মন্টুর খোঁজে পুলিশ নীলকুঠি এসে ভ্রমরকে আবিষ্কার করে। ভ্রমরের ভাগ্যে কী লেখা আছে ? মন্টুর সান্নিধ্য কী ভ্রমরের ভাগ্যে নতুন কোনও রঙ যোগ করবে ? নাকি আরও অন্ধকারে ডুবে যাবে তার জীবন ! এইসব প্রশ্নের মধ্যেই ভ্রমরকে নিয়ে নীলকুঠি থেকে পালায় মন্টু। কী ঘটবে ? ওরা পাবে কি এক সুস্থ জীবন ? এক্ষেত্রে ডাক্তারবাবুর ভূমিকা কোন রঙ দেখাবে ? মন্টু আর ভ্রমরের সম্পর্কের রসায়নেই বা নতুন কোন অভিমুখ যুক্ত হবে ? মন্টু ও ভ্রমর সুখী সংসার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু নীলকুঠির শক্তিশালী কুচক্রীরা কী সেটা হতে দেবে ? মন্টু ফিরে আসে নীলকুঠিতে। তাহলে মন্টুর সন্তান জোনাকির ভাগ্যে কি ঘটেছে ?

Images 20 2
পরিস্থিতির শিকার মন্টু পাইলট 9

‘মন্টু পাইলট’-এর প্রথম সিজনের ৯টি পর্ব এই রোমাঞ্চকর টানাপোড়েন নিয়েই চলে। দ্বিতীয় সিজনে আমরা দেখি, এক তুমুল বৃষ্টির দিনে মন্টু নীলকুঠি ফিরছে। সঙ্গে এক তরুণী, নাম বহ্নি। তার ফেরায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় স্বাভাবিক ভাবেই। প্রতিশোধের আগুন মন্টুর চোখে। বিবিজান বহ্নিকে মুক্ত করে দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু তার জন্যও তো খদ্দের ঠিক হয়ে গেছে। বহ্নির নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এখন সে পরী। পরীর মধ্যে ভ্রমরকে দেখতে পায় মন্টু।

খদ্দেরের লালসা থেকে বহ্নিকে বাঁচাবার চেষ্টা করে সে। এদিকে কথায় কথায় জানা যায় বহ্নি হলো ডাক্তারেরই মেয়ে। কিন্তু, বহ্নির দুঃস্বপ্নে কোন রাক্ষস আসে ঘুরেফিরে ? একদিকে ডাক্তার তার মেয়েকে ফিরে পেতে চায়। অন্যদিকে মন্টু নীলকুঠিতে আবিষ্কার করে তার মাকে। কার্তিক পুজোর রাতে রক্তাক্ত হয় নীলকুঠি। তৌফিক সরমার সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করে নীলকুঠিতে নিজের ক্ষমতা ফিরে পাবার। অবশেষে জানা যায় জোনাকির হত্যাকারীর নাম। অপরাধের লুকোনো কাহিনি আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে। দ্বিতীয় সিজনে রয়েছে ১০ টি পর্ব।

Images 17 2
পরিস্থিতির শিকার মন্টু পাইলট 10

দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত ‘মন্টু পাইলট’ দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে নিপুণ নির্মাণ গুণে। পতিতাপল্লীর অন্ধকার পরিবেশ রচনায় এতটুকু ত্রুটি খুঁজে পাবেন না দর্শক। চিত্রনাট্য ও সংলাপ থেকে সেট, আলো, পোশাক পরিকল্পনা–সব ক্ষেত্রেই নিষ্ঠা বজায় রেখেছেন প্রত্যেক বিভাগের শিল্পীগণ। সৌরভ দাস অভিনীত মন্টু পালের জন্য একটা সময় দর্শক সমবেদনা অনুভব করবেন নিশ্চিতভাবে। বিশেষ করে কন্যা জোনাকির সঙ্গে মন্টুর সরল, স্বাভাবিক, মরমি রসায়নে সৌরভ অনবদ্য। অভিনয়ে তারপরই চোখ টেনে রাখেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ। অভিজ্ঞ অভিনয়ে বিবিজানকে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সোলাঙ্কি রায়ের ভ্রমর, কাঞ্চন মল্লিকের তৌফিক, সুব্রত দত্তের ডাক্তার, অলিভিয়া সরকারের সরমা এবং রফিয়াথ রশিদ মিথিলার বহ্নি অভিনয়গুণে গ্রহণযোগ্য। আলাদা ভাবে ভালো লাগে একজন ট্রান্সজেন্ডার পতিতাপল্লী কর্মীর অভিনয়ে সুজি ভৌমিককে।

Images 14 3
পরিস্থিতির শিকার মন্টু পাইলট 11

মিউজিক ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের কথা পৃথকভাবে বলতে হয়। দারুন ভাবে বিষয় উপযোগী। সিনেমাটোগ্রাফি চমৎকার। খুব বেশি প্রচারে না থাকা এই সিরিজ খুবই রিয়ালিস্টিক প্যাটার্নে পরিবেশিত। সেই নিরিখে সংলাপ অনেক ক্ষেত্রে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কিন্তু সঠিক পরিবেশ রচনার এও এক দিক। এটুকু মেনে নিতে না পারলে, জীবনের বহু সত্যরূপ দেখা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। আর যাই হোক, এখানে অহেতুক ও সস্তা যৌনদৃশ্যের বাড়াবাড়ি নেই, এটা জোর দিয়ে বলা যায়।