প্রত্যাশা জাগাচ্ছে আলিয়ার গাঙ্গুবাই
লিখেছেন অজন্তা সিনহা
কুখ্যাত মাফিয়া কুইন গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ির জন্ম গুজরাতের কাঠিওয়াড়ের এক প্রসিদ্ধ পরিবারে। আসল নাম গঙ্গা হরজীবনদাস। একেবারে শৈশব থেকে গঙ্গার স্বপ্ন সে বলিউডে অভিনয় করবে। এই স্বপ্নের তাড়নাতেই সে একদিন এসে হাজির হয় মুম্বই। এরপর কলেজ জীবনে সে প্রেমে পড়ে রামনিক লালের। রামনিক ছিল গঙ্গার বাবার কাছে কর্মরত একজন হিসাবরক্ষক। গঙ্গা তখন ষোড়শী। প্রেমে পাগল গঙ্গা একদিন রামনিকের সঙ্গে ঘর ছাড়ে ও তাকে বিয়ে করে। গঙ্গাকে উপভোগের শখ পূর্ণ হওয়া মাত্র রামনিক তাকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেয় এক বেশ্যালয়ে।
এই বিশ্বাসঘাতকতায় গঙ্গা ভয়ংকর ধাক্কা খায়। আর এখান থেকেই শুরু হয় গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ির নতুন যাপন। সে গণিকার জীবন বেছে নেয় ও মুম্বইয়ের রেড লাইট এলাকায় থাকতে শুরু করে। ক্রমে সে একজন প্রবল নামকরা গণিকায় পরিণত হয়। সেসময় মুম্বইয়ের অন্ধকার দুনিয়ার অনেকেই তার কাস্টমার হিসেবে নাম লেখায়। বেতাজ বাদশা করিম লালা তাদের একজন। এই করিমের নাম উচ্চারিত হতো হাজি মাস্তান এবং বরদারাজনদের সঙ্গে। গঙ্গাবাইয়ের এলাকা অর্থাৎ মুম্বইয়ের কামাথিপুরাও ছিল করিমের অধীনে।
করিমের সঙ্গে গঙ্গার প্রথম যোগাযোগ একটি তিক্ত ঘটনায় শুরু হলেও পরে তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নাহ, প্রেম নয়, করিমের সঙ্গে ভাই-বোন পাতায় গঙ্গা। রাখিও বাঁধে তার হাতে। এভাবেই ছয়ের দশকে লেখা হয় গঙ্গার গঙ্গাবাই হয়ে ওঠার চিত্তাকর্ষক কাহিনী। একটা সময় অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে গঙ্গাবাই তার এলাকায়। এরপর গঙ্গাবাইয়ের ভাগ্যে কী লেখা হয়, সেটা জানতে আপনাকে দেখতে হবে সঞ্জয় লীলা ভনশালীর ছবি ‘গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ি’।
এ ছবির সবচেয়ে বড় চমক বা আবিষ্কার যা-ই বলি, সে হলো আলিয়া ভাটের নাম ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। এ বছরের সবচেয়ে প্রত্যাশা যে ছবিগুলোকে ঘিরে ‘গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ি’ তার প্রথম দিকেই থাকবে। বহুবার মুক্তির তারিখ পিছনোর পর অবশেষে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সিনেমা হলে আসতে চলেছে ‘গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ি’। ভনশালী জানিয়েছেন, এ ছবি তাঁর কাছে খুবই স্পেশাল। রিয়েল লাইফ স্টোরি বলে কথা ! পুরো কাজটা শেষ করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষত, প্যান্ডামিক পরিস্থিতির বিচারে খুবই ঝামেলায় পড়েছেন তিনি বারবার।
ছবিটি প্রযোজনা ও পরিচালনা তাঁর। সহ প্রযোজক জয়ন্তীলাল গাড়া। হুসেন জাইদির ‘মাফিয়া কুইন্স অফ মুম্বই’ গ্রন্থ থেকে ছবির গল্প নেওয়া হয়েছে। আলিয়া ছাড়াও অভিনয় করেছেন শান্তনু মাহেশ্বারী, বিজয় রাজ, সীমা ভার্গব পাওয়া, ইন্দিরা তিওয়ারি, বরুণ কাপুর প্রমুখ। ক্যামিও রোলে আছেন অজয় দেবগণ ও হুমা কুরেশি। সিনেমাটোগ্রাফি সুদীপ চ্যাটার্জি। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর সঞ্চিত ও অঙ্কিত বালহারা। মিউজিক সঞ্জয় লীলা ভনশালী।
আলিয়ার কেরিয়ার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। তিনি নাকি সহজেই বড় বড় পরিচালক ও বড় প্রোডাকশন হাউজের নজরে পড়ে যান। নিন্দুকদের অবশ্য ছেড়ে দেননি আলিয়া। নিজের কাজের গুণমান প্রমাণ করে ছেড়েছেন। ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ থেকে মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ি’ পর্যন্ত আলিয়ার জার্নিটা একবার দেখুন। প্রতিভাবান পরিচালক মহেশ ভাট ও শক্তিশালী অভিনেত্রী সোনি রাজদান কন্যা আলিয়া যখন করণ জোহরের ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’-এ কাজ করেন, ছবি বাম্পার হিট হয়, তখন সবাই বলেছিল এটা ফ্লুক ছাড়া কিছু না।
টু স্টেটস, ডিয়ার জিন্দেগি, হাইওয়ে, উড়তা পাঞ্জাব জাতীয় ছবিতে আলিয়া প্রমান করেন তিনি থাকার জন্যই এসেছেন। আর ‘রাজি’ মুক্তির পর তো আলিয়ার কঠোরতম সমালোচকও নড়েচড়ে বসে। তাঁর সব ছবি হিট নয়। কিন্তু সব ছবিতেই আলিয়ার সহজাত অভিনয় ক্ষমতা থেকে পরিশ্রম ও একাগ্রতার দিকটি নজরে আসে। আর এভাবেই খুব অল্পদিনে পরিচালকদের কাছে নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠেন তিনি।
সুযোগ পেলেই সবাই কাজে লাগাতে পারেন না। আলিয়া পেরেছেন। নিজেকে বারবার ভেঙেছেন। ভনশালী তাঁর বরাবরের ফেভারিট দীপিকা পাডুকোনকে ছেড়ে আলিয়াকে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে এমনি এমনি নেননি। বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ আলিয়ার ছোট্ট কাঁধে ভারী হবে না, এই বিশ্বাস ছিল তাঁর। বাকিটা সময় বলবে।