Monday, February 3, 2025
বিনোদন প্লাস স্পেশাললাইম-Light

বলা ও না বলা কথার ‘কথামৃত’

বাংলা ছবির দুই অত্যন্ত শক্তিশালী অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও অপরাজিতা আঢ্য। ওঁদের জুটির ‘কথামৃত’ নিয়ে তাই উৎসাহ তুঙ্গে। লিখেছেন সোমনাথ লাহা

তাদের কথোপকথন চলে প্রশ্ন, উত্তর, প্রত্যুত্তরের ভিত্তিতে। আসলে দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্কের মূল কথাই হল ‘জীবন আর কিছুই নয়, কিছুটা মানিয়ে নেওয়া আর বাকিটা বানিয়ে নেওয়া’। জীবনের এহেন সুর এবং সম্পর্কের এই রসায়নকেই আমরা পাবো পরিচালক জিৎ চক্রবর্তীর ‘কথামৃত’ ছবিতে। এই ছবির মধ্যে দিয়ে প্রতিদিনের সংসারে যে না-বলা কথারা উহ্য থেকে যায়, যে সমস্ত কথা কখনও বলা হয়নি বলে কিছু সম্পর্ক হয়তো গড়েই ওঠেনি–সেই সম্পর্কের প্রতিচ্ছবিকেই মেলে ধরেছেন পরিচালক এখানে। দাম্পত্যের সেই সম্পর্কের মধ্যে আড়ির পর ভাব যেন আসে অবধারিত ভাবেই।

‘কথামৃত’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং অপরাজিতা আঢ্য। কৌশিক অভিনীত চরিত্রটির নাম সনাতন। সে মূক অর্থাৎ কথা বলতে পারে না। আর তাই সে একটা ছোট্ট লাল ডায়েরিতে নিজের মনের সমস্ত কথা লিখে রাখে। সেই ডায়েরির নাম ‘কথামৃত’। কৌশিকের স্ত্রী সুলেখার ভূমিকায় রয়েছেন অপরাজিতা। এই দম্পতি ও তাদের পাড়াকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে এই ছবির কাহিনি। গল্পের প্রেক্ষাপট এই রকম, পাড়ায় আদর্শ স্বামী-স্ত্রী সনাতন ও সুলেখা। ছেলে ঋককে নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার। তাঁদের এই ভালোবাসায় ভরা পরিবারকে পছন্দ করে এলাকার সমস্ত মানুষ। সনাতন কথা বলতে পারে না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ব্যক্তিরা তার মনের ভাব বুঝতে পারে। এছাড়াও, মনের কথা বোঝাবার জন্য সনাতনের মাধ্যম সেই পকেট ডায়েরি, নাম যার ‘কথামৃত’।

ছবিতে বেশ একটি অন্য ধরণের চরিত্রে আছেন বিশ্বনাথ বসু। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অদিতি চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া এক বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে কাঞ্চন মল্লিককে। ‘কথামৃত’-র কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন জিৎ দত্ত। সংগীত পরিচালনায় প্রসেনের দলবল, রণজয় ভট্টাচার্য, অমিত-ঈশান। গীতরচনায় প্রসেন, ঋতম সেন ও তমোঘ্ন চট্টোপাধ্যায়। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার মধুরা পালিত। সম্পাদনায় সংলাপ ভৌমিক। ‘কথামৃত’ ছবির হাত ধরে প্রায় দু’দশক পর প্রযোজনায় ফিরেছে জালান প্রোডাকশনস। ১৯৬২-তে এই প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারেই নির্মিত হয়েছিল ছবি বিশ্বাস অভিনীত ক্লাসিক ছবি ‘দাদাঠাকুর’। প্রীতম জালান নিবেদিত এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেন কুশাগ্র জালান।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার লোভ সামলাতে না পেরে ছবিটা করতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অপরাজিতা। অপরাজিতার কথায়, “ওঁর মতো একজন অভিনেতা থাকলে, সে ছবি আলাদা মাত্রা পায়। মুখ্য চরিত্রের একজন কথা বলতে পারে না, অন্যজন বেশি কথা বলে! ভাষা যে সম্পর্কে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না, সেই কথাই বলবে এই ছবি।” কৌশিকের মতে, “ছবির মুখ্য চরিত্র প্রায় দুঘন্টার কাছাকাছি সময় ধরে কথা না বলে অভিনয় করবে–এই বিষয়টাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল। আমার অভিনীত চরিত্রটি জন্ম থেকেই মূক নয়। একটি দুর্ঘটনার পর তার বাকশক্তি হারিয়ে যায়।”

ছবির পরিচালক জিৎ চক্রবর্তী জানান “এটি এক অর্থে অনন্য জীবনের গল্প। মানুষের জীবনে কথা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা নিয়েই এই ছবি। প্রতিটি সম্পর্কের বুননে কথার গুরুত্বকেই তুলে ধরবে ‘কথামৃত’।” এই মুহূর্তে বাংলা ছবির দুই অত্যন্ত শক্তিশালী অভিনেতা কৌশিক ও অপরাজিতা। ওঁদের জুটির ‘কথামৃত’ যে অমৃত সমান হবে, তাতে আর সন্দেহ কী ? বস্তুত ছবিটিকে ঘিরে উন্মাদনার পারদ ইতিমধ্যেই চড়তে শুরু করে দিয়েছে দর্শকদের মধ্যে। অপরদিকে ছবির মুক্তিপ্রাপ্ত গান ‘থেকেছি ভাবে আড়িতে’ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে দর্শকমহলে। প্রসেনের দলবলের সুরে এই গানটি গেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচী ও অন্বেষা দত্তগুপ্ত। এখানেই শেষ নয়। মুক্তির আগেই ‘কথামৃত’ মনোনীত হয়েছে ৫ম তেলেঙ্গানা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ৯ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে এই চলচ্চিত্র উৎসব। আগামী ১৮ নভেম্বর বড়পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে ‘কথামৃত’।