ব্যতিক্রমী ও অপরিহার্য সায়নী
লিখেছেন অপরাজিতা মজুমদার
২০১৩ সাল। সদ্য মুক্তি পেয়েছে পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর থ্রিলার বাংলা ছবি ‘কানামাছি’। চারিদিকে বেশ সাড়া ফেলেছে ছবিটি। মুখ্য ভূমিকায় শ্রাবন্তী ও অঙ্কুশ-এর সঙ্গে সঙ্গে প্রশংসিত হচ্ছে আর এক অভিনেত্রীর অভিনয়। তিনি সায়নী ঘোষ। ছবিতে তাঁর অভিনয় এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল, যে তাঁর মৃত্যুর দৃশ্যটা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। সেই সময় একটি জনপ্রিয় টেলিকম সংস্থার হয়ে একটি একঘন্টার সাক্ষাৎকার নিতে সায়নীর কাছে যেতে হয়েছিল আমায়। একটি কথা সেদিন বারবার মনে হয়েছিল–খুব সহজে সকলকে আপন করে নেওয়ার একটি সুন্দর মন রয়েছে তাঁর। সেটাই হয়তো তাঁর অভিনয় জীবনের একটা বড় ইউএসপি।
ছোটপর্দা থেকে অভিনয়ের যাত্রা শুরু। ‘ইচ্ছে ডানা’ টেলিফিল্ম-এ অভিষেক। বেশ কিছু জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয়। তারপর ২০১০-এ ‘নটবর নটআউট’ দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক। এরপর একের পর এক সফল বানিজ্যিক বাংলা ছবিতে অভিনয়। শুরু থেকেই নায়িকা বা প্রধান অভিনেত্রী হওয়ার ঘোড়দৌড়ের মধ্যে নিজেকে সামিল করেননি সায়নী। বরং বরাবর চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। ছোট বা বড় চরিত্র নয়, যে কোনও চরিত্রেই কাজ করেছেন এবং নিজস্ব ছাপ রেখেছেন। নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে নয়, অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন সায়নী।
সব ধরনের চরিত্রেই বেশ সাবলীল তিনি। বারবার সে কথা প্রমাণ করেছেন সায়নী। সম্প্রতি আরও একবার সেই প্রমাণ মিললো অনীক দত্ত পরিচালিত ‘অপরাজিত’ ছবিতে। ছবিতে অপরাজিত রায়ের সহধর্মিণী ‘বিমলা রায়’-এর ভূমিকায় দেখা গেছে সায়নীকে। প্রসঙ্গত, অপরাজিত রায়ের সৃজনশীল জীবনে পূর্ণতা পাওয়ার পিছনে বিমলা রায়ের অবদান কিছু কম নয়। ‘অপরাজিত’-তে জীতু কামালের অভিনয় যেভাবে প্রশংসিত হচ্ছে–পাশাপাশি সমান প্রশংসা সায়নী ঘোষেরও প্রাপ্য। বিমলা রায়ের মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সঠিক অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে না পারলে, তা অনেকটাই হতাশাজনক হতে পারতো এবং জীতু কামালেরও হয়তো নিজেকে প্রকাশ করতে বেশ বেগ পেতে হতো। কিন্তু সেটা হয়নি। পর্দায় দুই অভিনেতার পারস্পরিক বোঝাপড়া এতই নিখুঁত ছিল যে, দর্শক সহজেই সম্পৃক্ত হয়েছেন বিষয়ের সঙ্গে। কোথাও কোনও জড়তা চোখে পড়েনি। বলতে দ্বিধা নেই, ‘অপরাজিত’-তে বিমলা রায়ও এক না ভোলা চরিত্র হয়ে থেকে যাবে।
শুধু অভিনয় নয়, রাজনীতির অন্দরমহলেও এখন বেশ পরিচিত মুখ সায়নী ঘোষ। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিটাও চুটিয়ে করছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ অ্যাক্টিভ সায়নী। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া নিজেই হ্যান্ডেল করেন তিনি এবং নিজের মত প্রকাশে কখনও পিছিয়ে থাকেন না এই বলিষ্ঠ স্বভাবের অভিনেত্রী। এর জন্য কখনও কখনও প্রশংসা তো আবার কখনও সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তবে তাতে ভয়ে পিছিয়ে আসতে খুব একটা দেখা যায়নি সায়নীকে। অভিনয়, রাজনীতি, পরিবার সব নিয়ে দিব্বি আছেন তিনি। কখনও তিনি ছবির কোনও চরিত্র, কখনও রাজনীতির ময়দানের নতুন তুর্কী। কখনও আবার বাড়ির আদরের মেয়ে, যে মা-এর সাথে খুনসুটি করতে, গাছের পরিচর্যা করতে ভালোবাসে। এই নানান সত্ত্বাতে বিচরন করেন আলাদা আলাদা সায়নী ঘোষ। ব্যালেন্সন্ড এবং লড়াকু। আগামী দিনে আরও নানান রঙ ছড়িয়ে পড়ুক অভিনেত্রীর চলার পথে, এই প্রত্যাশা।