মধ্যবিত্তের চেনা যাপন শ্রীনিবাস ওয়াগলের সংসারে
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। সাদাকালো জমানা থেকে একালের রঙিন টিভি–জমজমাট ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া’। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
সেটা টিভি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে পুরোপুরি দূরদর্শনের যুগ। সে সময় দর্শকের অভিজ্ঞতায় যেসব অনুষ্ঠান শুধু ভাবনার বৈচিত্র্যে আকর্ষণের অনাবিল রঙ ভরে দেয়, নিঃসন্দেহে তার অন্যতম ছিল পরিচালক কুন্দন শাহের ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া’। কিংবদন্তি কার্টুন শিল্পী আর কে লক্ষ্মণের সৃষ্ট চরিত্র অবলম্বনে তৈরি এই কাহিনিকে সিটকমের আকারে নিয়ে আসা হয় দূরদর্শনের ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের নিত্যযাপন ও তাদের নানা সমস্যা পর্বে পর্বে উঠে আসে এই সিরিজে। শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই চূড়ান্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া’। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত চলে এই সিটকম। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন কুন্দন শাহ ও রবি ওঝা। ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া’ প্রযোজনায় ছিলেন একদা মুম্বইয়ের বহু সফল ছবির প্রবীণ অভিনেত্রী দুর্গা খোটে। অভিনয় থেকে বিরতি নেওয়ার পর প্রোডাকশন কোম্পানি খোলেন তিনি।
অভিনয়ে মিঃ শ্রীনিবাস ওয়াগলে ও তার স্ত্রী রাধিকার ভূমিকায় যথাক্রমে ছিলেন অঞ্জন শ্রীবাস্তব ও ভারতী আচরেকর। পেশায় মিঃ ওয়াগলে এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সেলস ক্লার্ক। অফিস ও ঘর–দুইয়ের মাঝে জীবন অতিবাহিত মিঃ ওয়াগলের। অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত এই মানুষটির চেনা জীবনের ছন্দে যেসব টক-ঝাল-মিষ্টি ঘটনা প্রবাহ চলে, তাই নিয়েই জমে ওঠে এই শো। শোয়ের ভাবনা ও পরিবেশনায় যে মজা, তার অনেকটাই দাঁড়িয়ে থাকে অঞ্জন শ্রীবাস্তব ও ভারতী আচরেকরের রিয়ালিস্টিক অভিনয়ে। অচিরেই এই জুটি স্থান করে নেন ভারতীয় টিভি দর্শকের হৃদয়ে।
১৯৯০ পর্যন্ত চলে এই সিটকম। তারপর কেটে গিয়েছে তিনটি দশক। ২০২১-এর ৮ই ফেব্রুয়ারি সোনি সব টিভিতে শুরু হয় ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া-নই পিড়ি নই কিসসে’। ওয়াগলে পরিবারের তিন প্রজন্মের কাহিনি নিয়ে পল্লবিত এই নতুন সিরিজ। বলা ভালো সময়ের প্রেক্ষিতে শ্রীনিবাসের পর তার ছেলে, ছেলের পরিবার, তাদের জীবনে চলমান ঘটনাপ্রবাহ–এভাবেই এগিয়ে চলে ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া-নই পিড়ি নই কিসসে’। শুধু ওয়াগলে পরিবার নয়, তাদের সুখদুঃখের সাথী প্রতিবেশী বা পরিচিত কিছু পরিবারের গল্পও এসে মিশে যায় এখানে। আমরা লক্ষ্য করি, দিন বদলের খেলায় মধ্যবিত্তের আর্থিক অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। দ্বিতীয় প্রজন্মের রাজেশ শ্রীনিবাস ওয়াগলে এক কুরিয়ার কোম্পানির ম্যানেজার। তাকেও বাবার মতোই দিনযাপনে চলতে হয় টানাপোড়েনের মধ্যেই।
মজা, কৌতুক ও আবেগের ঘনঘটার আড়ালে এক চূড়ান্ত পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের কথা এখানে বলা হয়। অভিনয়ে সেই বিষয়টিকে প্রাণবন্ত করে তোলেন অঞ্জন শ্রীবাস্তব, ভারতী আচরেকর, সুমিত রাঘবন, পরিভা প্রণতি, চিন্ময়ী সালভি, শীহন কাপাহি, অমিত সোনি, দীপক পারীক, ভক্তি চৌহান, মানসী যোশী প্রমুখ। শো ক্রিয়েটর জে ডি মাজেথিয়া ও আতিশ কাপাডিয়া। পরিচালনা আতিশ কাপাডিয়া ও সমীর কুলকার্নি। তিন দশক পরেও এতটুকু কমেনি এই কাহিনির আকর্ষণ। ইতিমধ্যেই সাফল্যের সঙ্গে পার হয়েছে ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া-নই পিড়ি নই কিসসে’-র সাড়ে ছয়শোর বেশি পর্ব। বি টাউনের টিভি দুনিয়ার বিখ্যাত সংস্থা হ্যাটস অফ প্রোডাকসন্স লিমিটেডের ব্যানারে এই সিরিজ প্রযোজনা করেছেন আতিশ কাপাডিয়া ও সমীর কুলকার্নি। সোনি সব টিভিতে সোম থেকে শুক্র রাত ৯টায় দেখান হচ্ছে ‘ওয়াগলে কী দুনিয়া-নই পিড়ি নই কিসসে’। চাইলে সোনি লিভ এর পর্দাতেও দেখতে পারেন এই শো।