মন ভালো করা ‘উত্তরাবাস’
সম্পাদক ‘উত্তরাবাস’ প্রসঙ্গে একটি জায়গায় বলেছেন, ‘বদলে যাওয়া তো চিরসত্য। একইভাবে নদী বহমান থাকতে পারে না। বাঁকে তার বাঁকবদল ঘটবেই। ইট কাঠ পাথর থেকে শুরু করে মনুষ্য জীবনের প্রতিটি স্তবকেই বদল এক নিশ্চিত পরিণতি’। তিনি যথার্থই বলেছেন। এই সংকলনের প্রতিটি লেখাই নানা আঙ্গিকে সে কথা বলে। উত্তরবঙ্গবাসী, সামগ্রিকভাবে বাংলা সাহিত্যের অতি পরিচিত নাম রিমি দে সম্পাদিত ‘উত্তরাবাস’ সম্প্রতি হাতে পাওয়ার পর ভারি তৃপ্তি পেলাম। এমন মেধাবী যত্নের ছাপ কোনও একটি গ্রন্থে পাওয়া, ইদানীং বড় বিরল অভিজ্ঞতা। বইটি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সম্পাদকের কলম থেকে তুলে নেওয়া কয়েকটি শব্দবন্ধ নিয়ে শুরু করার কারণও এটাই ! সম্পাদক খুব স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কেন ‘উত্তরাবাস’, তা প্রাঞ্জলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এখানে।
হাওয়াকল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকাশিত উত্তরবঙ্গ স্মৃতি সংকলন ‘উত্তরাবাস’-এ স্থান পেয়েছে এগারো জন লেখকের নিবিষ্ট ও বৈচিত্র্যে ভরপুর রচনা। লিখেছেন অর্ণব সেন (বকসা-জয়ন্তী স্বপ্ন তবু স্বপ্ন নয়), বিপুল দাস (পথের কথামালা), উৎপল ঝা (উত্তরের সঘন-সজল হাওয়ায়), তৃপ্তি সান্ত্রা (স্বপ্ন ও অন্যান্য নীলিমা), মানসপ্রতিম দাস (উত্তরের হাওয়ায়), অজন্তা সিনহা (রূপকথা নয়), প্রবালকুমার বসু (পর্যটনময় ডুয়ার্স, আমার ভিত্তিভূমি), শৌভিক রায় (এক অন্য পরিভ্রমণ), বিশ্বজিৎ পান্ডা (আমার ডুয়ার্স), সৌম্যেন বসু (যতটুকু ছিল মনে) ও শেখর বন্দোপাধ্যায় (আমার উত্তর, যেখানে প্রশ্ন নেই)।
রচনাগুলির বিষয় যেমন উত্তরবঙ্গের নানা দিককে আলোকিত করে, তেমনই রচনাকারদের গভীর অনুভবে সমৃদ্ধ ভাবনা পাঠকের হৃদয়স্পর্শ করে সহজেই। যাঁরা উত্তরবঙ্গকে ভালোবাসেন, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা এই অঞ্চলটি সম্পর্কে গবেষণা করতে আগ্রহী বা তথ্য সংগ্রহে উৎসাহী–তাঁদের সকলের জন্যই সংগ্রহযোগ্য ‘উত্তরাবাস’। বইটির ঝকঝকে ও নির্ভুল ছাপা বিশেষ উল্লেখ্য। দারুণ মনোগ্রাহী ‘উত্তরাবাস’-এর প্রচ্ছদ। কৃতিত্ব পাবেন সৌরভ চিত্রকর (প্রচ্ছদের ছবি) ও বিতান চক্রবর্তী (প্রচ্ছদ প্রস্তুতি)। ‘উত্তরাবাস’-এর সংগ্রহমূল্য ৫০০ টাকা। সবশেষে একটা কথা, রচনাগুলির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি থাকলে বোধহয় ভালো হতো। প্রকাশক, পরবর্তী সংস্করণে ভেবে দেখতে পারেন।