মুক্তির অপেক্ষায় ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ব্যতিক্রমী ভাবনার ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’। লিখেছেন শ্যামলী বন্দোপাধ্যায়।
মাদার টেরিজার নাম শুধু বাংলা নয়, সারা দেশ তথা বিশ্ববাসীর কাছে উচ্চারিত হয় পরম শ্রদ্ধা ও আবেগের সঙ্গে। সেবার মূর্ত প্রতীক তিনি। মাদার টেরিজার কর্মজীবন শুরুর সময়কালের প্রেক্ষিতেই সুইস-ইন্ডিয়ান পরিচালক কমল মুসলে নির্মাণ করেছেন ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’। ছবি আবর্তিত তিনজন নারীকে নিয়ে। তাদের স্বপ্ন, প্রত্যাশা, দয়া-মায়া এবং ভালোবাসার কথা পল্লবিত এখানে। ১৯৪০-এর মাঝামাঝি সময় থেকে আর্ত, দরিদ্র ও রোগাক্রান্ত মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন মাদার টেরিজা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই কাজেই নিয়োজিত ছিলেন তিনি। এই ছবিতে উঠে আসবে তাঁর সেই মহিমময় জার্নির উৎসমুখের কথা।
ছবির বিষয় মোটামুটি এই, লন্ডনে বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণী কবিতা পরিবারের ঐতিহ্য মেনে বিয়ে করলেও সেই বিয়েকে সে মন থেকে মানতে পারে না। এরই মধ্যে প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে কবিতা। মানসিক প্রস্তুতি ছিল না বলে গর্ভস্থ বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক হবে কিনা, তাই নিয়ে দোটানায় পড়ে যায় সে। অথচ, তখন আর গর্ভপাত করানোর সময়ও নেই। এমন এক সময়ই নিজের দেশে ফিরে আসে কবিতা মনের মধ্যে উত্থিত নানা প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে। সে ছুটে যায় তার বৃদ্ধা আয়ার কাছে। ছোটবেলায় তাঁর কাছেই থাকত কবিতা। এই আয়ার কাছ থেকেই প্রথম মাদার টেরিজা সম্পর্কে জানতে পারে সে। মাদার টেরিজার সংস্পর্শে আসার পরেই নিজের প্রেগন্যান্সি, নিজের জীবন, ভালবাসার মানুষ এবং পরিবারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যায় তার।
কবিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বনিতা সান্ধু, যিনি একজন পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অভিনেত্রী। এগারো বছর বয়সে সুজিত সরকারের ছবি ‘অক্টোবর’-এ প্রথম অভিনয় করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর ফের ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’ ছবিতে কামব্যাক ঘটেছে বনিতার। ছবির চরিত্র প্রসঙ্গে বনিতা জানিয়েছেন,”কবিতার সঙ্গে আমার মিল-অমিল দুইই আছে। আমিও তারই মতো এক তরুণী, যে নিজের জীবন, কেরিয়ার ও অন্যান্য বিষয়ে কী কী সিদ্ধান্ত নেবে, তাই নিয়ে চিন্তিত ও দ্বিধান্বিত। কিন্তু এই ব্যাপারগুলির ক্ষেত্রে কবিতার প্রতিক্রিয়া যেমন হয়, তেমনটা আমার হয় না। আমার প্রতিক্রিয়া ততটা তীব্র নয়। তাই প্রথমে আমার কাছে কাজটা কিছুটা জটিল মনে হয়েছিল। পরে অবশ্য বারবার রিহার্সাল করে বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।” ছবিতে মাদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ৩০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফ্রিটশি কর্নাজ। এছাড়া তিনি কমল মুসলে, থিয়েরি ক্যাগনেটের সঙ্গে যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনাও করেছেন।
এই ছবির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম শক্তিশালী, তাঁর সময়ের বহু আলোচিত ছবির নায়িকা অভিনেত্রী দীপ্তি নাভাল। ভারতীয় ছবির পাশাপাশি আমেরিকান ছবিতেও নিজের অনন্যতা দেখিয়েছেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ‘জুনুন’ ছবির মাধ্যমে তাঁর সিনেমায় আত্মপ্রকাশ। এর ঠিক দু বছর পর মুক্তি পায় ‘এক বার ফির’। এই ছবির জন্য তিনি প্রথম সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন এবং তারপর থেকে তিনি ৯০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’ ছবিতে এক বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। সম্প্রতি ছবির প্রচারে কলকাতায় এসেছিলেন দীপ্তি, জ্যাকলিন ফ্রিটশি-কর্নাজ, বলিউড অভিনেত্রী দেবশ্রী চক্রবর্তী এবং পরিচালক কমল মুসলে প্রমুখ।
ফিচার ও তথ্যচিত্র ইত্যাদি মিলিয়ে ৩০টির ওপর ছবি নির্মাণ করেছেন কমল। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ প্রশংসিত, পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বিশ্বের নামকরা উৎসবগুলিতে প্রদর্শিত। স্বাভাবিকভাবেই এই ছবি নিয়েও দর্শকের প্রত্যাশা যথেষ্ট। ‘মাদার টেরেজা অ্যান্ড মি’ ছবিটি হিন্দি ও ইংরেজি দুটো ভাষাতেই তৈরি হয়েছে। ছবির প্রচারে এসে প্রযোজকরা জানান, এই ছবি থেকে যে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে তা ব্যয় করা হবে গরীব শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাদানের জন্য। ছবিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রম কোচার, ব্রায়ান লরেন্স, হীর কাউর, কেভিন মেইন্স, লীনা বৈশ্য, শোবু কাপুর, মাহি আলি খান, ফেইথ নাইট এবং জ্যাক গর্ডন। ছবির বিষয় শুধু মহিলাকেন্দ্রিক নয়, তৈরিতেও মহিলারাই প্রধান। যেমন, ডিওপি কিকো নাকাহারা, প্রোডাকশন ডিজাইনার রেখা মুসলে, লাইন প্রোডিউসার নূপুর কাজবাজে বাট্টিন। ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৫ই মে।