মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের কাহিনি ‘তাজ : ডিভাইডেড বাই ব্লাড’
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। এই মার্চেই জি ফাইভে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক সিরিজ ‘তাজ : ডিভাইডেড বাই ব্লাড’-এর। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। তাও আবার সম্রাট আকবরের সময়কাল। ‘তাজ : ডিভাইডেড বাই ব্লাড’ নিয়ে তাই শুরু থেকেই একটা টানটান উত্তেজনা ছিল। এরপর যখন এর অভিনেতা তালিকা প্রকাশিত হলো, তখন তো আগ্রহ, উৎসাহ একেবারে তুঙ্গে। জি ফাইভে এখনও যাঁরা এই সিরিজ দেখে উঠতে পারেননি, তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাই সম্রাট আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করছেন স্বয়ং নাসিরউদ্দিন শাহ। এখানেই শেষ নয়। এছাড়াও ‘তাজ : ডিভাইডেড বাই ব্লাড’-এ অভিনয় করছেন বলিউডের এক ও অদ্বিতীয় হি-ম্যান ধর্মেন্দ্র। নাহ, অ্যাকশন ছেড়ে বহুদিন আগেই তিনি মননশীল চরিত্রাভিনেতা রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন পর্দায়। এই সিরিজে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে বিখ্যাত শেখ সেলিম চিস্তির ভূমিকায়। তরুণ আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আর্যম সেলিম।
প্রসঙ্গত, আর্যম হলেন প্রয়াত বিখ্যাত থিয়েটার, সিনেমা ও টেলিভশন অভিনেতা সেলিম ঘাউস ও থিয়েটার ব্যাক্তিত্ব অনীতা সেলিমের পুত্র। এক সময় দূরদর্শনে ‘ভারত এক খোঁজ’ ধারাবাহিকে রাম, কৃষ্ণ ও টিপু সুলতানের ভূমিকায় সেলিম ঘাউসের অসাধারণ অভিনয় ভোলেননি তৎকালীন দর্শক। মূলত থিয়েটারে নিবেদিত এই দম্পতির নিজেদের থিয়েটার সংস্থা আছে। সেখানেই আর্যমের হাতেখড়ি–সেই গুণপনার নিদর্শন ইতিমধ্যেই চাক্ষুষ করেছেন দর্শক ‘তাজ : ডিভাইডেড বাই ব্লাড’-এ। আছেন অদিতি রায় হায়দরি (আনারকলি), অসীম গুলাটি (সেলিম), সন্ধ্যা মৃদুল (যোধাবাঈ), রাহুল বোস (মির্জা মুহম্মদ হাকিম), জারিনা ওয়াহাব (সেলিমা সুলতান বেগম), তাহ শাহ (মুরাদ), শুভম কুমার মেহরা (দানিয়েল), পঙ্কজ সারস্বন্ত (আবুল ফজল), সুবোধ ভাবে (বীরবল), পবন চোপড়া (গিয়াস বেগ), দীপরাজ রানা (রানা প্রতাপ), অক্ষত মিশ্র (দুর্জন) প্রমুখ। আছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আরও বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা।
১৬০০ খ্রিস্টাব্দের পটভূমিতে পল্লবিত এই কাহিনির মূল কেন্দ্রে রয়েছে আকবরের তিন ছেলে সেলিম, মুরাদ ও দানিয়েলের মধ্যে তাজ অর্থাৎ সম্রাটের মাথার মুকুট তথা সিংহাসন নিয়ে লড়াই। এরই পাশাপাশি রয়েছে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, কাব্য ও শিল্পের চর্চা, সেলিম-আনারকলির প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তপাত ! মুঘল সাম্রাজ্যের এই চরিত্রগুলির কেউই সাদা অথবা কালো নয়, এঁদের মনের পরতে পরতে আছে জটিল ধূসরতা। এই অবস্থানকে ঘিরেই মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন রচিত হয়েছে, ঐতিহাসিক ভাবে সেই তথ্য আমাদের জানা। ‘তাজ : ডিভাইডেড বাই ব্লাড’ সেই ইতিহাসকেই আজকের দর্শকের সামনে হাজির করেছে।
কন্টিলো পিকচার্স-এর পক্ষে অভিমন্যু সিং, রূপালি সিং ও উইলিয়াম বোর্থউইক প্রযোজিত এই সিরিজ জি ফাইভে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে গত ৩ মার্চ। গল্প ক্রিস্টোফার বুটেরা। চিত্রনাট্য লিখেছেন উইলিয়াম বোর্থউইক ও সাইমন ফান্টাউজ্জ। ডায়ালগ অজয় সিং। পরিচালনা রন স্ক্যালপেলো, অজয় সিং, বিভু পুরি ও প্রশান্ত সিং। সিনেমাটোগ্রাফি সাইমন টেম্পল ও তেজাল শেত্যে। মিউজিক কম্পোজ করেছেন ইয়ান আরবার। ১০ পর্বের প্রথম সিজন দেখে মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা কেউ কেউ চমৎকার রেটিং দিয়েছেন। কেউ কেউ মুখর হয়েছেন সমালোচনায়।
আদতে ওয়েব সিরিজের পক্ষে খুবই বড় মাত্রার এই প্রযোজনা সর্বাঙ্গসুন্দর হবে, এমনটা বোধহয় প্রত্যাশা না করাই ভালো। অদিতি রায় হায়দরির আনারকলিকে বেশ খানিকটা বেমানান লেগেছে। নাসিরউদ্দিন শাহের আকবর দাপুটে ও সংবেদনশীল। কিন্তু মাঝে মাঝে তাঁর উপস্থিতির মধ্যে বয়সজনিত ক্লান্তি ধরা পড়ে। বাকিরা অবশ্য প্রত্যেকেই চরিত্রের মাপে যথাযথ। এতকিছুর পরেও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নিয়মিত প্রযোজনাগুলির নিরিখে অনেকটাই বিরল ঐতিহাসিক সিরিজ ‘তাজ : ডিভাইডেড বাই ব্লাড’ দেখা এক ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা হতে পারে দর্শকের কাছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়।